প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেছেন, বর্তমানে যে গতিতে সরকারি সংস্থাগুলোর সংস্কারকাজ চলছে তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। শিল্পসহ অন্যান্য খাতে সংস্কারের কোনো পথনকশা নেই। এটি হতাশার।

আজ শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলডিসি-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন লুৎফে সিদ্দিকী।

রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমস) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো.

আনোয়ার হোসেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকারি সংস্থাগুলোর কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। তবে যে গতিতে বর্তমানে সংস্কার করা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। সত্যিকার অর্থে শিল্পসহ অন্যান্য খাতে আমাদের কোনো পথনকশা নেই, যা হতাশার বিষয়।’

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানান লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি বলেন, দেশের বন্দরসমূহ অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। তাই এগুলোর  ব্যবস্থাপনা সচল রেখে নির্বিঘ্নে কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। এ ছাড়া বেসরকারি খাতকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি ব্যবসায়ী সমাজের দাবিসমূহ যৌক্তিকভাবে সরকারের কাছে উপস্থাপনের আহ্বান জানান।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। এতে তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে রপ্তানি ও আমদানি নীতি সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। বাণিজ্যিক, শিল্প ও আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্ট নীতিগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।

সেলিম রায়হান জানান, দেশের রপ্তানি এখনো শুধু তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। এ খাতে সরকার রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ও কর রিটার্নের প্রণোদনা দিচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ অনেক সময় প্রতিযোগী দেশের তুলনায় আমদানি শুল্ক বেশি নেয়। আমদানি ক্ষেত্রে প্যারা-ট্যারিফ (পরোক্ষ শুল্ক) জটিলতাও রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি সমন্বিত কাঠামো তৈরি করা জরুরি।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ–পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের আমদানি-রপ্তানি নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নের কোনো বিকল্প নেই। দীর্ঘদিনের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ, রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা, রিজার্ভ স্বল্পতা ও আইনশৃঙ্খলার অস্থিরতার কারণে শিল্পের উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমদানি পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার পাশাপাশি শুল্ক ও ট্যারিফ কাঠামোয় দক্ষ ব্যবস্থাপনা জরুরি। সেই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি নীতিমালার বৈসাদৃশ্য দূর করে একটি সমন্বিত বাণিজ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করতেই হবে। এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এলডিসি–পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে শিগগিরই সবার অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে।

এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে বন্ডেড ওয়্যারহাউস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে সবাইকে এ সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে। এ ছাড়া এনবিআর ইলেকট্রনিক ডেটা এক্সচেঞ্জ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এটি চালু হলে ব্যবসায়ীরা আরও স্বল্প সময়ে আমদানি করা পণ্য ছাড় করাতে পারবেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, বাণিজ্য নীতিমালার সংস্কার, উন্নত কর্মপরিবেশ ও মান (কমপ্লায়েন্স ও স্ট্যান্ডার্ড) এবং বেসরকারি খাতের প্রস্তুতি—এই তিন বিষয়ে সরকার কাজ করছে। তৈরি পোশাক খাতে কৃত্রিম তন্তু ব্যবহারের জন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, ট্যারিফ কমিশনের জয়েন্ট চিফ (ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন ডিভিশন) মো. মসিউল ইসলাম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, ডেলটা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জাকির হোসেন ও ফকির ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব সরক র সমন ব এলড স আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার’ ও ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ইন ফিজিক্স’ প্রদানের জন্য দেশের পদার্থবিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

কোন সালের জন্য পুরস্কার —

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের গবেষণা কাজের জন্য এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

পুরস্কার মল্যমান কত —

১. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য পুরস্কার পাওয়া গবেষককে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার হিসেবে নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।

২. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একজন বিজ্ঞানী বা গবেষককে নগদ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

আবেদনের শেষ তারিখ —

আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) বরাবর আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে—

আবেদনকারীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিন কপি আবেদনপত্র, তিন প্রস্থ জীবনবৃত্তান্ত, তিন প্রস্থ গবেষণাকর্ম এবং তিন কপি ছবি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

দরকারি তথ্য—

১. জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকাশিত গবেষণাকর্ম পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে।

২. যৌথ গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে গবেষণা পুরস্কারের অর্থ সমান হারে বণ্টন করা হবে। এ ক্ষেত্রে সহযোগী গবেষক বা গবেষকের অনুমতি নিয়ে আবেদন করতে হবে।

৩. আবেদনকারী যে বছরের জন্য আবেদন করবেন পাবলিকেশন ওই বছরের হতে হবে।

৪. একই পাবলিকেশন দিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য আবেদন করা যাবে না।

৫. কোন কারণে একজন প্রার্থী পুরস্কারের জন্য আবেদন করলে প্রার্থিতার স্বল্পতা বিবেচনা করে তাঁর আবেদন বিবেচনা করা হবে।

৬. পরীক্ষক তাঁর গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য সুপারিশ না করলে তাঁকে পুরস্কারের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে না।

৭. পদার্থবিজ্ঞানে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার একবার প্রাপ্ত গবেষকও পরবর্তী সময়ে আবেদন করতে পারবেন।

৮. নতুন গবেষককে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

৯. যদি মানসম্মত গবেষণা কাজ না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে পূর্বের পুরস্কার পাওয়া গবেষকের নতুন গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য পরীক্ষকের সুপারিশের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।

# আবেদন জমা দেওয়ার ঠিকানা: প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল, ভোলা সদরে কার্যক্রম স্থগিত
  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন
  • নোবিপ্রবিসাসের বর্ষসেরা সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমের শফিউল্লাহ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ১০০ কোটির সম্পদ, স্বামীর প্রতারণা, ৪৭ বছর বয়সেই মারা যান এই নায়িকা
  • তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া
  • শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি
  • সনদ বাস্তবায়নে আবারো কমিশনের সভা আয়োজনের দাবি