অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘পোস্ট’ দেওয়ায় পর গ্রেপ্তার হওয়া অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ।

আজ বুধবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের ডিভিশন বেঞ্চ হরিয়ানার অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের জামিন মঞ্জুর করেন।

তবে জামিন পেলেও অধ্যাপক আলি খানকে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি; বরং বিচারপতি সূর্যকান্ত প্রশ্ন করেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবার আছে ঠিকই, কিন্তু ‘দানবেরা’ যখন দেশ আক্রমণ করছে, তখন সস্তা প্রচার পাওয়ার কোনো প্রয়োজন অধ্যাপকের ছিল কি?

এদিন জামিনের আবেদন গ্রাহ্য করার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট মামলার তদন্ত–সম্পর্কিত বিষয়ে একাধিক নির্দেশও দিয়েছেন, যেমন বলা হয়েছে, হরিয়ানা পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করতে হবে। দলে উচ্চপদস্থ আইপিএস কর্মকর্তাদের রাখতে হবে। দলের সদস্যদের কেউ হরিয়ানা বা দিল্লি পুলিশের সদস্য হবেন না। দলের অন্তত এক সদস্য নারী হতে হবে।

অধ্যাপক মাহমুদাবাদের জন্য আদালত থেকে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যেমন এই মামলা নিয়ে তিনি কিছু লিখতে ও বলতে পারবেন না। পেহেলগামকাণ্ড ও তারপরের ঘটনাবলি এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়েও কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো পোস্ট দেবেন না। তা ছাড়া তাঁর পাসপোর্ট পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে।

অধ্যাপক মাহমুদাবাদের জন্যও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যেমন এই মামলা নিয়ে তিনি কিছু লিখতে ও বলতে পারবেন না। পেহেলগামকাণ্ড ও এরপরের ঘটনাবলি এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়েও কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো পোস্ট দেবেন না। তা ছাড়া তাঁর পাসপোর্ট পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে।

অপারেশন সিঁদুর ও এর প্রচারের দায়িত্ব দুই নারী সেনাকে দেওয়া নিয়ে অধ্যাপক মাহমুদাবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্ট দেন। তাতে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংয়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, দক্ষিণপন্থীরা উৎফুল্ল। তাঁরা এ দুজনের খুব প্রশংসা করছেন। কিন্তু একইভাবে তাঁরা যদি ঘৃণা ভাষণ, বুলডোজার নীতি বা গণপিটুনিতে মৃত্যুর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন, তাহলে আগামী দিনে দেশ সুরক্ষিত থাকবে।

এ মন্তব্যের কারণে হরিয়ানার এক বিজেপি নেতা ও রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দাখিল করেন। পরদিনই হরিয়ানা ও দিল্লি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

নিম্ন আদালত অধ্যাপক মাহমুদাবাদকে দুই দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পরে গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

অধিকার যেমন আছে, তেমন কর্তব্যবোধও থাকা দরকার। মনে হচ্ছে, ৭৫ বছর ধরে দেশ শুধু অধিকারই বিলি করেছে, কর্তব্য নয়। ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও যত্নবান হওয়া উচিত। এমন ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়, যা অন্যের অনুভূতিতে আঘাত করে।সূর্যকান্ত, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি

অধ্যাপক মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট, বৈরিতা সৃষ্টির চেষ্টা, বিচ্ছিন্নতাবাদে উসকানি, সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতা ও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুননারীর অবমাননাকারী মন্ত্রী মুক্ত থাকলেও বিজেপির মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গ্রেপ্তার অধ্যাপক১৯ মে ২০২৫

আলি খান মাহমুদাবাদের হয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করেন কপিল সিব্বাল। এই আইনজীবী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই পোস্ট করার পেছনে অধ্যাপকের কোনো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য ছিল না।

বিচারপতি সূর্যকান্ত তা সত্ত্বেও বেশ কড়া ভাষায় বলেন, মতপ্রকাশের অধিকার সবার আছে। কিন্তু এই সময়ে এই বিষয়ে কথা বলা কি উচিত? দেশ এমন একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। দানবেরা এল ও মানুষদের মেরে চলে গেল। এখন দরকার প্রত্যেকের ঐক্যবদ্ধ থাকা। এই সময়ে এমন সস্তা প্রচারের কী দরকার?

বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, অধিকার যেমন আছে, তেমন কর্তব্যবোধও থাকা দরকার। মনে হচ্ছে ৭৫ বছর ধরে দেশ শুধু অধিকারই বিলি করেছে, কর্তব্য নয়। তিনি এ কথাও বলেন, ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও যত্নবান হওয়া উচিত। এমন ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়, যা অন্যের অনুভূতিতে আঘাত করে।

আরও পড়ুনপাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পর শিক্ষাবিদ, শিল্পীদের নানাভাবে হয়রানি করছে বিজেপি সরকার২২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনপাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ভারতীয় অধ্যাপক গ্রেপ্তার১৯ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব ন ন ব চ রপত দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সন্দ্বীপে খালের দখল নিয়ে বিরোধে দশম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু, পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে খালের দখলকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার দশম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মো. রিফাতুর রহমান (১৭)। সে উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জামসেদুর রহমানের ছেলে। রিফাত মগধরা ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্ব সন্দ্বীপ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ত। সে স্থানীয় কোরাইল্যা খালে বাঁধ দেওয়ার বিরোধিতা করেছিল।

ছেলের ওপর হামলা ও মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতাকে দায়ী করেছেন রিফাতের বাবা জামসেদুর রহমান। পুলিশের মিথ্যা তথ্যের জন্য ছেলেকে উদ্ধার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন।

জানা গেছে, গত সোমবার (১৯ মে) উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের একটি খালের দখল নিয়ে বিএনপি ও যুবদলের কর্মীদের হামলায় গুরুতর জখম হয় রিফাত। মঙ্গলবার বেলা একটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে।

রিফাতের বাবার অভিযোগ, চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী তাঁর ছেলেকে বাড়ির কাছ থেকে ধরে নিয়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের দুই সদস্য তাঁকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

প্রথম আলোকে রিফাতের বাবা জামসেদুর রহমান বলেন, ‘ছেলেকে রাজু বাহিনী আটকে রাখলেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ আমাকে বলেছে, তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে আরও অনেক পরে।’

রিফাতের বাবার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সফিকুল ইসলাম চৌধুরী।

ছেলের ওপর হামলা ও মৃত্যুর জন্য সারিকাইত ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীকে দায়ী করেন রিফাতের বাবা। তাঁর অভিযোগ, শওকত আলীর নেতৃত্বে তাঁর ছেলের ওপর হামলা হয়েছে। রিফাতকে আটকে রাখার স্থানে তিনি শওকত আলীকে দেখেছেন।

অভিযুক্ত শওকত আলীর বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কল ধরেননি।

এলাকায় মাদক, দখলবাজি ও জনদুর্ভোগের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছেলে প্রাণ হারিয়েছে জানিয়ে জামসেদুর রহমান বলেন, ‘রাজু বাহিনী (শওকত আলী) ১৯ মে রাত আটটায় আমার বাড়ির কাছে থেকে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে চার ঘণ্টা আটকে রাখে। তার অপরাধ, সে বাড়ির পাশের খাল দখলের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। ছেলেকে আটকে মারধর করা হচ্ছে শুনে আমি মগধরা-সারিকাইত সীমান্তে বেড়িবাঁধে যাই। তখন সেখানে উপস্থিত পুলিশের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেন, রিফাতকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ আমার ছেলে তখনো সেখানে আটক ছিল।’

পুলিশ কেন এমনটা বলেছে? আপনার কী মনে হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে জামসেদুর রহমান বলেন, ‘কেন এমন মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, আমি বুঝতে পারতেছি না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মাথার গভীর আঘাতে দীর্ঘ সময় রক্তক্ষরণে রিফাতের মৃত্যু হয়েছে। সময়মতো চিকিৎসা করা হলে ছেলেকে বাঁচানো যেত। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে সন্দ্বীপ থানার ওসি এ কে এম সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই দাবি সঠিক নয়। পুলিশের দায়িত্ব ভুক্তভোগীকে (ভিকটিমকে) দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। এ ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে। খবর পাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মগধরা ইউনিয়নের কোরাইল্যা খাল নামে পরিচিত একটি খালের দখল নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের কিছু কর্মীর মধ্যে রেষারেষির সৃষ্টি হয়। খালটি শওকত আলীর অনুসারী আলমগীর নামের এক যুবদল নেতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ইজারা নেন। স্কুলপড়ুয়া রিফাত খালে বাঁধ দেওয়ার বিরোধিতা করলে তার সঙ্গে কয়েকজনের তর্ক হয়।

প্রতিবেশীরা জানান, রিফাতের বাবা জামসেদুর রহমান ও তাঁর পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে জামসেদুর রহমান ও শওকত আলী ভিন্ন ভিন্ন নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ