তৈরি পোশাক খাতের পর বাংলাদেশে রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস চামড়া। বছরে এ খাতের রপ্তানি ১২০ থেকে ১৬০ কোটি ডলার। যথাযথ সহায়তা পেলে রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার হতে পারে।
রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের কৌশল নির্ধারণ: এলডিসি-পরবর্তী সময়ে টেকসই রপ্তানি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ খাতের উদ্যোক্তারা এ কথা বলেন। 
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম এবং এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, এ খাতের সম্ভাবনাকে এখনও কাজে লাগানো যায়নি। বৈশ্বিক চামড়া শিল্পে বাংলাদেশের অংশ ১ শতাংশের কম। এলডিসি-পরবর্তী সময়ে এ খাতের রপ্তানিতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ সুরক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, নতুন পণ্য উদ্ভাবনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি খাতের সহযোগিতার ওপর জোর দিতে হবে। 
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, চামড়া শিল্পের নানা প্রতিকূলতা নিরসনে সহায়ক নীতি ও পরিবেশ প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে এ খাতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। চামড়া শিল্পের অংশীজনের সমন্বয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় একটি বিস্তৃত ইকো-সিস্টেম প্রবর্তনের উদোগ নিয়েছে।  
বিসিক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, চামড়া খাতে সিইটিপির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাভারে স্থাপিত সিইটিপির ক্যাপাসিটি বর্তমানে ১৪ হাজার কিউবিক মিটার এবং পিকসিজনে (কোরবানির সময়) এ খাতে চাহিদা থাকে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার কিউবিক মিটার। সিইটিপির সক্ষমতা ২০ থেকে ২৫ হাজার কিউবিক মিটারে উন্নীতকরণে একটি টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ইটিপি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আরও ৮ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে। 
এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, বহির্বিশ্বে এ শিল্পের ইমেজ সংকট রয়েছে। সেখান থেকে বের হতে হবে। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেট না থাকার কারণে বৈশ্বিক বিনিয়োগ যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি পণ্যের ভালো মূল্য প্রাপ্তি থেকে উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। 
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পনগরী হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা হলেও সিইটিপি পুরোপুরি চালু করা যায়নি, ফলে এ খাতের কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এলডব্লিউজির মতো আন্তর্জাতিক সনদ না থাকায় বৈশ্বিক বাজার বাংলাদেশ প্রতিযোগী হয়ে উঠছে না এবং এ খাতের উৎপাদিত পণ্যের ভালো মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 
তিনি বলেন, চামড়া খাতের রুগ্‌ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যারা এ খাত থেকে বের হতে আগ্রহী, তাদের প্রস্থানের সহজ সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, যাতে বিদ্যমান উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ প্রাপ্তি সহজতর হয়। চামড়া শিল্পের বার্ষিক রপ্তানি ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে তৈরি পোশাক খাতের মতো আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি-সহায়তা প্রদান করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতে বার্ষিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সম্ভব। ২০৩৫ সালে যা ২১০ বিলিয়নেও উন্নীত হতে পারে। চামড়া খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ক্লাইমেট ফাইন্যান্স ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তিতে সরকারকে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র রহম ন স ইট প

এছাড়াও পড়ুন:

সহায়তা পেলে চামড়া রপ্তানি ৫শ কোটি ডলার হতে পারে

তৈরি পোশাক খাতের পর বাংলাদেশে রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস চামড়া। বছরে এ খাতের রপ্তানি ১২০ থেকে ১৬০ কোটি ডলার। যথাযথ সহায়তা পেলে রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার হতে পারে।
রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের কৌশল নির্ধারণ: এলডিসি-পরবর্তী সময়ে টেকসই রপ্তানি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ খাতের উদ্যোক্তারা এ কথা বলেন। 
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম এবং এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, এ খাতের সম্ভাবনাকে এখনও কাজে লাগানো যায়নি। বৈশ্বিক চামড়া শিল্পে বাংলাদেশের অংশ ১ শতাংশের কম। এলডিসি-পরবর্তী সময়ে এ খাতের রপ্তানিতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ সুরক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, নতুন পণ্য উদ্ভাবনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি খাতের সহযোগিতার ওপর জোর দিতে হবে। 
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, চামড়া শিল্পের নানা প্রতিকূলতা নিরসনে সহায়ক নীতি ও পরিবেশ প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে এ খাতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। চামড়া শিল্পের অংশীজনের সমন্বয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় একটি বিস্তৃত ইকো-সিস্টেম প্রবর্তনের উদোগ নিয়েছে।  
বিসিক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, চামড়া খাতে সিইটিপির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাভারে স্থাপিত সিইটিপির ক্যাপাসিটি বর্তমানে ১৪ হাজার কিউবিক মিটার এবং পিকসিজনে (কোরবানির সময়) এ খাতে চাহিদা থাকে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার কিউবিক মিটার। সিইটিপির সক্ষমতা ২০ থেকে ২৫ হাজার কিউবিক মিটারে উন্নীতকরণে একটি টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ইটিপি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আরও ৮ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে। 
এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, বহির্বিশ্বে এ শিল্পের ইমেজ সংকট রয়েছে। সেখান থেকে বের হতে হবে। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেট না থাকার কারণে বৈশ্বিক বিনিয়োগ যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি পণ্যের ভালো মূল্য প্রাপ্তি থেকে উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। 
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পনগরী হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা হলেও সিইটিপি পুরোপুরি চালু করা যায়নি, ফলে এ খাতের কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এলডব্লিউজির মতো আন্তর্জাতিক সনদ না থাকায় বৈশ্বিক বাজার বাংলাদেশ প্রতিযোগী হয়ে উঠছে না এবং এ খাতের উৎপাদিত পণ্যের ভালো মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 
তিনি বলেন, চামড়া খাতের রুগ্‌ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যারা এ খাত থেকে বের হতে আগ্রহী, তাদের প্রস্থানের সহজ সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, যাতে বিদ্যমান উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ প্রাপ্তি সহজতর হয়। চামড়া শিল্পের বার্ষিক রপ্তানি ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে তৈরি পোশাক খাতের মতো আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি-সহায়তা প্রদান করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতে বার্ষিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সম্ভব। ২০৩৫ সালে যা ২১০ বিলিয়নেও উন্নীত হতে পারে। চামড়া খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ক্লাইমেট ফাইন্যান্স ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তিতে সরকারকে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ