অভিনয় ছাড়েননি মৌসুমী, ফের দাঁড়ালেন ক্যামেরার সামনে
Published: 25th, May 2025 GMT
অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমার নায়িকা মৌসুমী। মাঝে ছিলেন দুই বছরের বিরতিতে। কিছুদিন আগে গুঞ্জন ওঠে- অভিনয়কে ইতি জানিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, চলতি মাসের শুরুতে মৌসুমীর স্বামী ওমর সানী জানান, মৌসুমী ভুলে যেতে চান তিনি মৌসুমী ছিলেন! ওমর সানীর ওই মন্তব্যের পর অনেকেই ধরেই নিয়েছিলেন আর কোনোদিন হয়ত মৌসুমীকে আর পর্দায় দেখা যাবে না। অবশেষে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন মৌমুমী। এবার সিনেমায় নিয়ে নয়, তিনি আসছেন টেলিছবি নিয়ে।
মৌসুমী বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। দুই বছর ধরে আছেন সেখানে। মায়ের অসুস্থতা আর মেয়ের পড়াশোনার কারণে পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। এর ফাঁকে ‘পিএস চাই সুন্দরী’ নামে টেলিছবির শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন মৌসুমী। সম্প্রতি ভার্জিনিয়ার বেইলি স্ট্রিম লং আইল্যান্ডে হয়েছে টেলিছবিটির শুটিং।
এতে মৌসুমীর সহশিল্পী ছিলেন হাসান জাহাঙ্গীর ও আকাশ রহমান। রোববার একটি ভিডিও শেয়ার করে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন অভিনেতা-নির্মাতা হাসান জাহাঙ্গীর।
জানা গেছে, এটিভির (ইউএসএ) ঈদ আয়োজনে টেলিছবিটি প্রচার হবে। এ টেলিছবি ছাড়াও একই চ্যানেলের একটি নাটকে দেখা যাবে মৌসুমীকে।
ভিডিওতে মৌসুমীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘পিএস চাই সুন্দরী’ নামে আমাদের নাটকটি আসছে। কোরবানির ঈদের জন্য নির্মাণ হচ্ছে এটি। এতে আকাশ রহমান আমার বসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বসের সঙ্গে শুটিং করেতে রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে এসেছি। অন্যরকম গল্পের কাজ এটি।”
প্রসঙ্গত, মৌসুমীর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা সর্বশেষ সিনেমা ‘সোনার চর’। এতে তিনি ছাড়াও অভিনয় করেছেন ওমর সানী, জায়েদ খান, জান্নাতুল স্নিগ্ধাসহ আরও অনেকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পোশাকশিল্পের জন্য কেমন বাজেট চাই
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা তৈরি পোশাকশিল্প খাত। সর্ববৃহৎ বেসরকারি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এই খাতটি বর্তমানে বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, উচ্চ ব্যাংক সুদ, মজুরি বৃদ্ধি, গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘন ঘন মূল্য বৃদ্ধির চাপে শিল্পটি পিষ্ট।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হচ্ছে। তখন রপ্তানিতে ৮৪ শতাংশ অবদান রাখা পোশাকশিল্প অনেক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা হারাবে, যা শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতায় সরাসরি আঘাত করবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি সাড়ে ৫ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এই হ্রাসের মূল কারণ হবে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা (যেমন জিএসপি) হারানো।
এ পরিপ্রেক্ষিতে এবারের বাজেট পোশাকশিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে সরকারের কাছে আমরা যে নীতি-সহায়তাগুলো আশা করছি, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পোশাকশিল্পের করপোরেট করহার ১২ শতাংশ অব্যাহত রাখা হবে। রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর আগের মতো ০ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে ৫ বছরের জন্য তা বলবৎ রাখা হবে।
১২ শতাংশ বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে আমরা আরও বেশি করপোরেট কর দিই। সরকার উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে অগ্রিম কর আদায় করে, যদিও সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যায় না। বর্তমানে আমাদের রপ্তানির বিপরীতে ১ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হচ্ছে। শুরুতে এটি ০ দশমিক ২৫ শতাংশ ছিল, তারপর ০ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়। এখান থেকে আবার ০ দশমিক ৬০ শতাংশ করা হয়। তার পর এক লাফে তা ১ শতাংশ করা হয়, যা শিল্পের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
আমাদের শিল্প, কটন-নির্ভরতাতা রয়ে গেছে। অথচ টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাক হিসেবে বৈশ্বিক পোশাক বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে নন-কটন পণ্যের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমানে বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যের ৫২ শতাংশ পণ্য নন-কটন। আমাদের নন-কটন পোশাকের রপ্তানির মাত্র ২৬ শতাংশ। নন-কটন পণ্যে আমাদের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর চেষ্টা অব্যাহত। সরকারের নীতি-সহায়তা এ চেষ্টাকে ত্বরান্বিত করবে। এ খাতে বিনিয়োগ ও রপ্তানি উৎসাহিত করতে এবং প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে বাজেটে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর বিশেষ প্রণোদনা থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। সংশ্লিষ্ট সেবা খাতে ব্যাপক সুযোগ তৈরি হবে। সর্বোপরি সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়বে।
বিজিএমইএ পরবর্তী প্রজন্মকে একটি পরিচ্ছন্ন পৃথিবী উপহার দিতে ফোর আর– রিইউজ, রিডিউস, রিসাইকেল, রিকভার ধারণার বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করছে। আমাদের কারখানাগুলো নতুন নতুন টেকনোলজি ব্যবহার ও প্রসেস আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে অপচয় কমিয়ে আনছে। প্রতিবছর টেক্সটাইল ও পোশাক খাত থেকে প্রায় ৫ লাখ টন ঝুট তৈরি হয়। এর একটি অংশ আমরা রপ্তানি করে থাকি, যার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়। ঝুটগুলো রিসাইকেল করলে আমরা প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন করতে পারব, যা আমাদের দেশজ প্রবৃদ্ধি আনবে। তাই রিসাইক্লিং শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রক্রিয়া, পণ্য ও সেবাকে শুল্ক ও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা দরকার। বিনিয়োগকারীরা এ খাতে আকৃষ্ট হবেন।
জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির কারণে শ্রমিক ভাইবোন পরিবার-পরিজন নিয়ে দিশেহারা। তাদের জন্য যদি রেশনিং, ফেয়ার শপ করে দেওয়া হয়, কিছুটা হলেও সে সংকট কমবে। তারা সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করবে।
পোশাক শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় কমানোর জন্য প্রত্যাশিত পদক্ষেপ হতে পারে– ১. শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের বিভিন্ন পণ্য ও সেবাকে শতভাগ ভ্যাটমুক্ত করা। ২. কারখানাকে আধুনিক, নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত, পরিবেশবান্ধব এবং পরিচালনা ব্যয়সাশ্রয়ী করতে তালিকার বাইরে থাকা কিছু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি ও উপকরণ শুল্কমুক্ত/রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন দেওয়া। ৩. পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য সোলার পিভি সিস্টেমের সব সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক রেয়াত প্রদান।
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আরও সহজ না হলে আমরা ক্রেতা হারাব। কারণ এ ব্যবসা ফ্যাশন ও টাইম বেজড। এক দিন দেরি হলে সমস্যায় পড়তে হয়। দুই দিন দেরি হলে অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। আমদানি করা মাল দ্রুত খালাস ও রপ্তানির সময় কমাতে নিয়মকানুনের সহজীকরণ জরুরি। বন্ড ব্যবস্থাপনায় আমদানি পণ্যের চালান খালাসের সময় জটিলতা নিরসনে এইচএস কোড সহজ করা দরকার।
মো. মহিউদ্দিন রুবেল: বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক; ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক