প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন, আবার আপনি সরে গেলেন, আপনি মনে করছেন আপনাকে জনগণ অসীম ক্ষমতাশীল বানিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো পরামর্শ আপনার মানার দরকার নেই। যদি তাই মনে করেন আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হবে, ইতোমধ্যে কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে উচ্চাভিলাস প্রকাশ করছে। তাদের উদ্দেশ্য অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অনির্বাচিতভাবে যেন এই সরকার থাকতে পারে। আপনার কী উদ্দেশ্য তা অবশ্য আমরা জানি না।

শনিবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যদি কোনোদিন নির্বাচনের দাবিতে এই সরকারকে ঘেরাও করতে হয়, তা হবে আমাদের জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্য। আপনি কি (প্রধান উপদেষ্টা) চান এই নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক। এ দেশের জনগণ জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক।

হুঁশিয়ারি দিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ড.

মুহাম্মদ ইউনূস আপনি সম্মানের সঙ্গে ডিসেম্বরের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করুন। সংস্কার এবং বিচার চলমান প্রক্রিয়া, তা চালু থাকবে যারাই সরকারে আসুক না কেন। অনন্তকাল ধরে আপনি বিচার এবং সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্ঠকাকীর্ণ করবেন না। যাদের পরামর্শে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন সেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণ করুন। আমরা আগেও বলেছিলাম আপনার উপদেষ্টা
পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে, আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। এখন কিছু বিদেশিদের দোসর আছে। এখন আমরা তাদের অপসারণের কথা বলছি। আর যারা এনজিও মার্কা উপদেষ্টা আছে, যারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের কথা শোনার প্রয়োজন নেই, তাদেরকে অপসারণ করুন। না হলে সসম্মানে বিদায় নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনার নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের পরে সাংবিধানিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু মনে করবেন না রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদের আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইবো। এখন মানুষ বলছে, আপনার সরকার এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির ২ জন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা, তারা আবার এনসিপি সংগঠন করে। যদিও অফিসিয়ালি করেন না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানে, ওপেন সিক্রেট। যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান তাহলে এনসিপি মার্কা ২ জনকে পদত্যাগ করতে বলুন, যদি পদত্যাগ না করে আপনি বিদায় করুন।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে, এটা কীভাবে ভাবলেন? তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেননি। অত্যন্ত ‘অ্যারোগ্যান্টলি’ আপনার সেই উপদেষ্টা বলছেন তাতে নাকি কিছু যায় আসে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা দাবি করছি- সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয় নিজে পদত্যাগ করবে, না হয় আপনি তাকে বিদায় করবেন। এই দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য, আমরা তা হতে দেব না। এই দেশে বন্দর- করিডোর সবকিছু নাকি ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে, বিদেশে আপনি কী কন্ট্রাক্ট করে এসেছেন জানি না। আপনি কি চুক্তি করে এসেছেন অবলীলাক্রমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর, নদী বন্দর, করিডোর সব বিদেশিদের হাতে হস্তান্তর করবেন? আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন করা।

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চলনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ স ল হউদ দ ন উপদ ষ ট আপন র স এনস প ইউন স সরক র করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিত, চব্বিশ এবং আগের গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ভোটাধিকার হরণ—এসবের জন্য যদি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হতে পারে। তাহলে একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে। একই অপরাধে দুই রকমের বিচার হতে পারে না।’’

শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু

নৌকা ডুবেছে, শাপলা ভাসবে: এনসিপির তুষার

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘যদি আওয়ামী লীগের মতো একই ধরনের অপরাধে জামায়াতের বিচার না হয়, তাহলে সেটা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজকে জামায়াত তাদের পোশাক-চেহারা, আচরণ পাল্টে নতুন রূপে হাজির হয়েছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু, মূল উদ্দেশ্য বিএনপিকে আক্রমণ করা। এই বহুরূপীদের চেহারা জনগণ চিনে ফেলেছে।’’

বিএনপির এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপিই একমাত্র শক্তি। অথচ এই শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনের নামে প্রক্রিয়া চালালেও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আলাল আরো বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার মনে করেছে, দেশের সব অনাচারের মূলে সংবিধান। কিন্তু সমস্যার মূল সংবিধান নয়—ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ। শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের শাসনে এই অন্যায়, নির্যাতন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারই হয়েছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।’’

ঢাকা/রায়হান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে
  • বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল