আগামী অর্থবছরের বাজেটে ফ্রিজ ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট হার দ্বিগুণ করা হচ্ছে।

বর্তমানে দেশি ফ্রিজ ও এসির ওপর উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হয়। আগামী বাজেটে তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে ফ্রিজ ও এসির দাম বাড়তে পারে।

আগামী ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেটে মুঠোফোনের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর এই নতুন প্রস্তাব করা হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এবারের বাজেট উপস্থাপন করবেন। সেখানে শুল্ক-করসংক্রান্ত পরিবর্তনের প্রস্তাবগুলো থাকবে।

এনবিআরের কর কর্মকর্তারা জানান, দেশি ফ্রিজ ও এসির উৎপাদকেরা কারখানা থেকে সরবরাহ পর্যায়ে এই ভ্যাট দেন। এই হার ১৫ শতাংশ করা হলে ভ্যাট রেয়াত নিতে পারবেন। ফ্রিজ ও এসির উপকরণ বা যন্ত্রাংশ সাধারণত প্রতিষ্ঠিত সরবরাহব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়।

সূত্রমতে, এ দুই খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে আরও বাড়িয়ে ভ্যাট হার করা হয়েছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এখন এই খাতগুলোতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বর্তমানে দেশে ওয়ালটন, ইলেক্ট্রোমার্ট, ট্রান্সকম, এসকোয়্যার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাটারফ্লাই, র‍্যাংগ্স, ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল, মিনিস্টার, ভিশন, এলজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে।

ফ্রিজ ও এসি খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমান এসির বাজারের দুই-তৃতীয়াংশই এখন দেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। শহর এলাকায় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর চল থাকলেও মফস্‌সলের বাজার পুরোটাই এখন দেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে সাশ্রয়ী মূল্য ও সহজলভ্যতা। বর্তমানে বছরে গড়ে ছয় থেকে সাত লাখ এসি বিক্রি হয়। দ্রুত এ খাতের চাহিদা বাড়ছে। অন্যদিকে ফ্রিজের বাজারেও ওয়ালটনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী অবস্থান আছে। প্রতিবছর গড়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ র জ ও এস র

এছাড়াও পড়ুন:

তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা আগের মতোই বহাল রেখেছে সরকার। জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রণোদনা এবং নগদ সহায়তার হার পণ্যভেদে দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তিন কারণে রপ্তানি খাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও পাঁচ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, যে কারণে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প খাতে অস্থিরতা। বিগত সাত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনার সিংহভাগ (৮০ ভাগের বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের দুই দফায় রপ্তানি প্রণোদনা কমায়। তখন বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই ধাপে ধাপে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কোন খাতে কত প্রণোদনা

নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। দেশি সুতা ব্যবহার করে উৎপাদিত তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে; যা গত বছরের জুনের আগে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ এবং ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে ৬ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ মিলবে।

কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। তারপরও বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকবে। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় প্রণোদনা মিলবে ৩ শতাংশ। একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ৫ শতাংশ, বাইসাইকেল রপ্তানিতে ৩ শতাংশ এবং আসবাব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা থাকবে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য যেমন হোগলা, খড়, আখ বা নারিকেলের ছোবড়া, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট, গরু, মহিষের নাড়ি, ভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আঁতর ইত্যাদি পণ্য রপ্তানিতেও নগদ সহায়তা আগের মতো থাকবে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিতে নগদ সহায়তার অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এটি কমিয়ে আনতে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়, সেভাবে রপ্তানিকারকদেরও দিতে পারে সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো। এদিকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি খরচ বাড়লেও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, কাজই শুরু হয়নি
  • ভর্তুকি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে রেশমশিল্প
  • আট পণ্যে আটকা দেশের রপ্তানি খাত
  • সরকারের ঋণ হবে সাড়ে ২৩ লাখ কোটি টাকা 
  • তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা
  • বিনিয়োগের সন্ধানে চীন যাচ্ছে বিডার প্রতিনিধি দল
  • ব্যয় সংকোচনে আরো কঠোর সরকার
  • চলতি অর্থবছরে ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি অব্যাহত থাকবে
  • সরকারি দপ্তরে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফর বন্ধ
  • ট্রাম্পের নতুন শুল্ক, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয় ৩০ হাজার কোটি ডলারে উঠতে পারে