রূপগঞ্জে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মসজিদের নামে জোরপূর্বক সাইনবোর্ড স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে কথিত এক যুবদল নেতা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। শনিবার (১২ জুলাই) সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাড়িয়াছনি বাঘেরআগা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

জমির মালিক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম জানান, “১৯৯১ সালের মার্চ মাসে দলিল নম্বর ২৪১২ অনুযায়ী স্থানীয় গোয়ালপাড়া এলাকার আলাতুন বেগমের কাছ থেকে আমরা—আয়েব আলী, ইয়াদ আলী ও আমি ৪১ শতক জমি ক্রয় করি।

এরপর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু একই বছরের নভেম্বর মাসে ওই জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। স্থানীয় দুটি মসজিদের নামে ওয়াকফ দাবি করে জমির মালিকানা দাবি করে একটি পক্ষ।”

এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে এবং আদালত ওই জমির ওপর শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শনিবার সকাল ১০টার দিকে বাঘের আগা জামে মসজিদের সভাপতি ও কথিত যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম মাইকিং করে লোক জড়ো করেন এবং জমিতে জোরপূর্বক মসজিদের সাইনবোর্ড স্থাপন করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় দখলে থাকা দোকানপাটের সামনেও সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এবং বাধা দিলে কয়েকজনকে মারধর ও মোবাইল ফোন ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে বাঘের আগা জামে মসজিদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ওই জমি আমাদের গ্রামের দুটি মসজিদের নামে ওয়াকফকৃত। দীর্ঘদিন আমরা দখলে ছিলাম। তাই মসজিদের জায়গা পুনর্দখল করতে গিয়ে সাইনবোর্ড স্থাপন করেছি।”

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, “আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের চেষ্টা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জমির দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে।

কেউ আদালতের আদেশ অমান্য করে থাকলে তা আদালতেই নিষ্পত্তি হবে। পাশাপাশি যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সেজন্য এলাকায় পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ মসজ দ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ মসজ দ র ন ম র পগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

পুতিনকে নিয়ে ‘হতাশ’ ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার আবারও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দুই দিনের মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয় বৈঠক। তাঁদের এসব বৈঠকের মূলে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। আগের দিন মালয়েশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সম্মেলনের ফাঁকে লাভরভের সঙ্গে ৫০ মিনিট বৈঠক হয় রুবিওর।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন। কিন্তু চার মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আগের মতোই দূরের বিষয় বলে মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে রাশিয়া সম্প্রতি ইউক্রেনের ওপর ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার দিক থেকে আরও নমনীয়তা না দেখানোয় ট্রাম্প ‘হতাশ ও বিরক্ত’।

তাহলে কি যুদ্ধের ব্যাপারে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে আর এ নিয়ে তাঁর পরবর্তী বিকল্পগুলোই বা কী?

রাশিয়ার বিষয়ে কি ট্রাম্পের অবস্থান বদলেছে

এমন সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এসব কথা বললেন, যখন প্রকাশ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা বাড়িয়েছেন ট্রাম্প। এর আগে ইউক্রেন শান্তি চায় না বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিন আমাদের উদ্দেশে অনেক আজেবাজে কথা বলেছেন। তিনি সব সময় খুব ভালো ব্যবহার করেন, কিন্তু দেখা যায় শেষ পর্যন্ত সেগুলো অর্থহীন।’

গত ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার প্রথম মাসগুলোর পর সর্বশেষ মে মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার আয়োজন করে ওয়াশিংটন।

কিন্তু পুতিন সাময়িক অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিলেও ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। ইউক্রেন অবশ্য এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। রাশিয়ার যুক্তি, ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে সেনাদের নতুন উদ্যমে মোতায়েন এবং নিজেদের আরও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করতে পারে।

গত সপ্তাহে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি পুতিনের প্রতি তাঁর হতাশা থেকে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের বলব না। আমরা কি একটু চমক চাই না?’

অবশ্য ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত—এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। লন্ডনভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের সিনিয়র কনসালটিং ফেলো কিয়ার জাইলস আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের পরিবর্তনশীল অবস্থান নিয়ে মন্তব্যে ভরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই, কোনো কিছু একেবারে বদলে গেছে।’

কিয়ার জাইলস বলেন, ‘সারা বিশ্বে আশাবাদের একটি ঢেউ বইছে যে এটি অবশেষে মার্কিন নীতির পরিবর্তন ঘটাতে পারে। কিন্তু এর আগের প্রতিটি ঘটনাতেই এমন কিছু ঘটেনি।’

প্রকৃতপক্ষে রুবিও ও লাভরভের মধ্যে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর উভয় পক্ষই ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা কূটনৈতিকভাবে যুক্ত থাকতে ইচ্ছুক।

ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ

জুলাই মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রশাসন কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ ‘স্থগিত’ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। এক সপ্তাহ পরে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। ৮ জুলাই তিনি বলেন, ‘আমরা আরও কিছু অস্ত্র পাঠাতে যাচ্ছি। আমাদের তা করতেই হবে। তাদের (ইউক্রেন) নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হতে হবে। তারা এখন খুব কঠিন হামলার শিকার হচ্ছে।’

মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসিকে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, এ অস্ত্রগুলো ন্যাটোর কাছে বিক্রি করা হবে। ন্যাটো এর সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবে। ন্যাটো এরপর সেগুলো ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করবে।

ন্যাটো মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি সামরিক জোট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা ন্যাটোতে অস্ত্র পাঠাচ্ছি। ন্যাটো সেই অস্ত্রের মূল্য পরিশোধ করছে, শতভাগ মূল্য।’ যুক্তরাষ্ট্র এই জোটকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে বলেও জানান তিনি।

ট্রাম্প বলেন, জুনে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে এই চুক্তি হয়েছিল।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক তিক্ত বৈঠকের পর ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সাহায্য পাঠানো স্থগিত করেছিলেন। জেলেনস্কিকে অভিযুক্ত করে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি যুদ্ধে ৩৫ হাজার কোটি ডলার খরচ করার জন্য প্ররোচিত করেছেন, যা জেতা সম্ভব নয়।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও

সম্পর্কিত নিবন্ধ