কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটির চাকা বিয়ারিং ত্রুটির কারণে খুলে পড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার বিমানের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। কী কারণে এ ত্রুটি দেখা দিয়েছে, তা তদন্তের পর জানা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা ও তদন্তের বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি গঠন করেছে। 

এদিকে ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজটির নিরাপদ অবতরণের স্বীকৃতি হিসেবে গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানের বলাকা ভবনের সম্মেলন কক্ষে উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন জেএসএমএম বিল্লাহ, ফার্স্ট অফিসার জায়েদ তাজিম ও কেবিন ক্রু  মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে। তাদের হাতে স্মারক তুলে দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজগুলোর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কানাডার ডি-হেভিল্যান্ড এয়ারক্রাফট কোম্পানি। গত ১৬ মে’র ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডি-হেভিল্যান্ড থেকে প্রস্তুত করা ম্যানুয়ালে বলা আছে চাকার বিয়ারিংয়ে ত্রুটি দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট চাকা অথবা টায়ার বিচ্যুত হতে পারে; যা সে দিন ঘটেছে। 

এতে বলা হয়, ফ্লাইট নম্বর বিজি-৪৩৬ উড়োজাহাজটি দুপুর ১টা ২১ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর একটি চাকা খুলে যায়। পরে বিষয়টি কক্সবাজার কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ফ্লাইটের বৈমানিককে জানানো হয়। বৈমানিক কক্সবাজার থেকে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে নিরাপদে অবতরণ করেন। উড়োজাহাজটি নির্দিষ্ট পার্কিং বে-তে পৌঁছানোর পর প্রকৌশলীরা বাম দিকের ল্যান্ডিং গিয়ারের একটি চাকা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চাকাটি বিয়ারিং ফেল করে বিচ্যুত হয়েছে। উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রণীত রক্ষণাবেক্ষণ ম্যানুয়ালের টাস্ক সূত্র ০৫-৫০-১৭-২১০-৮০১ অনুযায়ী চাকার ‘বিয়ারিং ফেউলুর’ হলে সম্পূর্ণ চাকা খুলে যেতে পারে বলে উল্লেখ আছে। এর সঠিক কারণ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর জানা যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনার পর বিমান প্রকৌশল বিভাগের তাৎক্ষণিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকায় অবস্থানরত সব ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের সব চাকা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ইতোমধ্যে কানাডার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে অবিলম্বে টেকনিক্যাল স্টাফ পাঠানোর বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। কোম্পানি সোমবার (গতকাল) স্পেশালাইজড টিম পাঠানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চিফ অব ফ্লাইট সেফটির নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট সেফটি ইনভেস্টিগেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরিদপ্তরের আওতায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। দুটি কমিটি ঘটনার মূল কারণ অনুসন্ধান, এ সম্পর্কিত মেইনটেন্যান্সের শর্ত ও রেকর্ড পরীক্ষা এবং এমন ঘটনা পুনঃসংঘটন রোধে পরামর্শ দেবে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। উড়োজাহাজটিকে আবার যাত্রীসেবায় ফিরিয়ে আনতে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। উড়োজাহাজটির প্রস্তুতকারকের কাছে ঘটনাটি সম্পর্কে রিপোর্ট করে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উড্ডয়নের জন্য উড়োজাহাজটিকে উপযুক্ত বলে ঘোষণা করা হবে।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র পর ঘটন র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

চলুন ঘুরে আসি চাঁদ থেকে

চাঁদ আমাদের নিকটতম মহাজাগতিক প্রতিবেশী। ১৯৬০–এর দশকে চাঁদের বুকে মানুষের পদচিহ্ন পড়ে। বহু শতাব্দী ধরে চাঁদ মামা হিসেবে আমাদের মানবজাতির কল্পনাকে মোহিত করে রেখেছে। প্রাকৃতিকভাবে চাঁদের পৃষ্ঠ রুক্ষ, অসংখ্য খাদ বা ক্রেটারসহ অন্ধকার মারিয়া অঞ্চল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আগামী দশকের মধ্যেই চন্দ্র আবারও জয়ের জন্য পাল্লা দিচ্ছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যেকোনো সময় চাঁদে মানববসতি তৈরির ঘোষণা দিতে পারেন। আপনার যদি ডাক পড়ে, তখন কী করবেন? সেই পরিপ্রেক্ষিতে জেনে নিন চাঁদের কোন এলাকার কী নাম। প্রয়োজনে চাঁদে গেলে কাজে আসতে পারে।

চাঁদের প্রধান এলাকা বলা হয় মারিয়াকে। ল্যাটিন শব্দ মার থেকে মারিয়া এসেছে, যার অর্থ সমুদ্র। চাঁদের অন্ধকার, মসৃণ অঞ্চলকে মারিয়া বলা হয়। প্রাচীন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ব্যাসাল্ট লাভা দিয়ে গঠিত এই এলাকা। চাঁদের সম্মুখভাগ যে দিক পৃথিবীর দিকে থাকে, সেখানে মারিয়ার পরিমাণ বেশি। মার ইম্ব্রিয়াম, মার সেরেনিটাটিস, মার ট্রাঙ্কুইলিটাটিস ও মার ফিকুন্ডেটিটিসসহ বেশ কিছু অংশ পৃথিবী থেকে দেখতে পাই আমরা।

চাঁদের মধ্যে উজ্জ্বল ও উঁচু অঞ্চল দেখা যায়। এসব উচ্চভূমি মূলত অ্যানোর্থোসাইট শিলা দিয়ে গঠিত ও ক্রেটার দ্বারা পরিপূর্ণ। চাঁদের পেছনের দিকের বেশির ভাগ অংশ উচ্চভূমি দিয়ে আবৃত। চাঁদের পৃষ্ঠে অসংখ্য ক্রেটার রয়েছে, যা গ্রহাণু ও উল্কাপিণ্ডের সংঘর্ষ বা আঘাতের ফলে তৈরি হয়েছে। চাঁদের বায়ুমণ্ডল না থাকায় এখানে ক্ষয় বা গঠন খুব ধীরগতিতে হয়। এসব কারণে ক্রেটার কোটি কোটি বছর ধরে অক্ষত থাকে। কিছু উল্লেখযোগ্য ক্রেটার হলো টাইকো, কোপার্নিকাস ও ক্লাভিয়াস।

রাইলস চাঁদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম। চাঁদের পৃষ্ঠে দীর্ঘ ও সরু গিরিখাতকে রাইলস বলা হয়। এসব মূলত লাভাপ্রবাহ বা টেকটোনিক ফাটলের কারণে তৈরি হয়েছে। হ্যাডলি রাইল ও ভ্যালেস শ্যরটেরি এমনই রাইলস। চাঁদে গেলে আপনি বেশ কিছু পর্বতমালা দেখতে পাবেন। এসব মূলত গ্রহাণুর আঘাত ইম্প্যাক্ট ইজেক্টা ও টেকটোনিক কার্যকলাপের ফলে তৈরি হয়েছে। চন্দ্রবুকে মন্টস অ্যাপেনাইনাস ও মন্টস কার্পাথিয়ানস উল্লেখযোগ্য পর্বতমালা।

চাঁদের পৃষ্ঠে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন দেশ এবং মহাকাশ সংস্থা তাদের যান অবতরণে সাফল্য পেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা প্রোগ্রাম ছিল চাঁদে পৌঁছানোর প্রথম প্রচেষ্টা। লুনা ২ চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করা প্রথম মানবসৃষ্ট বস্তু। লুনা–৯ চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে প্রথম ছবি পাঠায়। লুনা–১৬ চাঁদের মাটি পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে। ১৯৭০ সালে লুনা–১৭ অভিযানে লুনোখোড ১ রোভার প্রথম চাঁদে অবতরণ করে। অন্যদিকে নাসার অ্যাপোলো প্রোগ্রাম ছিল চাঁদে মানব অবতরণের ঐতিহাসিক মিশন। অ্যাপোলো–১১ ১৯৬৯ সালে প্রথম মানবকে চাঁদে অবতরণ করায়। অ্যাপোলো ১২, ১৪, ১৫, ১৬ এবং ১৭ চাঁদে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহের জন্য অবতরণ করে। অ্যাপোলো–১৫, ১৬ ও ১৭ মিশনে লুনার রোভিং ভেহিকেল ব্যবহার করা হয়। অ্যাপোলো–১১ মার ট্রাঙ্কুইলিটাটিস এলাকায় অবতরণ করেছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ চন্দ্র অভিযানে বেশ ব্যস্ত। চীনের চ্যাংই প্রোগ্রাম চাঁদে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান চালিয়েছে। চ্যাং ই–৩ চাঁদে ইউটু রোভারকে অবতরণ করিয়েছে। চ্যাং ই–৪ চাঁদের পেছনের দিকে অবতরণ করা প্রথম যান। চ্যাং ই–৫ চাঁদের মাটির নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে। ভারতের চন্দ্রযান প্রোগ্রামের মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথে ও পৃষ্ঠে সফল অভিযান চালিয়েছে। চন্দ্রযান-১ চাঁদের মেরু অঞ্চলে পানির অণুর উপস্থিতি নিশ্চিত করে। চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে গেছে।

সূত্র: নাসা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকা খুলে যাওয়া উড়োজাহাজ নিরাপদে অবতরণের স্বীকৃতি পেলেন ক্যাপ্টেনসহ তিনজন
  • চলুন ঘুরে আসি চাঁদ থেকে