হাসিনার গুম-খুন ভুলিয়ে দেওয়ার মতো নৃশংসতা করবেন না: মজিবুর রহমান মঞ্জু
Published: 12th, July 2025 GMT
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলের গুম-খুন ভুলিয়ে দেওয়ার মতো নৃশংসতা করবেন না। মানুষ তখনই আওয়ামী লীগ গুম, খুন ভুলে যাবে, যখন আগের ‘মজলুমরা’ একই রকম পাশবিক আচরণ করবে।
শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের উদ্যেগে ‘ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি - বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, কয়দিন আগেও সব রাজনৈতিক দল এক দাবিতে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। কে ছোট, কে বড় প্রশ্ন তুলিনি। তাহলে আজ কেন এতো বিভেদ? আজ কেন আমরা একে অপরের দিকে আঙ্গুল তুলছি? শত্রুর হাতে আমাদের রক্ত ঝরলে কিংবা নিগৃহীত হয়ে জেলে গেলেই আমরা শুধু ঐক্যবদ্ধ হই।
বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেছেন, কোনো সংস্কারে এই রোগ সারবে না। ক্ষমতা পেয়ে অন্যের অধিকার হরণের প্রবণতা পেয়ে বসলে কোন দলের পক্ষেই দেশে পরিবর্তন সম্ভব না। হাসিনার শাসনামলের পুনরাবৃত্তিই যদি করি, সবাইকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধরা ক্ষমা করবে না।
বাবর চৌধুরীর সঞ্চালনায় ও শেখ আব্দুন নুরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে যাচ্ছে জামায়াত
পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অতীতে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটি যে ‘জাতীয় সমাবেশ’ করতে যাচ্ছে, সেটি জামায়াতের জন্য একটু ভিন্ন বা বিশেষ কিছু বলে দলটির সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসে প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশ হবে। এর আগে জামায়াত কখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলীয়ভাবে সমাবেশ করেনি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যখন তীব্র মতবিরোধ ও বিতর্ক চলছে, সে সময়ে জামায়াত এই সমাবেশ করতে যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দীর এই সমাবেশে জামায়াত স্মরণীয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে।
১৯ জুলাই বেলা ২টায় এই সমাবেশ শুরু হবে। ইতিমধ্যে সমাবেশ বাস্তবায়নে দলের আমিরসহ শীর্ষ নেতাদের তদারকিতে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। জামায়াতের লক্ষ্য, নীরবে বড় ধরনের সমাবেশ করে রাজনীতির ময়দানে আলোড়ন সৃষ্টি করা।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন রাজধানীতে বড় সমাবেশ করে। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন, ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় মহাসমাবেশ করে। বিএনপি নয়াপল্টনে কয়েক দফায় সমাবেশ করে। কিন্তু জামায়াত কারাবন্দী নেতা (বর্তমানে মুক্ত) এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে পুরানা পল্টন মোড়ে একটি সমাবেশ ছাড়া রাজধানীতে বড় কোনো জমায়েত করেনি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এককভাবে জামায়াতে ইসলামী কখনো জনসভা করেনি। এটি হবে আমাদের প্রথম সমাবেশ।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন, তার আগে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচন অনুষ্ঠান ও তার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে জনমত গঠনের লক্ষ্যে এই সমাবেশ হবে।
১৯৪১ সালে পাকিস্তানের লাহোরে প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে একযোগে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলটি নিষিদ্ধ করে তৎকালীন সরকার। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক পর্যায়ে ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালের মে মাসে আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী আবার কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ১৯৮০ সালে প্রথমবারের মতো বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে জামায়াতের সভা হয়। প্রকাশ্যে এটিই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে দলটির প্রথম জনসভা।
জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করার পর গত ৪৫ বছরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী কখনো সমাবেশ করেনি। তবে বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকতে তারা জোটবদ্ধভাবে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। ফলে দলীয়ভাবে আয়োজিত এই সমাবেশকে বিশেষ কিছু এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে জনসমর্থন প্রকাশের ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে। এই সমাবেশ বাস্তবায়নে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে আহ্বায়ক করে কমিটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে একাধিক উপকমিটিও করা হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকায় দলীয় এক অনুষ্ঠানে এই সমাবেশের কথা উল্লেখ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, শহীদের রক্তস্নাত বাংলায় ইসলামের পতাকা উত্তোলন এবং ইসলামি ঐক্যের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সবার চাওয়া-পাওয়া। এই আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ কর্মসূচির বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জাতীয় সমাবেশ হলো তার টার্নিং পয়েন্ট। তার সফল বাস্তবায়নে এখন থেকে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।