সংবিধান এবং সংস্কারের ‘সুরক্ষায়’ ভোটের অনুপাতে আসন বন্টন (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচন নির্বাচন চায় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। এতে সমর্থন জানিয়ে জামায়াতে ইসলামী বলছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। সংস্কারে ঐকমত্যে না এসে বিএনপিই নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে এনসিপি, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল বলছে- সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বন্টন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। 

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইসলামী আন্দোলনের গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেছেন দলগুলোর নেতারা। ‘গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি’ শীর্ষক এ আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, পিআর পদ্ধতি হচ্ছে ‘মাদার অব অল রিফর্ম’।
 
পিআর পদ্ধতির সমালোচনার জবাব

পিআর পদ্ধতিতে স্থিতিশীল সরকার গঠিত হবে না- বিএনপির এ সমালোচনার জবাবে চরমোনাই পীর বলেছেন, ঘন ঘন সরকার বদল আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীল হওয়া এক কথা নয়। ইতালিতে ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হলেও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশ। আবার বাংলাদেশে ১৯৮১ সাল থেকেই একই সরকার দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও স্থিতিশীলতা আসেনি। জোটের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশেও সরকারের স্থিতিশীল নিয়ে দুঃশ্চিন্তা নেই।
 
পিআর পদ্ধতিতে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে না- এ সমালোচনার জবাবে ইসলামী আন্দোলনে আমির বলেছেন, জাতিগত, ভাষাগত বিবেচনায় বাংলাদেশ একক ধারার দেশ। স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি মুখ্য, যেসব ভাষা, নৃতত্ত্ব, সংস্কৃতি ও ধর্মের বিভাজন রয়েছে। তারপরও পিআর পদ্ধতিতেও ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব, তুরস্কের মতো বিভাগভিত্তিক নির্বাচনের মাধ্যমে।
 
পিআর পদ্ধতিতে সংসদীয় আসন থেকে এমপি নির্বাচিত না হওয়া, জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হবে- এ সমালোচনার জবাবে রেজাউল করীম বলেছেন, এলাকার উন্নয়ন সংসদ সদস্যদের কাজ নয়। এমপিরা বৈষম্যহীন নীতি প্রণয়ন করলে, দেশে সর্বত্র উন্নয়ন হবে। আর উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। পিআরে এমপি প্রার্থী না থাকায়, কেউ ভোট ডাকাতির জন্য মরিয়া হবে না। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। 

পিআর পদ্ধতিকে সংস্কারের সুরক্ষার একমাত্র উপায় আখ্যা দিয়ে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে চরমোনাই পীর বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি মর্যাদা নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। ফলে এখন চাপে পড়ে সংস্কারে রাজি হলেও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সংস্কার রাখবে কিনা অনিশ্চয়তা আছে। ৪০ থেকে ৪৯ শতাংশ ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়ে একক কর্তৃত্বে সংবিধান কাটাছেঁড়ারও নজির রয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচনেও একই পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সংস্কার ভেস্তে যেতে পারে।
 
সংস্কার না হলে জামায়াত নির্বাচনে যাবে না

বিএনপি নয়, অন্যান্য দলই সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে বলে দাবি করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, একটি দলের কারণে সংস্কারে ঐকমত্য আটকে যাচ্ছে। ঐকমত্য না হলে কমিশনের উচিত গণভোটে যাওয়া। জনগণ যদি আমাদের অবস্থানকে গ্রহণ করে, তবে পিআর হবে। গ্রহণ না করলে আরেকটি দল যা বলছে, তা হবে।

পিআরে একমত দলগুলোকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। সংস্কার ছাড়া জামায়াত নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে বিএনপির উদ্দেশ্যে গোলাম পরওয়ার বলেছেন.

‘আপনারা বলছেন আমরা নির্বাচন চাচ্ছি না, পিআরের কথা বলে নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছি। আমরা বলতে পারি, আপনারা তো সংস্কার চাচ্ছেন না। আর সংস্কার না হলে তো আমরা নির্বাচনে যাব না। ঐকমত্যে না এসে বিএনপিই নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছে।

উচ্চকক্ষে পিআর হলে সংবিধানে নয়-ছয় হবে না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমানে যে নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু আছে, তাতে দলবাজি হয়। উচ্চকক্ষে পিআর হলে সংবিধানে নয়-ছয় করে হাত দেওয়া বন্ধ হবে।
 
গোলটেবিলে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণ অধিকার পরিষদের হাবিবুর রহমান, ইসলামি ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত জ ম য় ত ইসল ম র বল ছ ন ব এনপ র র রহম ন ঐকমত য র জন ত সরক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সিদ্ধান্ত এখনো বিবেচনাধীন: আখতার

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করবে কি করবে না—সেটা এখনো বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়গুলো জাতির কাছে অস্পষ্ট থাকে, তাহলে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা যেটা অর্জন করতে চাই; সেটাকে অর্জন হিসেবে সামনের দিকে প্রাপ্ত হওয়া অনিশ্চিত থেকে যাবে। এ কারণেই আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব কি করব না—সে বিষয়গুলো বিবেচনাধীন রেখেছি।’

জুলাই জাতীয় সনদে সই করার ক্ষেত্রে এনসিপির কিছু শর্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সরকার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতির সামনে স্পষ্ট পথনকশা উপস্থাপন করবে; আদেশের বিষয়ে কী হবে, গণভোটের প্রশ্ন কী হবে এবং সামনের সংবিধানে এ বিষয়গুলো কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, সে বিষয়গুলো খোলাসা করার দাবি জানিয়েছি।’

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) মতো অনেকগুলো ইস্যু রয়েছে, সেই নোট অব ডিসেন্টগুলোকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, নোট অব ডিসেন্টের পরিণতি কী হবে, সেগুলোকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে; সে বিষয়গুলো খোলাসা করা হয়নি। একই সঙ্গে যে আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে, সে আদেশ কীভাবে হবে, তা এখনো এনসিপির কাছে স্পষ্ট নয়।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশকে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ বা ‘সংবিধান সংস্কার আদেশ’ নামে জারির প্রস্তাব করেছে এনসিপি। এ কথা জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, সে আদেশ যেন সরকারপ্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জারি করা আদেশ হয়, সে দাবি তাঁরা জানিয়েছেন। গণভোটের প্রশ্ন কেমন হবে, তা এখনো এনসিপির কাছে স্পষ্ট নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আখতার হোসেন বলেন, কীভাবে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনগুলোকে সংস্কারকৃত সংবিধানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে—সে বিষয়গুলো খোলাসা করেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া দরকার বলে তাঁরা মনে করেন।

আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দিন ধার্য করা হয়েছে। শুক্রবারের আগে মাত্র এক দিনে এনসিপির এসব দাবি পূরণ করা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন বলেন, ‘সময় যদিও অল্প, কিন্তু আমরা মনে করি, এটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ব্যাপার।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুতিনের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে কী কথা হলো আল-শারার
  • স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশ, তাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বাম জোট
  • সার না পেলে কৃষকদের ডিসি অফিস ঘেরাওয়ের পরামর্শ মির্জা ফখরুলের
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আর গণভোটের রাজনীতি
  • সরকারকে সবাই ব্যস্ত রেখেছে যেন নির্বাচন না হয়: মির্জা ফখরুল
  • আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম
  • আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর করব না: নাহিদ 
  • জুলাই সনদ সই হলে বাস্তবায়নের পথ কতটা মসৃণ
  • জুলাই সনদে সই করার বিষয়ে কোন রাজনৈতিক দল কী বলল
  • এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সিদ্ধান্ত এখনো বিবেচনাধীন: আখতার