ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে যাচ্ছে জামায়াত
Published: 12th, July 2025 GMT
পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অতীতে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটি যে ‘জাতীয় সমাবেশ’ করতে যাচ্ছে, সেটি জামায়াতের জন্য একটু ভিন্ন বা বিশেষ কিছু বলে দলটির সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসে প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশ হবে। এর আগে জামায়াত কখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলীয়ভাবে সমাবেশ করেনি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যখন তীব্র মতবিরোধ ও বিতর্ক চলছে, সে সময়ে জামায়াত এই সমাবেশ করতে যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দীর এই সমাবেশে জামায়াত স্মরণীয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে।
১৯ জুলাই বেলা ২টায় এই সমাবেশ শুরু হবে। ইতিমধ্যে সমাবেশ বাস্তবায়নে দলের আমিরসহ শীর্ষ নেতাদের তদারকিতে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। জামায়াতের লক্ষ্য, নীরবে বড় ধরনের সমাবেশ করে রাজনীতির ময়দানে আলোড়ন সৃষ্টি করা।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন রাজধানীতে বড় সমাবেশ করে। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন, ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় মহাসমাবেশ করে। বিএনপি নয়াপল্টনে কয়েক দফায় সমাবেশ করে। কিন্তু জামায়াত কারাবন্দী নেতা (বর্তমানে মুক্ত) এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে পুরানা পল্টন মোড়ে একটি সমাবেশ ছাড়া রাজধানীতে বড় কোনো জমায়েত করেনি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এককভাবে জামায়াতে ইসলামী কখনো জনসভা করেনি। এটি হবে আমাদের প্রথম সমাবেশ।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন, তার আগে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচন অনুষ্ঠান ও তার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে জনমত গঠনের লক্ষ্যে এই সমাবেশ হবে।
১৯৪১ সালে পাকিস্তানের লাহোরে প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে একযোগে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলটি নিষিদ্ধ করে তৎকালীন সরকার। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক পর্যায়ে ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালের মে মাসে আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী আবার কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ১৯৮০ সালে প্রথমবারের মতো বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে জামায়াতের সভা হয়। প্রকাশ্যে এটিই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে দলটির প্রথম জনসভা।
জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করার পর গত ৪৫ বছরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী কখনো সমাবেশ করেনি। তবে বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকতে তারা জোটবদ্ধভাবে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। ফলে দলীয়ভাবে আয়োজিত এই সমাবেশকে বিশেষ কিছু এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে জনসমর্থন প্রকাশের ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে। এই সমাবেশ বাস্তবায়নে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে আহ্বায়ক করে কমিটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে একাধিক উপকমিটিও করা হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকায় দলীয় এক অনুষ্ঠানে এই সমাবেশের কথা উল্লেখ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, শহীদের রক্তস্নাত বাংলায় ইসলামের পতাকা উত্তোলন এবং ইসলামি ঐক্যের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সবার চাওয়া-পাওয়া। এই আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ কর্মসূচির বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জাতীয় সমাবেশ হলো তার টার্নিং পয়েন্ট। তার সফল বাস্তবায়নে এখন থেকে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ১৯ জ ল ই ইসল ম র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সব মাধ্যমে কাজ করতে চান জৌপারী
২০১০ সালে ঢাকায় এসেছেন বান্দরবানের মেয়ে জৌপারী লুসাই। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন, ঘুণাক্ষরেও অভিনয়ে আসার কথা ভাবেননি। ২০১২ সালে এনটিভির টেলিফিল্ম শেষ বলে কিছু নেই দিয়ে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান জৌপারী। তখন বিএএফ শাহীন কলেজে পড়তেন। এক বন্ধুর কাছে শুনলেন টেলিফিল্মে এক কিশোরী চরিত্রের জন্য শিল্পী খুঁজছেন নির্মাতা মেজবাউর রহমান। পরে অডিশন দিয়ে টিকে যান।
নিজেকে প্রথমবার ছোট পর্দায় দেখে রীতিমতো আপ্লুত হয়েছিলেন। সেই সময়ের অনুভূতিকে অনেকটা ‘প্রথম প্রেমে পড়ার’ মতো বললেন এই তরুণ অভিনেত্রী। টেলিফিল্মটি প্রচারের পর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছিলেন, যেটি তাঁকে অভিনয়ে অনুপ্রাণিত করেছে।
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ থেকে ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের আলোচিত সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর-এ মিমি চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন জৌপারী। এটি ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘আঁ সার্তে রিগা’ বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খেলনাছবির বিজ্ঞাপন করেছিলাম, সেখানে নির্মাতা সাদ ভাইও ছিলেন।’ খেলনাছবির সূত্র ধরেই সিনেমাটিতে কাজের সুযোগ পান তিনি। ২০১৭ সালে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হন, ২০১৮ সালে শুটিং করেন।
জৌপারী লুসাই বলেন, ‘সিনেমাটি করার আগে অভিনয় নিয়ে খুব একটা বুঝতাম না। সিনেমাটি করার পর অভিনয়কে সিরিয়াসলি নিই। তখন মনে হয়েছিল অভিনয় চালিয়ে যাব। সঙ্গে অভিনয় শিখবও।’
বঙ্গ অরিজিনাল সিরিজ বিএনজি-তে অভিনয় করে তরুণ দর্শকের কাছে পৌঁছেছেন জৌপারী। আরেক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সারভাইভ-এও মূল চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘বিএনজি ও সারভাইভ দুটি কাজের জন্যই খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি। দুটি কাজ দেখে অনেকে আমাকে চিনেছেন।’
প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে কোন কাজটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলবেন? জৌপারী বলেন, ‘আসলে এটা আমার পক্ষে বলা কঠিন। প্রতিটা কাজই মন থেকেই করি। আমি কাজ করে যেতে চাই, কাজটাকে ভালোবাসি।’
এর মাঝে অভিনয়ে নিজেকে শাণিত করতে নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদের কর্মশালায় অংশ নেন জৌপারী। জামিল আহমেদ নির্দেশিত আমি বীরাঙ্গনা বলছি-এ একজন নির্যাতিতা পাহাড়ি নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
‘পারফেক্ট ওয়াইফ’ ইরা
২২ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া চরকির ফ্ল্যাশ ফিকশন পারফেক্ট ওয়াইফ-এ একজন জাপানি তরুণী ইরার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জৌপারী। ফিকশনটি পরিচালনা করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। ফিকশনটি মুক্তির পর ভালো সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে জৌপারী বলেন, ‘আমার পরিচিতদের মধ্যে যাঁরা কাজটা দেখেছেন, তাঁরা সবাই চরিত্রটা পছন্দ করেছেন। অনেকে বলেছেন, তুমি রোবট না মানুষ।’
সেলিমের পরিচালনায় এবারই প্রথম কাজ করেছেন তিনি। কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো। কারণ, উনি আসলে অ্যাক্টিংটাকে দারুণভাবে ডিল করেন। খুবই আরাম করে আমি কাজ করেছি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে পরিচালক অনেক ম্যাটার করে। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ যে রকম আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, যেভাবে ইচ্ছা তুমি করো, ঠিক একইভাবে আমি বলব যে এই চরিত্রটা (ইরা) করতে গিয়ে আমি আমার মনে হয়েছে যে আমি আরও বেশি এনজয় করেছি।’
সব মাধ্যমে কাজ করতে চান
ওটিটি, প্রেক্ষাগৃহের সিনেমা থেকে টিভি নাটক—সব মাধ্যমেই কাজ করেছেন জৌপারী। তিনি বলেন, ‘টিভি হোক, ওটিটি হোক কিংবা সিনেমা—সব মাধ্যমেই অভিনয় করতে চাই।’
ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর-এর পর আর কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। মাঝে এনামুল করিম নির্ঝরের একটি সিনেমার কাজ শেষ করেছেন, তবে সিনেমাটি এখনো মুক্তি পায়নি।
অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে চান জানিয়ে জৌপারী বলেন, ‘আমি অভিনয়ের কোন স্টেজে আছি, জানি না। তবে অভিনয়টা আমার প্রফেশন। আমার প্যাশনের জায়গাও। আমি এটা সারা জীবন করে যেতে চাই।’
সামনে কী করছেন? তিনি বলেন, এখনো কোনো কাজ চূড়ান্ত হয়নি, তবে কিছু কাজের কথাবার্তা চলছে। যদি সবকিছু কনফার্ম হয়, তাহলে তো সামনের বছর দেখা যেতে পারে।
জৌপারী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজমে পড়াশোনা করেছেন।