ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ বলায় সাময়িকভাবে গ্রেপ্তারি এড়ালেও সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্তভাবে ভর্ৎসনা করলেন মধ্যপ্রদেশের উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিজয় শাহকে। তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে সর্বোচ্চ আদালত আজ সোমবার বলেন, ‘কুমিরের কান্না কাঁদবেন না। আপনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা জঘন্য, নোংরা ও লজ্জার। আপনার মন্তব্য গোটা দেশের মাথা হেঁট করেছে।’

অপারেশন সিঁদুর ও সেই পরিপ্রেক্ষিতে কর্নেল সোফিয়া কুরেশির উদ্দেশে বিজয় শাহর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ খারিজ ও গ্রেপ্তারি এড়াতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজয় শাহ। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং গ্রেপ্তারির হাত থেকে মন্ত্রীকে রক্ষা করলেও তীব্র ভর্ৎসনা করে গোটা বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।

মধ্যপ্রদেশ পুলিশের মহাপরিচালককে ওই তদন্তকারী দল গঠনের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতিরা বলেন, তদন্তকারী দলের সদস্যদের বাছাই করতে হবে রাজ্যের বাইরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে। তিনজনের মধ্যে অন্তত একজনকে নারী হতে হবে। ২৮ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগেই ওই তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। তদন্ত দল গঠন করতে হবে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে।

তদন্তকারী দলের নেতৃত্ব দেবেন একজন আইজি। অন্য দুই সদস্যকে হতে হবে এসপি বা তার উঁচু পদমর্যাদার। বিচারপতিরা বলেছেন, মন্ত্রী বিজয় শাহকে তদন্তকারী দলের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে।

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংকে প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমের কাছে অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে জানানোর দায়িত্ব দিয়েছিল সরকার। তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতেন পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। এই সরকারি ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করে বিজয় শাহ এক জনসভায় বলেছিলেন, পেহেলগামে যারা বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করেছিল, সেই সন্ত্রাসবাদীদের বোনকে (সোফিয়া) দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের (সন্ত্রাসী) মোক্ষম জবাব দিয়েছেন।

এই ভাষণ শুনেই মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অতুল শ্রীধরন ও অনুরাধা শুক্লা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশকে এফআইআর দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আজ সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারী বিজয় শাহের পক্ষে আইনজীবী মনিন্দর সিং বলেন, তাঁর মক্কেল ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। সেই ক্ষমা গ্রহণ করা হোক। সেই আবেদন অগ্রাহ্য করে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘ক্ষমা? কোন ক্ষমা? যেখানে তিনি বলেছেন, যদি তাঁর কথায় কেউ ক্ষুণ্ন হয়ে থাকেন, যদি দুঃখ পেয়ে থাকেন, এসব? তিনি তো দায় নিতেই চাইছেন না। কেউ কেউ আইনের হাত থেকে বাঁচতে ক্ষমা চান, কেউ কেউ কুমিরের কান্না কাঁদেন। এটা কোন ধরনের ক্ষমা? এই ক্ষমা প্রার্থনা আমরা গ্রাহ্য করছি না। এটা স্রেফ মামলার হাত থেকে বাঁচতে চাওয়া।’

মন্ত্রীর উদ্দেশে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘আপনি জননেতা। একজন দক্ষ রাজনীতিক। কী বলছেন, কখন বলছেন, সেই জ্ঞান আপনার থাকা উচিত। আপনার ভাষণের ভিডিও এখানে চালাতে পারি। দেখা যাবে, আপনি একটা সময় নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’

বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং মধ্যপ্রদেশ সরকারকেও কাঠগড়ার দাঁড় করান। রাজ্য পুলিশের সমালোচনা করে তাঁরা বলেন, ‘আপনারাই বা কী করেছেন? হাইকোর্ট বলেছেন বলে কাজ করেছেন। কিন্তু এফআইআরটাও ঠিকমতো করেননি। হাইকোর্ট কঠোরভাবে তা দ্বিতীয়বার করতে বলেছেন। জনগণ রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ দেখতে চায়। এত দিনে আপনাদেরও আরও কিছু করা উচিত ছিল।’

বিচারপতিরা বলেন, জ্যেষ্ঠ আইপিএস কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্তকারী দলের কাজের ওপর তাঁরা ঘনিষ্ঠ দৃষ্টি রাখবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জয় শ হ ব চ রপত মন ত র কর ছ ন বল ছ ন সদস য তদন ত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে