মামলার উপাদান থাকা সত্ত্বেও এফআরটি দিয়ে অভিযুক্তদের নিষ্পত্তি
Published: 1st, July 2025 GMT
মামলার উপাদান যথাযথ থাকা সত্ত্বেও এফআরটি দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অভিযুক্তদের নিষ্পত্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে সেগুনবাগিচাস্থ প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে মামলা হয়। মামলার উপাদান যথাযথ থাকা সত্ত্বেও পরে ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু (এফআরটি) জমা দিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়।’’
আরো পড়ুন:
জুলাই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল ফ্যাসিবাদ বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ গঠন: প্রধান উপদেষ্টা
নারায়ণগঞ্জে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের হেনস্তার ঘটনায় মামলা
‘‘২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দুদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর মামলাটি আবারও বিবেচনায় আনা হয়। আমাদের মনে হয়েছে, অনেকটা গায়ের জোরে মামলাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল। তাই আমরা এটি পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং নতুন করে তদন্ত শুরু করেছি।’’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী পিপিএ এবং পিপিআর অনুসরণ করে কাজ করার কথা থাকলেও প্রকল্পে তা মানা হয়নি। মূল্যায়ন কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। একই জিনিস বারবার কেনা হয়েছে বলেও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কনসালট্যান্টদের সিভি মূল্যায়ন যথাযথ করা হয়নি। মূল্যায়ন কার্যক্রমের বাধ্যতামূলক সাক্ষাৎ ও তথ্য যাচাই করা হয়নি। এতে স্পষ্ট অনিয়ম দেখা গেছে।’’
‘‘পূর্বের প্রতিবেদনটি ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ ছিল। তাই আমরা নতুনভাবে তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত কর্মকর্তাকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে, যাতে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা যায়,’’ যোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘‘যাদের প্রথম দফায় আসামি করা হয়েছিল, তাদের তো ডাকা হবেই। তবে তদন্তে যদি নতুন কেউ যুক্ত হয় বা গাফিলতির প্রমাণ মেলে, তাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’’
কমিশন একটি নির্দিষ্ট পরিসরের স্বাধীনতা ভোগ করে মন্তব্য করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার হয়ে থাকলে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। আমরা চাই, কমিশনের পক্ষ থেকে যদি কোনো ত্রুটি বা ব্যত্যয় হয়ে থাকে, তা চিহ্নিত করা হোক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমাদের ধারণা, এই মামলায় এফআরটি দেওয়া ঠিক হয়নি অথবা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। এখন আমরা নতুন তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি।’’
২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির আশঙ্কায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে। এরপর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ। মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন তৎকালীন সেতু সচিব মো.
মামলার প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তাকে গ্রেপ্তার করে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পদ ম স ত প রকল প ন বল ন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ নতুন করে তদন্ত করছে দুদক
এক যুগের বেশি সময় আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছিল, তা নতুন করে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়মের যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ‘গায়ের জোরেই’ মামলাটি থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে যে বিভ্রান্তি ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল, সেসবের যথেষ্ট উপাদান থাকলেও শেষ পর্যন্ত আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। তাঁরা মনে করছেন, মামলাটি অনেকটা ‘গায়ের জোরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে’। এ কারণে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি–লাভালিনকে পরামর্শক নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে এ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছিল বিশ্বব্যাংক। এরপর একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে বনানী থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় মোট সাতজনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তাঁকে গ্রেপ্তার করে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি চাকরিতে ফেরেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সওজের (সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস।
প্রায় দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালে এ মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আসামিরা সবাই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান।
নতুন তদন্তে কেউ দায়ী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান। তিনি আজ সাংবাদিকদের বলেছেন, আগে যাঁদের আসামি করা হয়েছিল, প্রয়োজনে তাঁদের আবারও ডাকা হতে পারে। তদন্তে নতুন কোনো নাম এলে সেটিও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি, আগের চূড়ান্ত প্রতিবেদন যথাযথ ছিল না। এখন তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’
এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বড় প্রকল্প করতে গেলে একই জিনিস অনেকবার ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। সে ক্ষেত্রে যে জিনিস একবার ক্রয় করলে বারবার ব্যবহার করতে পারি, সেটা একাধিকবার ক্রয় দেখানো সমীচীন নয়। এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন যৌথ মূল্যায়ন করি, কনসালট্যান্টের তাদের যেসব সিভি মূল্যায়ন করার কথা ছিল, সেগুলো সেভাবে করিনি। এখানে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। মূল্যায়নের বিভিন্ন জায়গায় পিপিএ (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট), পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) আমরা অ্যাভয়েড (উপেক্ষা) করেছি।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘কনসালট্যান্টের সিভি মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে মানা হয়নি। মূল্যায়ন কার্যক্রমে কমিটির যেসব সাক্ষাৎ ও তথ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, তা–ও করা হয়নি। এতে স্পষ্ট অনিয়মের প্রমাণ মেলে।’