সহায়তা পেলে চামড়া রপ্তানি ৫শ কোটি ডলার হতে পারে
Published: 25th, May 2025 GMT
তৈরি পোশাক খাতের পর বাংলাদেশে রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস চামড়া। বছরে এ খাতের রপ্তানি ১২০ থেকে ১৬০ কোটি ডলার। যথাযথ সহায়তা পেলে রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার হতে পারে।
রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের কৌশল নির্ধারণ: এলডিসি-পরবর্তী সময়ে টেকসই রপ্তানি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ খাতের উদ্যোক্তারা এ কথা বলেন।
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম এবং এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, এ খাতের সম্ভাবনাকে এখনও কাজে লাগানো যায়নি। বৈশ্বিক চামড়া শিল্পে বাংলাদেশের অংশ ১ শতাংশের কম। এলডিসি-পরবর্তী সময়ে এ খাতের রপ্তানিতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ সুরক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, নতুন পণ্য উদ্ভাবনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি খাতের সহযোগিতার ওপর জোর দিতে হবে।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, চামড়া শিল্পের নানা প্রতিকূলতা নিরসনে সহায়ক নীতি ও পরিবেশ প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে এ খাতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। চামড়া শিল্পের অংশীজনের সমন্বয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় একটি বিস্তৃত ইকো-সিস্টেম প্রবর্তনের উদোগ নিয়েছে।
বিসিক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, চামড়া খাতে সিইটিপির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাভারে স্থাপিত সিইটিপির ক্যাপাসিটি বর্তমানে ১৪ হাজার কিউবিক মিটার এবং পিকসিজনে (কোরবানির সময়) এ খাতে চাহিদা থাকে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার কিউবিক মিটার। সিইটিপির সক্ষমতা ২০ থেকে ২৫ হাজার কিউবিক মিটারে উন্নীতকরণে একটি টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ইটিপি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আরও ৮ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।
এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, বহির্বিশ্বে এ শিল্পের ইমেজ সংকট রয়েছে। সেখান থেকে বের হতে হবে। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেট না থাকার কারণে বৈশ্বিক বিনিয়োগ যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি পণ্যের ভালো মূল্য প্রাপ্তি থেকে উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পনগরী হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা হলেও সিইটিপি পুরোপুরি চালু করা যায়নি, ফলে এ খাতের কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এলডব্লিউজির মতো আন্তর্জাতিক সনদ না থাকায় বৈশ্বিক বাজার বাংলাদেশ প্রতিযোগী হয়ে উঠছে না এবং এ খাতের উৎপাদিত পণ্যের ভালো মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, চামড়া খাতের রুগ্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যারা এ খাত থেকে বের হতে আগ্রহী, তাদের প্রস্থানের সহজ সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, যাতে বিদ্যমান উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ প্রাপ্তি সহজতর হয়। চামড়া শিল্পের বার্ষিক রপ্তানি ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে তৈরি পোশাক খাতের মতো আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি-সহায়তা প্রদান করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতে বার্ষিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সম্ভব। ২০৩৫ সালে যা ২১০ বিলিয়নেও উন্নীত হতে পারে। চামড়া খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ক্লাইমেট ফাইন্যান্স ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তিতে সরকারকে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মিথিলার না বলা কথা
বহু পরিচয়ে তিনি আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান–অভিনেত্রী, গায়ক, মডেল, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, মা। একেকটি পরিচয়ের ছায়া পেরিয়ে যে কাহিনি তাঁর জীবনগাথার অন্তরালে জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠে, তা হলো–একজন নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার অদম্য সংগ্রাম। তিনি রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। বাংলাদেশের বিনোদন জগতে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে রেখেছেন।
মিথিলার পরিচয় শুধু শোবিজ তারকা নন বরং নারীর প্রেরণার প্রতীকও। তিনি জানেন কীভাবে ব্যক্তিগত ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়েও নিজের স্বপ্নগুলো আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে হয়। যেমন গানে, যেমন পর্দায়, তেমনই বাস্তব জীবনের দৃঢ়তায়।
সাম্প্রতিক সময়ে যখন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জনমনে কৌতূহল তুঙ্গে, তখন মিথিলা নীরবে উচ্চারণ করেছেন অন্য এক বার্তা–নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার। তাঁর নিজের কথাতেই উঠে এসেছে জীবনের কঠিন অধ্যায়গুলো। ২৩ বছর বয়সে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, অল্প বয়সেই মা হয়ে ওঠা, স্বপ্নের সংসার ভেঙে যাওয়া, নতুন করে শুরু করার সংগ্রাম–সবই যেন তাঁকে তৈরি করেছে এক নতুন রূপে।
মিথিলা বলেন, ‘২৩ বছর বয়স থেকে আমি আমার জীবনটাকে অন্যরকম ভাবে দেখে এসেছিলাম। হঠাৎ করে সেটি পাল্টে গেল... মেয়েদের নিজেদের কোনো আসল জায়গা থাকে না। নয় শ্বশুরবাড়ি, নয় বাপের বাড়ি। এখন এত বছর পর আমার নিজের একটি জায়গা আছে। এর কৃতিত্ব কিন্তু সম্পূর্ণ আমার।’
এই কৃতিত্ব কেবল কথায় নয়, কর্মেও ধরা পড়ে। ইউনিসেফ, ব্র্যাক কিংবা ইউনেস্কোর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় তাঁর কাজ, তাঁর গবেষণা, তাঁর শিশু মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা, এমনকি পিএইচডি পর্যায়ের একাডেমিক পথচলা–সব মিলিয়ে তিনি আলাদা।
অভিনয় থেকেও তিনি কখনও দূরে যাননি। ফিচার ফিল্ম থেকে নাটক, আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট থেকে সীমান্ত পেরোনো সংলাপ–সবখানেই তাঁর সরব উপস্থিতি।
তবে এই আলোকিত পথচলা খুব সহজ ছিল না। বিচ্ছেদের পর জীবনের দায়ভার একাই নিতে হয়েছিল তাঁকে। আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না, ছিল অনিশ্চয়তা। একসময় নিজের ও সন্তানের জন্য একটি গাড়িও ছিল না তাঁর হাতে। অথচ অভ্যাস ছিল ভিন্ন। তখন বুঝেছিলেন, একজন নারীর নিজের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কতটা জরুরি। তাঁর ভাষায়, ‘আমার একটা গাড়িও ছিল না। আমি গাড়িতে চলাফেরায় অভ্যস্ত ছিলাম, আমার বাচ্চাও তাই ছিল। আমি তখন বুঝে গিয়েছিলাম, জীবনে নিজের জায়গা থাকাটা খুব দরকার। মেয়েদের জন্য সব থেকে আগে দরকার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা না থাকলে মেয়েরা অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না।’
আজকের মিথিলা সেই সব বাধা টপকে দাঁড়িয়ে আছেন অনন্য উচ্চতায়। একদিকে সংসার সামলাচ্ছেন, অন্যদিকে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। একই সঙ্গে মাতৃত্ব, ক্যারিয়ার, পড়াশোনা আর সমাজ নিয়ে সচেতন ভাবনা–সবকিছুই নিজের মতো করে সামলে নিচ্ছেন।
তাঁকে ঘিরে মানুষের কৌতূহল যতটা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে ঘিরে, তার চেয়েও বেশি আলোচনার দাবিদার তাঁর কর্মজীবন। কারণ, আজকের এই ‘মিথিলা’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে শ্রম, সাহস, আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকার এক অসামান্য যাত্রা। তবে এই মিথিলারও গুঞ্জন পিছু ছাড়ছে না। এসব জল্পনা বা গুঞ্জন মোটেই কানে নেন না মিথিলা।