তাহলে কি অ্যাপলের কারখানা আর চীন থেকে ভারতে যাচ্ছে না
Published: 19th, May 2025 GMT
ভারতের ‘বিশ্ব কারখানা’ হয়ে ওঠার স্বপ্ন বহুদিনের। এই স্বপ্ন পূরণের পথে যখন অগ্রগতির অল্পস্বল্প ইঙ্গিত মিলছিল, ঠিক তখনই ওয়াশিংটন ও বেইজিং নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের ঘোষণা দিল। তাদের এই ঘোষণা চীনকে সরিয়ে ভারতের বৈশ্বিক উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চীনের ওপর বিশাল আকারের শুল্কারোপ থেকে সরে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে দুই দেশের প্রতিনিধিরা সুইজারল্যান্ডে একটি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার পর রাতারাতি চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। ভারতের ওপর ২৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প।
দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্যিক সমঝোতার ফলে যেসব উৎপাদনবিষয়ক বিনিয়োগ উদ্যোগ চীন থেকে ভারতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, এখন সেগুলো হয় থেমে যাবে অথবা আবার চীনে চলে যাবে।
অজয় আরও বলেন, ভারতের কম খরচে পণ্য উৎপাদনব্যবস্থা হয়তো টিকে যাবে, কিন্তু মানগত বৃদ্ধি ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে।
গত মাসে মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান অ্যাপল তাদের আইফোন তৈরির বেশির ভাগ কারখানা চীন থেকে সরিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। দিল্লিতে তখন যে উৎসাহ ও আশাবাদ দেখা গিয়েছিল, সাম্প্রতিক মনোভাব তার পুরো বিপরীত চিত্র তুলে ধরছে।
যদিও অ্যাপলের আইফোন তৈরির কারখানা চীন থেকে ভারতে স্থানান্তরের সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। অ্যাপল এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি।
যদিও অ্যাপলের আইফোন তৈরির কারখানা চীন থেকে ভারতে স্থানান্তরের সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। অ্যাপল এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য নিজেই চান না, অ্যাপল ভারতে তাদের কারখানা নির্মাণ করুক। এ বিষয়ে ট্রাম্প একবার বলেছিলেন, তিনি অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুককে ভারতে কারখানা নির্মাণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, উচ্চ শুল্ক আরোপ করা দেশগুলোর একটি ভারত।
এ বিষয়ে ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ শিলান শাহ বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পণ্য সরবরাহে ভারত খুব ভালোভাবে চীনের বিকল্প দেশ হয়ে উঠতে পারে। যদিও এ কথা তিনি সুইজারল্যান্ডে ওয়াশিংটন-বেইজিং বৈঠকের আগে বলেছিলেন।
সে সময় শিলান শাহ আরও বলেছিলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রে সেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার ৪০ শতাংশ পণ্য চীন যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার সঙ্গে মেলে।
শুল্কারোপের কারণে চীনের পণ্য সরবরাহে যে শূন্যতা তৈরি হচ্ছিল, তা পূরণে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা আগেভাগেই প্রস্তুত হয়ে আছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ভারতে নতুন রপ্তানি আদেশ ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এখন ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের যে ঘোষণ আসতে চলেছে, তাতে নয়াদিল্লির স্বপ্ন ভাঙতে যাচ্ছে।
কয়েকজন বিশ্লেষক অবশ্য এখনো তেমনটা মনে করছেন না। বরং তাঁরা বিশ্বাস করেন, কৌশলগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে বিশাল দূরত্ব এখনো রয়ে গেছে, তাতে ভারত দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হবে।
শুল্কারোপের কারণে চীনের পণ্যসরবরাহে যে শূন্যতা তৈরি হচ্ছিল, তা পূরণে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা আগেভাগেই প্রস্তুত হয়ে আছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে যে ভারতে নতুন রপ্তানি আদেশ ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে। এর মধ্যে চীন ত্যাগের যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য সরবরাহব্যবস্থা বৈচিত্র্যময় করতে তাদের কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
আরও পড়ুনআইফোনের কারখানা সরালে কার বেশি ক্ষতি হবে ভারত নাকি যুক্তরাষ্ট্রের১৬ মে ২০২৫ভারতের বৈশ্বিক কারখানা হয়ে ওঠার আশা ভেস্তে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হওয়ার কারণ শুধু চীন একা নয়, বরং এশিয়ার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশও এই প্রতিযোগিতায় রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ সোনাল ভার্মা ও অরুদিপ নন্দী।
জাপানের বৃহৎ আর্থিক সেবা ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নমুরার এই দুই অর্থনীতিবিদ বলেন, বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো ভিয়েতনামের মতো দেশের ওপর থেকে তাদের নজর পুরোপুরি সরিয়ে নেয়নি।
এ মাসের শুরুতে এই দুই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, সুতরাং, ভারতের জন্য এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে হলে শুধু শুল্কভিত্তিক সুবিধা নিলেই হবে না, বরং ব্যবসা সহজীকরণে বাস্তব ও কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করাও জরুরি।
আরও পড়ুনঅ্যাপল ভারতে নয়, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন করুক: চান ট্রাম্প১৫ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য পল র ব যবস র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
সিএমএসএমই ঋণ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা
তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণে রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, আর রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামে ১৪০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে, একই দরে গত ১৫ জুলাই ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। আর ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বে অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।
গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ