নির্বাচনী ভাগ-বাঁটোয়ারায় পুরোনো বন্দোবস্তের সঙ্গে আপস নয়
Published: 12th, July 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের এক বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘এই গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি, এই তরুণ প্রজন্ম কোনো নির্বাচনী ভাগ–বাঁটোয়ারায় বিশ্বাস করে না। কোনো নির্বাচনী ভাগ-বাঁটোয়ারায় তারা পুরোনো বন্দোবস্তের সঙ্গে আপস করবে না।’
আজ শনিবার রাতে বাগেরহাট শহরের রেল রোড এলাকায় আয়োজিত দলের এক সমাবেশে নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন।
প্রসঙ্গত, ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠনের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এনসিপির সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার এবং দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। এর জন্য দরজা খোলা রয়েছে। আপনারা সেই দরজায় এখনো যদি না আসেন, এখনো যদি সংস্কারের পথে না আসেন, পুরোনো বন্দোবস্তকে যদি সমর্থন করেন, চাঁদাবাজ মাফিয়া ও দুর্নীতির রাজনীতিকে যদি টিকিয়ে রাখেন, জনগণ কীভাবে আপনাদের বিরুদ্ধে নামছে, আপনারা কি দেখছেন সেটা? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসমাজ কীভাবে আবার রাজপথে নামছে চাঁদাবাজ–দখলদারদের বিরুদ্ধে, আপনারা দেখে এখনই হুঁশিয়ার হোন।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা গণ–অভ্যুত্থান করেছিলাম স্বৈরাচারী হাসিনার বিরুদ্ধে। আমরা গণ–অভ্যুত্থান করেছিলাম এই মাফিয়া, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ সিস্টেমের বিরুদ্ধে। এই চাঁদাবাজদের আমরা এখনো বিতাড়িত করতে পারিনি বিধায় আমরা আবারও রাজপথে নেমে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আমাদের প্রতি আস্থা রাখুন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই চাঁদাবাজ, দুর্নীতি ও মাফিয়া সিস্টেমকে পরিবর্তন করব অবশ্যই। এটা শহীদদের প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সেই ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে। আমরা কোনো দলের বিরোধিতা করি না, কোনো দলের বিপক্ষে বলি না। আমরা বলি পুরোনো বন্দোবস্তের বিপক্ষে। আমরা বলি পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপক্ষে।.
দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির ১২তম দিনে বাগেরহাটে আসেন এনসিপির নেতারা। বাগেরহাট শহরের এই সমাবেশ শনিবার বিকেলে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পথের বিলম্বের কারণে নেতারা সমাবেশস্থলে আসেন রাত আটটার দিকে। এরপর শুরু হয় সমাবেশ।
পুরান ঢাকায় নৃশংসভাবে ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে সমাবেশে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে আমরা দেশ থেকে তাড়িয়েছি, সোহাগের খুনিদেরও আমরা বাংলাদেশে স্থির হতে দেব না। আমরা সরকারের কাছে বলতে চাই, সংস্কার শুধু নীতিতে হলে হবে না। যাঁরা নীতি প্রয়োগ করেন—আমলা, সচিব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—তাদেরও সংস্কার করতে হবে। এসব স্থানে এখনো আওয়ামী দোসররা ওত পেতে বসে আছে। তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় দাঁড় করাতে হবে।’
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব সামান্তা শারমিন।
‘সূর্যসন্তানদের দেখার জন্য এসেছি’তরুণদের রাজনৈতিক দলের এই সমাবেশে দলটির নেতা–কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের অনেকেই এসেছিলেন। বিকেল থেকে সভাস্থলে অপেক্ষা করছিলেন বাগেরহাট শহরের দশানী এলাকার আমিনুর রহমান (৫১)। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে সেভাবে কোনো দল করি না। যারা হাসিনার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল, সেই নেতৃত্বকে দেখার জন্যই এখানে বসে আছি। আমার মতো আরও অনেকেই এখানে এসেছেন।’
তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে সমাবেশে এসেছিলেন তাহুরুন নেছা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে আমার সন্তান ছিল খুব ছোট। বারবার রাস্তায় নামতে গিয়েও আটকে গেছি শুধু এটা ভেবে যে আমি কি আর ফিরতে পারব? আমার বাচ্চাটা কি আর খাবার পাবে? ঘরে বসে বসে শুধু কেঁদেছি। নিজের বাচ্চা বুকে নিয়ে অন্য সন্তান হারানো পিতা-মাতার কথা ভেবে।’ তিনি বলেন, ‘যে সূর্যসন্তানেরা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছেন, নিজের চোখে তাঁদের একবার দেখার জন্য আজ এখানে এসেছি। আমার সন্তানকেও নিয়ে এসেছি তাদের দেখানোর জন্য।’
বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল গাফফার বলেন, ‘গত বছর আন্দোলনে গিয়ে বহু হুমকি পেয়েছি। রাস্তায় পুলিশ তাড়া করেছে। আর এই আন্দোলনের যাঁরা ডাক দিয়েছিলেন, তাঁরা আজ বাগেরহাটে এসেছেন। তাই তাঁদের কথা শুনতে এসেছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট র জন ত ক এনস প র র জন য আম দ র আপন র সদস য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমানী উদ্যানে আবার স্থাপনার পেছনে লক্ষ্য ‘টাকা কামানো’: বাপা
রাজধানীর ঐতিহাসিক ওসমানী উদ্যান উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নেতারা। তাঁদের ভাষায়, পুরান ঢাকার ফুসফুসখ্যাত এই উদ্যানকে ঘিরে চলছে ‘অর্থ কামাইয়ের উন্নয়ন’, যার সঙ্গে জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের ইতিহাস বা চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ওসমানী উদ্যান পরিদর্শন করেন বাপার নেতারা। পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলো বলেন সংগঠনটির নেতারা।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের নেতৃত্বে উদ্যান পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন বাপার সহসভাপতি মহিদুল হক খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা রুহিন হোসেন, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর, ফরিদুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির, নির্বাহী কমিটির সদস্য জাভেদ জাহান, জাতীয় কমিটির সদস্য শেখ আনছার আলী প্রমুখ। তাঁদের সঙ্গে গ্রীন ভয়েসের নেতা–কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সাল থেকে ওসমানী উদ্যান সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ। এই সময়ে উদ্যান উন্নয়নের নামে ব্যয় হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। এখন সেখানে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণে আরও প্রায় ৪৭ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, এই উদ্যানের আইনগত মর্যাদা উপেক্ষা করে বারবার অবকাঠামো নির্মাণই এখন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘উন্নয়ন’ নামে উদ্যানের ভেতরে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে আসলে জনগণের সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘এখানে যেটা করা হইতেছে, এটা টাকা বানানো। এর সঙ্গে জুলাই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রমাণটা হলো, এখানে যে ওয়াটার বডিজ আছে, ওখানে গেলেই দেখা যায়, ওখান থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। এই স্মৃতি করে লাভটা কী? এই প্ল্যানটা আমি স্মৃতিস্তম্ভ বলি না, এটা স্রেফ মানি মেকিং প্রজেক্ট। আজকে যারা এগুলা (জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ) করছে, এগুলো কিছু মানি মেকিংয়ের জন্য করছে। এর মধ্যে আমি কোনো সঠিক প্ল্যানও দেখছি।’
ওসমানী উদ্যানকে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেই সরকারই আসুক, তাদের মাথায় থাকে শুধু উন্নয়নের নামে টাকা কামানোর চিন্তা। বহুদিন ধরে উদ্যানটা ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা, জনগণ ঢুকতেই পারে না। এই প্রকল্পে জনগণের টাকা লুটপাট ছাড়া অন্য কোনো কর্মকাণ্ড আমি দেখি না। ওসমানী উদ্যান জনগণের সম্পদ। এই উদ্যান উন্মুক্ত থাকা দরকার। বিশেষ করে মেহনতি, সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার ও বিশ্রামের জায়গা হিসেবে। অথচ আজ সেটাকে দখল করে তথাকথিত উন্নয়ন দেখানো হচ্ছে। আসলে এটা পরিবেশ ধ্বংসেরই আরেক নাম।’
ওসমানী উদ্যান পরিদর্শন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে গিয়ে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষোভের কথা জানান বাপার নেতারা। এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বাপা নেতাদের বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে ওসমানী উদ্যানে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
আরও পড়ুনওসমানী উদ্যান: ঢাকার ‘ফুসফুসে’ আবার স্থাপনা ১১ অক্টোবর ২০২৫