উড়োজাহাজের চাকা খুলেছে বিয়ারিং ত্রুটিতে
Published: 19th, May 2025 GMT
কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটির চাকা বিয়ারিং ত্রুটির কারণে খুলে পড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার বিমানের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। কী কারণে এ ত্রুটি দেখা দিয়েছে, তা তদন্তের পর জানা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা ও তদন্তের বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি গঠন করেছে।
এদিকে ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটির নিরাপদ অবতরণের স্বীকৃতি হিসেবে গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানের বলাকা ভবনের সম্মেলন কক্ষে উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন জেএসএমএম বিল্লাহ, ফার্স্ট অফিসার জায়েদ তাজিম ও কেবিন ক্রু মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে। তাদের হাতে স্মারক তুলে দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজগুলোর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কানাডার ডি-হেভিল্যান্ড এয়ারক্রাফট কোম্পানি। গত ১৬ মে’র ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডি-হেভিল্যান্ড থেকে প্রস্তুত করা ম্যানুয়ালে বলা আছে চাকার বিয়ারিংয়ে ত্রুটি দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট চাকা অথবা টায়ার বিচ্যুত হতে পারে; যা সে দিন ঘটেছে।
এতে বলা হয়, ফ্লাইট নম্বর বিজি-৪৩৬ উড়োজাহাজটি দুপুর ১টা ২১ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর একটি চাকা খুলে যায়। পরে বিষয়টি কক্সবাজার কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ফ্লাইটের বৈমানিককে জানানো হয়। বৈমানিক কক্সবাজার থেকে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে নিরাপদে অবতরণ করেন। উড়োজাহাজটি নির্দিষ্ট পার্কিং বে-তে পৌঁছানোর পর প্রকৌশলীরা বাম দিকের ল্যান্ডিং গিয়ারের একটি চাকা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চাকাটি বিয়ারিং ফেল করে বিচ্যুত হয়েছে। উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রণীত রক্ষণাবেক্ষণ ম্যানুয়ালের টাস্ক সূত্র ০৫-৫০-১৭-২১০-৮০১ অনুযায়ী চাকার ‘বিয়ারিং ফেউলুর’ হলে সম্পূর্ণ চাকা খুলে যেতে পারে বলে উল্লেখ আছে। এর সঠিক কারণ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর জানা যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনার পর বিমান প্রকৌশল বিভাগের তাৎক্ষণিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকায় অবস্থানরত সব ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের সব চাকা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ইতোমধ্যে কানাডার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে অবিলম্বে টেকনিক্যাল স্টাফ পাঠানোর বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। কোম্পানি সোমবার (গতকাল) স্পেশালাইজড টিম পাঠানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চিফ অব ফ্লাইট সেফটির নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট সেফটি ইনভেস্টিগেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরিদপ্তরের আওতায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। দুটি কমিটি ঘটনার মূল কারণ অনুসন্ধান, এ সম্পর্কিত মেইনটেন্যান্সের শর্ত ও রেকর্ড পরীক্ষা এবং এমন ঘটনা পুনঃসংঘটন রোধে পরামর্শ দেবে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। উড়োজাহাজটিকে আবার যাত্রীসেবায় ফিরিয়ে আনতে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। উড়োজাহাজটির প্রস্তুতকারকের কাছে ঘটনাটি সম্পর্কে রিপোর্ট করে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উড্ডয়নের জন্য উড়োজাহাজটিকে উপযুক্ত বলে ঘোষণা করা হবে।
.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাগরে এক ট্রলারে ৪০ লাখ টাকার ইলিশ
সাগরে এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ১৭০ মণ ইলিশ মাছ। দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে এই ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সাইফ ফিশ আড়তে এই মাছ বিক্রির উদ্দেশ্যে ওঠানো হয়। মাছগুলো ডাকের মাধ্যমে বিক্রি হয় ৪০ লাখ টাকায়। ট্রলারটিতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাদেরই আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ আরো কয়েক মণ ইলিশ তুলে দেওয়া হয়।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সূত্রে জানাগেছে, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সাইফ কোম্পানির এফবি সাফওয়ান-৩ মাছ ধরার ট্রলার গত ২৯ অক্টোবর সকালে পাথরঘাটা থেকে ১৯ জন জেলে নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়।
ওই দিন বিকেলে কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে জাল ফেলার পরই রাতে মাছগুলো ধরা পড়ে। ট্রলারটিতে জায়গায় সংকুলান না হওয়ায় তাদেরই আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ আরো কয়েক মণ তুলে দেওয়া হয়। জেলেরা বলছে, সব মিলিয়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে।
এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের মাঝি রুবেল হোসেন বলেন, “আমরা ২৯ অক্টোবর সাগরে যাই। বিকেলে লম্বা জাল (ইলিশ জাল) ফেলার পর রাত আটটার দিকে জালের অবস্থা দেখে বুঝতে পারি প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। রাত আটটা থেকে জাল টানা শুরু করে পরদিন দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জাল ট্রলারে উঠানো শেষ হয়।”
সাইফ ফিশিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক মনিরুল হক মাসুম জানান, অনেক দিন ধরে সাগরে খুব কম মাছ ধরা পড়ছিল। ইলিশ মৌসুমে কাঙ্খিত মাছ ধরা না পড়ায় আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছিল। সাগরে অবৈধ ট্রলিং বোট বন্ধ করা হলে জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মোস্তফা আলম বলেন, “মাছগুলো আমার আড়তে বিক্রি হয়েছে। ইলিশের প্রকারভেদ ২৭ হাজার, ২২ হাজার, ১২ হাজার টাকায় মণ দরে সব মিলিয়ে ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় এই মাছ বিক্রি হয়।”
বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, “২২ দিনের অবরোধ শেষে জেলেরা সাগরে গিয়েই মাছ পেয়েছে- এটা খুশির খবর। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মেলেনি। হঠাৎ এক ট্রলারে ১৪০ মণ ইলিশ পাওয়ায় আমরাও খুশি।”
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন রাইজিংবিডিকে বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।”
তিনি বলেন, “জেলেরা সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ মানলে এবং অবৈধ জাল বন্ধ তাদের জেলেদের সুদিন ফিরবে।”
ঢাকা/ইমরান/এস