Samakal:
2025-05-25@02:20:17 GMT

এই খনন লইয়া আমরা কী করিব

Published: 24th, May 2025 GMT

এই খনন লইয়া আমরা কী করিব

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খননে বিপুল অর্থ ব্যয় হইলেও উহা অনর্থের কারণ হইয়াছে; নাব্য সংকটে ধুঁকিতে থাকা নদটিকে উদ্ধার করা যায় নাই, উপরন্তু উহার গতিপথ পরিবর্তন হইয়াছে। ইহার জের ধরিয়া নদীভাঙনে বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারাইয়া বিপদে পড়িয়াছে অনেক পরিবার। শনিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ তথা বিআইডব্লিউটিএ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খননে যেই প্রকল্পের সূচনা করিয়াছে, তাহা চলতি বৎসর শেষ হইবার কথা থাকিলেও প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বৎসর বাড়ানো হইয়াছে। ইতোমধ্যে সহস্রাধিক কোটি টাকা ব্যয় হইলেও নদটির পরিস্থিতির উন্নতি হয় নাই, বরং নূতন সংকট তৈয়ার করিয়াছে। বিষম পরিস্থিতিতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বহুল উদ্ধৃত উক্তি– ‘এই জীবন লইয়া কী করিব?’ পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের অবস্থাদৃষ্টে আমাদেরও বলিতে হয়– এই খনন লইয়া কী করিব?

আমরা জানি, দেশের নদীগুলি সুস্থ নাই এবং অধিকাংশই দখল দূষণে বিপর্যস্ত। নাব্য সংকটে থাকা নদী উদ্ধারে খননকার্য জরুরি হইয়া পড়ে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদটিও নাব্য সংকটে মৃতপ্রায় হইয়া পড়িয়াছে; যেই কারণে নদটি খননে বিপুল অর্থ ব্যয় করিয়া প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্রের সাবেক ধারাটি গাইবান্ধা, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ হইয়া ভৈরবে মেঘনা নদীর সহিত মিলিত হইয়াছে, যাহা উজানে যমুনা নদীর সহিত সংযুক্ত। বিআইডব্লিউটিএ পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সমগ্র ২২৭ কিলোমিটার এলাকাই খননের দায়িত্বে রহিয়াছে। ছয় বৎসরের খননে এই নদে পানিপ্রবাহ তো বাড়ানো যায় নাই, বরং অন্তত তিন স্থানে ঘুরিয়া দেওয়া হইয়াছে নদের গতিপথ। কোথাও অপরিকল্পিতভাবে নদের মধ্যেই খননকৃত বালু ফেলিয়া, আবার কোথাও ভূমি দখল করিতে মূল প্রবাহ সরাইয়া দেওয়া হইয়াছে। ইহাতে নদীভাঙনে বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারাইয়াছে শত শত মানুষ।

প্রকল্পটি গ্রহণকালে বলা হইয়াছিল, খনন শেষ হইলে নদে শুষ্ক মৌসুমেও দশ মিটার পানির প্রবাহ থাকিবে; ইহা তিনশ মিটার প্রশস্ত হইলে জাহাজও চলিবে। এমনকি আন্তর্জাতিক নৌরুট হিসাবেও ব্যবহারের প্রত্যাশা ছিল। পাশাপাশি মৎস্য সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পারের মানুষের জীবনধারা বদলাইবার প্রত্যাশা ছিল। সেই কারণেই পৌনে তিন সহস্র কোটি টাকার বিশাল এই প্রকল্প গ্রহণ করা হইয়াছিল। অথচ প্রকল্পের নির্ধারিত সময় শেষ হইবার পর দেখা যাইতেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পরিস্থিতি আরও নাজুক হইয়াছে। উপরন্তু ইহার দুই পারের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বদলে তাহারা আরও বিপদে পড়িয়াছে।

এই ক্ষেত্রে কেবল অপরিকল্পিত খননই দায়ী নহে, একই সঙ্গে প্রকল্পটিতে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের কারণে উল্টা ফল দেখা যাইতেছে। বিশেষত জামালপুর শহরের মেডিকেল রোড এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের মূলধারা ‘ইউ প্যাটার্ন’ প্রায় দেড় কিলোমিটার ঘুরাইয়া দিয়াছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মির্জা আজম। বিস্ময়কর হইলেও সত্য, তিনি নদের ভরাট করা জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছেন। পাশাপাশি গফরগাঁও উপজেলায় মূল নদ ভরাট করিয়া প্রায় দুই কিলোমিটার দূর দিয়া ‘নতুন গতিপথ’ তৈয়ার করিয়েছেন আওয়ামী লীগেরই আরেক প্রতাপশালী সংসদ সদস্য, যাহার উদ্দেশ্য ছিল জমি দখল। এতদ্ব্যতীত ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা নামাপাড়ায় মূল গতিপথে বালু ভরাট করিবার কারণে তিনটি উপধারা তৈয়ার হইয়াছে। এই সকল দখল ও গতিপথ পরিবর্তনের কারণে মানুষ বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারাইয়াছে এবং কোথাও নদ সরু হইয়া খালে পরিণত হইয়াছে।     

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র খননে এক মন্দ নজির স্থাপন করিয়াছে। আমরা চাই, প্রকল্পটি লইয়া সরকার অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠন করিয়া যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। স্বস্তির বিষয় হইল, এই প্রকল্পের মেয়াদ দুই বৎসর বাড়াইলেও বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি রহিয়া গিয়াছে। বাকি অর্থগুলো যাহাতে জলে না ফেলাইয়া যথাযথভাবে ব্যয় করিয়া নদের পরিবেশ ফিরাইয়া আনা যায়, উহা নিশ্চিত করিতে হইবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র কর য় ছ ই খনন হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

এই খনন লইয়া আমরা কী করিব

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খননে বিপুল অর্থ ব্যয় হইলেও উহা অনর্থের কারণ হইয়াছে; নাব্য সংকটে ধুঁকিতে থাকা নদটিকে উদ্ধার করা যায় নাই, উপরন্তু উহার গতিপথ পরিবর্তন হইয়াছে। ইহার জের ধরিয়া নদীভাঙনে বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারাইয়া বিপদে পড়িয়াছে অনেক পরিবার। শনিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ তথা বিআইডব্লিউটিএ পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খননে যেই প্রকল্পের সূচনা করিয়াছে, তাহা চলতি বৎসর শেষ হইবার কথা থাকিলেও প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বৎসর বাড়ানো হইয়াছে। ইতোমধ্যে সহস্রাধিক কোটি টাকা ব্যয় হইলেও নদটির পরিস্থিতির উন্নতি হয় নাই, বরং নূতন সংকট তৈয়ার করিয়াছে। বিষম পরিস্থিতিতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বহুল উদ্ধৃত উক্তি– ‘এই জীবন লইয়া কী করিব?’ পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের অবস্থাদৃষ্টে আমাদেরও বলিতে হয়– এই খনন লইয়া কী করিব?

আমরা জানি, দেশের নদীগুলি সুস্থ নাই এবং অধিকাংশই দখল দূষণে বিপর্যস্ত। নাব্য সংকটে থাকা নদী উদ্ধারে খননকার্য জরুরি হইয়া পড়ে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদটিও নাব্য সংকটে মৃতপ্রায় হইয়া পড়িয়াছে; যেই কারণে নদটি খননে বিপুল অর্থ ব্যয় করিয়া প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্রের সাবেক ধারাটি গাইবান্ধা, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ হইয়া ভৈরবে মেঘনা নদীর সহিত মিলিত হইয়াছে, যাহা উজানে যমুনা নদীর সহিত সংযুক্ত। বিআইডব্লিউটিএ পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সমগ্র ২২৭ কিলোমিটার এলাকাই খননের দায়িত্বে রহিয়াছে। ছয় বৎসরের খননে এই নদে পানিপ্রবাহ তো বাড়ানো যায় নাই, বরং অন্তত তিন স্থানে ঘুরিয়া দেওয়া হইয়াছে নদের গতিপথ। কোথাও অপরিকল্পিতভাবে নদের মধ্যেই খননকৃত বালু ফেলিয়া, আবার কোথাও ভূমি দখল করিতে মূল প্রবাহ সরাইয়া দেওয়া হইয়াছে। ইহাতে নদীভাঙনে বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারাইয়াছে শত শত মানুষ।

প্রকল্পটি গ্রহণকালে বলা হইয়াছিল, খনন শেষ হইলে নদে শুষ্ক মৌসুমেও দশ মিটার পানির প্রবাহ থাকিবে; ইহা তিনশ মিটার প্রশস্ত হইলে জাহাজও চলিবে। এমনকি আন্তর্জাতিক নৌরুট হিসাবেও ব্যবহারের প্রত্যাশা ছিল। পাশাপাশি মৎস্য সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পারের মানুষের জীবনধারা বদলাইবার প্রত্যাশা ছিল। সেই কারণেই পৌনে তিন সহস্র কোটি টাকার বিশাল এই প্রকল্প গ্রহণ করা হইয়াছিল। অথচ প্রকল্পের নির্ধারিত সময় শেষ হইবার পর দেখা যাইতেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পরিস্থিতি আরও নাজুক হইয়াছে। উপরন্তু ইহার দুই পারের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বদলে তাহারা আরও বিপদে পড়িয়াছে।

এই ক্ষেত্রে কেবল অপরিকল্পিত খননই দায়ী নহে, একই সঙ্গে প্রকল্পটিতে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের কারণে উল্টা ফল দেখা যাইতেছে। বিশেষত জামালপুর শহরের মেডিকেল রোড এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের মূলধারা ‘ইউ প্যাটার্ন’ প্রায় দেড় কিলোমিটার ঘুরাইয়া দিয়াছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মির্জা আজম। বিস্ময়কর হইলেও সত্য, তিনি নদের ভরাট করা জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছেন। পাশাপাশি গফরগাঁও উপজেলায় মূল নদ ভরাট করিয়া প্রায় দুই কিলোমিটার দূর দিয়া ‘নতুন গতিপথ’ তৈয়ার করিয়েছেন আওয়ামী লীগেরই আরেক প্রতাপশালী সংসদ সদস্য, যাহার উদ্দেশ্য ছিল জমি দখল। এতদ্ব্যতীত ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা নামাপাড়ায় মূল গতিপথে বালু ভরাট করিবার কারণে তিনটি উপধারা তৈয়ার হইয়াছে। এই সকল দখল ও গতিপথ পরিবর্তনের কারণে মানুষ বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারাইয়াছে এবং কোথাও নদ সরু হইয়া খালে পরিণত হইয়াছে।     

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র খননে এক মন্দ নজির স্থাপন করিয়াছে। আমরা চাই, প্রকল্পটি লইয়া সরকার অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠন করিয়া যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। স্বস্তির বিষয় হইল, এই প্রকল্পের মেয়াদ দুই বৎসর বাড়াইলেও বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি রহিয়া গিয়াছে। বাকি অর্থগুলো যাহাতে জলে না ফেলাইয়া যথাযথভাবে ব্যয় করিয়া নদের পরিবেশ ফিরাইয়া আনা যায়, উহা নিশ্চিত করিতে হইবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ