চা রপ্তানির বাজারে বড় ব্র্যান্ড ‘সিলন’
Published: 21st, May 2025 GMT
বাংলাদেশ থেকে বছরে কোটি কেজি চা রপ্তানির সর্বশেষ উদাহরণ প্রায় ১৮ বছর আগের। দেশীয় চাহিদা বাড়তে থাকায় চা রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ছোট হয়ে আসে রপ্তানি বাজার। চা রপ্তানির সেই ছোট্ট বাজারে কয়েক বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছে আবুল খায়ের গ্রুপের ‘সিলন’ ব্র্যান্ড।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩৬ লাখ ৪৪ হাজার ডলার মূল্যের ১৭ লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। এ সময়ে এককভাবে সবচেয়ে বেশি চা রপ্তানি করেছে আবুল খায়ের গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ‘সিলন’ ব্র্যান্ডের চা রপ্তানি করেছে ১৫ লাখ ৮১ হাজার ডলারের। রপ্তানি আয়ের হিসাবে গ্রুপটি বাজার অংশীদারত্ব ৪৩ শতাংশ।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে একটানা চার অর্থবছর ধরে আবুল খায়ের গ্রুপ চা রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি চা রপ্তানির জন্য গত দুই বছর বাংলাদেশের ‘শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক’ শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
চা রপ্তানি আয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দ্য কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি। ফিনলে টি কোম্পানির এই প্রতিষ্ঠানটি ৭ লাখ ৪৬ হাজার ডলারের চা রপ্তানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির চা রপ্তানির পরিমাণ ৪ লাখ ৬৬ হাজার কেজি।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইস্পাহানি গ্রুপ। গ্রুপটির দুটি প্রতিষ্ঠান ৩ লাখ ডলার মূল্যের চা রপ্তানি করেছে। ইস্পাহানি গ্রুপ মির্জাপুর, ব্লেন্ডার চয়েসসহ নানা ব্র্যান্ডের চা রপ্তানি করছে। তাদের প্রতি কেজি চায়ের রপ্তানিমূল্য ৪ ডলার ৯৩ সেন্ট বা ৬০০ টাকা, যা শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সিটি গ্রুপ। কোম্পানিটি প্রায় আড়াই লাখ ডলার মূল্যের চা রপ্তানি করেছে। গ্রুপটি বেঙ্গল ব্ল্যাক টি ব্র্যান্ডের চা রপ্তানি করছে। পঞ্চম অবস্থানে থাকা আরিফ টি কোম্পানি লিমিটেড পৌনে ২ লাখ ডলার মূল্যের চা রপ্তানি করেছে।
রপ্তানিকারকদের হাত ধরে নতুন বাজার
চা রপ্তানিকারকেরা নতুন নতুন বাজারে যুক্ত হচ্ছেন। চলতি অর্থবছরে বিশ্বের ৩৫টি দেশে চা রপ্তানি করেছে ৫৯টি প্রতিষ্ঠান। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজারের সংখ্যা ছিল ২৩। রপ্তানিকারক ছিল ৫০টি প্রতিষ্ঠান। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১২টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। নতুন বাজারের সংখ্যা বেড়েছে ১২টি।
পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় নিয়মিত চা রপ্তানি হয়। পাকিস্তানে মূলত খোলা চা বেশি চলে। খোলা চায়ের রপ্তানির মূল্য কম। যেমন এ বছর পাকিস্তানে রপ্তানি হওয়া চায়ের গড় মূল্য ছিল প্রতি কেজি ১ ডলার ৬০ সেন্ট।
এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বাজারে নিয়মিত চা রপ্তানি করে আসছে রপ্তানিকারকেরা। এসব দেশে চায়ের রপ্তানিমূল্যও বেশি। যেমন এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য ৪ ডলার ৮৭ সেন্ট বা ৫৯৪ টাকা। ইস্পাহানি গ্রুপ, সিটি গ্রুপসহ কয়েকটি কোম্পানি এই বাজারে চা রপ্তানি করে আসছে।
চলতি অর্থবছরে বেলজিয়াম, ভুটান, সাইপ্রাস, ভিয়েতনাম, ডেনমার্কের মতো নতুন বাজারে যুক্ত হয়েছেন রপ্তানিকারকেরা। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআইয়ের হাত ধরে বেলজিয়ামে চা রপ্তানির নতুন বাজারে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। সিটি গ্রুপ ও ওরিয়ন গ্রুপের হাত ধরে নাম উঠেছে সাইপ্রাসের বাজার। নতুন বাজার ডেনমার্কে অর্গানিক ওলন চা রপ্তানি করেছে কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড।
উৎপাদনের তুলনায় রপ্তানি কম, তবে বাড়ছে
স্বাধীনতার পর উৎপাদনের তুলনায় চায়ের চাহিদা ছিল কম। ফলে উদ্বৃত্ত চা রপ্তানি হতো। যেমন চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের হিসাবে, ১৯৭২-৭৩ সালে চা রপ্তানি হয়েছিল ২ কোটি ৩ লাখ কেজি। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছিল ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে। এ সময় ৩ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়। তিন দশক ধরে ধীরে ধীরে চায়ের ভোগ বাড়তে থাকে। চা উদ্বৃত্তের পরিমাণ কমতে থাকায় রপ্তানিও কমতে থাকে।
চায়ের ভোগ বাড়তে থাকায় এক যুগ আগে থেকে চা আমদানি শুরু হয়। বাজার বড় হতে থাকায় বড় শিল্প গ্রুপ চা-বাগানে যুক্ত হয়। গত তিন বছরে গড়ে ৯ কোটি ৬৬ লাখ কেজি করে চা উৎপাদন হতে থাকে, যা আগের তিন বছরের গড়ের চেয়ে ৩৬ লাখ কেজি বেশি। উৎপাদন বাড়ায় আমদানি কমে যায়।
চা উদ্বৃত্তের পরিমাণ বাড়ায় রপ্তানিও বাড়তে থাকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৬ লাখ ডলারের চা রপ্তানি হয়। সেখানে চলতি অর্থবছরে ১০ মাসেই রপ্তানি হয় ৩৬ লাখ ৪৪ হাজার ডলার বা ৪৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার চা রপ্তানি হয়।
চা রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, চা রপ্তানি বাড়াতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। আবার চায়ের মান বাড়ানো গেলে বিশ্ববাজারে রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা-সক্ষমতাও বাড়বে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন ব জ র য ক ত হয় অবস থ ন ৩৬ ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
এক্সপোর্ট পারমিট জটিলতায় আগরতলায় মাছ রপ্তানি বন্ধ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় মাছ রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এক্সপোর্ট পারমিট (ইএসপি) জটিলতার কারণে বুধবার সকাল থেকে এ রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন মৎস্য রপ্তানিকারকরা।
বাংলাদেশ মৎস্য রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া জানান, “আমরা ইএসপি সমস্যার কারণে আজ আগরতলায় মাছ পাঠাতে পারিনি। তবে আশা করছি, আগামীকাল থেকে আবার রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।”
এদিকে হঠাৎ করে ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ছয়টি পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আখাউড়া বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে হিমায়িত মাছসহ প্লাস্টিক সামগ্রী, পিভিসি পণ্য, চিপস, বিস্কুট, ফলের স্বাদযুক্ত জুস ও তুলা রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ৪২৭ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, আর চলতি অর্থবছরে গেলো এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৪৫৩ কোটি টাকার পণ্য।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও এর প্রেক্ষিতে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই ভারত আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চেয়েছেন।
স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, আজ সকালে বন্দরে মাছবাহী কোনো গাড়ি আসেনি। তবে সিমেন্ট ও ভোজ্য তেল নিয়ে ১১টি ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করেছে।
উল্লেখ্য, আখাউড়া স্থলবন্দর দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রপ্তানিমুখী বন্দর। এখান থেকে ত্রিপুরা ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।