পিআর নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন, সমর্থন জামায়াতের
Published: 12th, July 2025 GMT
সংবিধান এবং সংস্কারের ‘সুরক্ষায়’ ভোটের অনুপাতে আসন বন্টন (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচন নির্বাচন চায় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। এতে সমর্থন জানিয়ে জামায়াতে ইসলামী বলছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। সংস্কারে ঐকমত্যে না এসে বিএনপিই নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে এনসিপি, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল বলছে- সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বন্টন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইসলামী আন্দোলনের গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেছেন দলগুলোর নেতারা। ‘গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি’ শীর্ষক এ আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, পিআর পদ্ধতি হচ্ছে ‘মাদার অব অল রিফর্ম’।
পিআর পদ্ধতির সমালোচনার জবাব
পিআর পদ্ধতিতে স্থিতিশীল সরকার গঠিত হবে না- বিএনপির এ সমালোচনার জবাবে চরমোনাই পীর বলেছেন, ঘন ঘন সরকার বদল আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীল হওয়া এক কথা নয়। ইতালিতে ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হলেও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশ। আবার বাংলাদেশে ১৯৮১ সাল থেকেই একই সরকার দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও স্থিতিশীলতা আসেনি। জোটের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশেও সরকারের স্থিতিশীল নিয়ে দুঃশ্চিন্তা নেই।
পিআর পদ্ধতিতে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে না- এ সমালোচনার জবাবে ইসলামী আন্দোলনে আমির বলেছেন, জাতিগত, ভাষাগত বিবেচনায় বাংলাদেশ একক ধারার দেশ। স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি মুখ্য, যেসব ভাষা, নৃতত্ত্ব, সংস্কৃতি ও ধর্মের বিভাজন রয়েছে। তারপরও পিআর পদ্ধতিতেও ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব, তুরস্কের মতো বিভাগভিত্তিক নির্বাচনের মাধ্যমে।
পিআর পদ্ধতিতে সংসদীয় আসন থেকে এমপি নির্বাচিত না হওয়া, জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হবে- এ সমালোচনার জবাবে রেজাউল করীম বলেছেন, এলাকার উন্নয়ন সংসদ সদস্যদের কাজ নয়। এমপিরা বৈষম্যহীন নীতি প্রণয়ন করলে, দেশে সর্বত্র উন্নয়ন হবে। আর উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। পিআরে এমপি প্রার্থী না থাকায়, কেউ ভোট ডাকাতির জন্য মরিয়া হবে না। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
পিআর পদ্ধতিকে সংস্কারের সুরক্ষার একমাত্র উপায় আখ্যা দিয়ে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে চরমোনাই পীর বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি মর্যাদা নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। ফলে এখন চাপে পড়ে সংস্কারে রাজি হলেও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সংস্কার রাখবে কিনা অনিশ্চয়তা আছে। ৪০ থেকে ৪৯ শতাংশ ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়ে একক কর্তৃত্বে সংবিধান কাটাছেঁড়ারও নজির রয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচনেও একই পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সংস্কার ভেস্তে যেতে পারে।
সংস্কার না হলে জামায়াত নির্বাচনে যাবে না
বিএনপি নয়, অন্যান্য দলই সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে বলে দাবি করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, একটি দলের কারণে সংস্কারে ঐকমত্য আটকে যাচ্ছে। ঐকমত্য না হলে কমিশনের উচিত গণভোটে যাওয়া। জনগণ যদি আমাদের অবস্থানকে গ্রহণ করে, তবে পিআর হবে। গ্রহণ না করলে আরেকটি দল যা বলছে, তা হবে।
পিআরে একমত দলগুলোকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। সংস্কার ছাড়া জামায়াত নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে বিএনপির উদ্দেশ্যে গোলাম পরওয়ার বলেছেন.
উচ্চকক্ষে পিআর হলে সংবিধানে নয়-ছয় হবে না
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমানে যে নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু আছে, তাতে দলবাজি হয়। উচ্চকক্ষে পিআর হলে সংবিধানে নয়-ছয় করে হাত দেওয়া বন্ধ হবে।
গোলটেবিলে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণ অধিকার পরিষদের হাবিবুর রহমান, ইসলামি ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত জ ম য় ত ইসল ম র বল ছ ন ব এনপ র র রহম ন ঐকমত য র জন ত সরক র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্রপতি ও বিচার বিভাগকে বাইরে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় গণসংহতি আন্দোলন
রাষ্ট্রপতি ও বিচার বিভাগকে বাইরে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও বিচার বিভাগকে যুক্ত করার কারণে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন জোনায়েদ সাকি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে এখানে যুক্ত করার কারণে কেবল বিচার বিভাগ দলীয়করণ হয়নি, পুরো বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার মধ্যে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছিল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতিকে শেষ বিকল্প হিসেবে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে রাখা হয়েছিল। এর ব্যবহারও তাঁরা দেখেছেন। সে ব্যবহারে রাষ্ট্রপ্রধানকেও একটা বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে আরেকটা গুরুতর সংকট তৈরি করা হয়। এ কারণে তাঁরা তাঁদের দিক থেকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ও বিচার বিভাগ—এই দুই প্রতিষ্ঠানকে বাইরে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জায়গায় যাওয়া দরকার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার মূলত নির্বাচন পরিচালনা করবে বলে উল্লেখ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী। তিনি বলেন, ‘আর এই নির্বাচনব্যবস্থাটা রাজনৈতিক বিষয়। কাজেই এই রাজনৈতিক বিষয়ের ফয়সালা রাজনৈতিক প্রতিনিধি, অর্থাৎ জনপ্রতিনিধিদের হাতে থাকা দরকার। নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সেখানকার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন, সে বিষয়টি তারা নির্ধারণ করবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, এখন একটি সাধারণ ঐকমত্য তৈরি হয়েছে যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সংস্কার প্রয়োজন। বেশির ভাগ দল একমত যে প্রধান বিচারপতিকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া উচিত। তবে মতানৈক্য রয়েছে এই নিয়ে যে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকেই সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে, নাকি আপিল বিভাগের দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির মধ্যে একজনকে বাছাই করার সুযোগ থাকবে রাষ্ট্রপতির।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলন কী প্রস্তাব দিয়েছে, তা উল্লেখ করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, তাঁরা প্রস্তাব দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি যেন আপিল বিভাগের দুজন শীর্ষস্থানীয় বিচারপতির মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে নিয়োগের এখতিয়ার পান। এটি রাষ্ট্রের ক্ষমতার কাঠামোয় ভারসাম্য নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। গত ১৫ বছরে যেভাবে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে, সেই বাস্তবতায় প্রস্তাবটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।