আপনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা জঘন্য, নোংরা ও লজ্জার: বিজেপি নেতাকে সুপ্রিম কোর্ট
Published: 19th, May 2025 GMT
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ বলায় সাময়িকভাবে গ্রেপ্তারি এড়ালেও সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্তভাবে ভর্ৎসনা করলেন মধ্যপ্রদেশের উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিজয় শাহকে। তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে সর্বোচ্চ আদালত আজ সোমবার বলেন, ‘কুমিরের কান্না কাঁদবেন না। আপনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা জঘন্য, নোংরা ও লজ্জার। আপনার মন্তব্য গোটা দেশের মাথা হেঁট করেছে।’
অপারেশন সিঁদুর ও সেই পরিপ্রেক্ষিতে কর্নেল সোফিয়া কুরেশির উদ্দেশে বিজয় শাহর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ খারিজ ও গ্রেপ্তারি এড়াতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজয় শাহ। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং গ্রেপ্তারির হাত থেকে মন্ত্রীকে রক্ষা করলেও তীব্র ভর্ৎসনা করে গোটা বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
মধ্যপ্রদেশ পুলিশের মহাপরিচালককে ওই তদন্তকারী দল গঠনের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতিরা বলেন, তদন্তকারী দলের সদস্যদের বাছাই করতে হবে রাজ্যের বাইরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে। তিনজনের মধ্যে অন্তত একজনকে নারী হতে হবে। ২৮ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগেই ওই তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। তদন্ত দল গঠন করতে হবে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে।
তদন্তকারী দলের নেতৃত্ব দেবেন একজন আইজি। অন্য দুই সদস্যকে হতে হবে এসপি বা তার উঁচু পদমর্যাদার। বিচারপতিরা বলেছেন, মন্ত্রী বিজয় শাহকে তদন্তকারী দলের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংকে প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমের কাছে অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে জানানোর দায়িত্ব দিয়েছিল সরকার। তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতেন পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। এই সরকারি ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করে বিজয় শাহ এক জনসভায় বলেছিলেন, পেহেলগামে যারা বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করেছিল, সেই সন্ত্রাসবাদীদের বোনকে (সোফিয়া) দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের (সন্ত্রাসী) মোক্ষম জবাব দিয়েছেন।
এই ভাষণ শুনেই মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অতুল শ্রীধরন ও অনুরাধা শুক্লা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশকে এফআইআর দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আজ সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারী বিজয় শাহের পক্ষে আইনজীবী মনিন্দর সিং বলেন, তাঁর মক্কেল ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। সেই ক্ষমা গ্রহণ করা হোক। সেই আবেদন অগ্রাহ্য করে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘ক্ষমা? কোন ক্ষমা? যেখানে তিনি বলেছেন, যদি তাঁর কথায় কেউ ক্ষুণ্ন হয়ে থাকেন, যদি দুঃখ পেয়ে থাকেন, এসব? তিনি তো দায় নিতেই চাইছেন না। কেউ কেউ আইনের হাত থেকে বাঁচতে ক্ষমা চান, কেউ কেউ কুমিরের কান্না কাঁদেন। এটা কোন ধরনের ক্ষমা? এই ক্ষমা প্রার্থনা আমরা গ্রাহ্য করছি না। এটা স্রেফ মামলার হাত থেকে বাঁচতে চাওয়া।’
মন্ত্রীর উদ্দেশে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘আপনি জননেতা। একজন দক্ষ রাজনীতিক। কী বলছেন, কখন বলছেন, সেই জ্ঞান আপনার থাকা উচিত। আপনার ভাষণের ভিডিও এখানে চালাতে পারি। দেখা যাবে, আপনি একটা সময় নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’
বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং মধ্যপ্রদেশ সরকারকেও কাঠগড়ার দাঁড় করান। রাজ্য পুলিশের সমালোচনা করে তাঁরা বলেন, ‘আপনারাই বা কী করেছেন? হাইকোর্ট বলেছেন বলে কাজ করেছেন। কিন্তু এফআইআরটাও ঠিকমতো করেননি। হাইকোর্ট কঠোরভাবে তা দ্বিতীয়বার করতে বলেছেন। জনগণ রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ দেখতে চায়। এত দিনে আপনাদেরও আরও কিছু করা উচিত ছিল।’
বিচারপতিরা বলেন, জ্যেষ্ঠ আইপিএস কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্তকারী দলের কাজের ওপর তাঁরা ঘনিষ্ঠ দৃষ্টি রাখবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জয় শ হ ব চ রপত মন ত র কর ছ ন বল ছ ন সদস য তদন ত আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে