তামাকপণ্যের রাজস্বের চেয়ে চিকিৎসাব্যয় বেশি: মৎস্য উপদেষ্টা
Published: 15th, January 2025 GMT
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “সরকার তামাকজাত পণ্য থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার চেয়ে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসাব্যয় বেশি।”
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক কর নীতি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “তামাক উৎপাদনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নদীর পাড়ে, বিশেষ করে হালদা ও তিস্তার পাড়ে তামাক চাষ হয়ে থাকে। তামাক চাষে কীটনাশক ও সার ব্যবহারের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাছ নষ্ট হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “তামাক কোম্পানিগুলো জুজুর ভয় দেখিয়ে বলে থাকে, ১৫ লাখ তামাক বিক্রেতা এ পেশার সাথে জড়িত। কিন্তু, এদের বেশিরভাগই শিশু। প্রকৃতপক্ষে, তামাক বিক্রির সাথে এত সংখ্যক লোক আছে কি না, তা দেখা দরকার।”
বক্তারা দেশে তামাক কর কাঠামো বিশ্লেষণ, তামাক কোম্পানির কৌশল উদঘাটন এবং কর আরোপের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তারা বলেন, “তামাকজাত দ্রব্য থেকে যে রাজস্ব আহরিত হয়, তার চেয়ে বেশি টাকা তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে থাকে। তাই, এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।”
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির (বিএনটিটিপি) টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য মো.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ ও বিএনটিটিপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন—রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মীর আলমগীর হোসেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অপূর্ব কুমার মন্ডল, বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব মো. বদরুজ্জামান মুন্সী, টোব্যাকো ফ্রি কিডসের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মুস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সাংবাদিক ও গবেষক সুশান্ত সিনহা। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনটিটিপির সচিবালয় ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল।
ঢাকা/এএএম/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৯ মাস পর খুলছে সেন্টমার্টিন, মানতে হবে ১২ নির্দেশনা
দীর্ঘ নয় মাস পর আগামী সপ্তাহে খুলছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক সেখানে যেতে পারবেন। তবে, এবারো সেখানে রাত্রিযাপনে থাকছে নিষেধাজ্ঞা। শুধু তাই নয়, পর্যটকদের মানতে হবে ১২ নির্দেশনা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্বীপে রাত্রিযাপন বন্ধ থাকলে পর্যটক কমবে, ফলে হোটেল-রেস্তোরাঁ, নৌযান ও দোকানপাটের আয় মারাত্মকভাবে কমে যাবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিয়ন্ত্রণে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করে। এতে নভেম্বরে শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপটি আবারো বন্ধ থাকবে।
নতুন বিধিনিষেধ অনুযায়ী, প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। টিকিট নিতে হবে ট্যুরিজম বোর্ডের অনলাইন পোর্টাল থেকে, যেখানে কিউআর কোড ও ট্রাভেল পাস বাধ্যতামূলক। কেয়াবনে প্রবেশ, সৈকতে বারবিকিউ, আলো-শব্দ সৃষ্টি ও মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দ্বীপের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত সীমাবদ্ধতায় পর্যটন নির্ভর জীবিকা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
সেন্টমার্টিন বাজার সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, “সেন্টমার্টিন কক্সবাজার শহর থেকে দূরের পথ। আসতে এবং যেতে দিনের পুরো সময়টা চলে যায়। রাত্রিযাপন ছাড়া পর্যটক আসবে না এখানে। বর্তমানে আমরা ক্ষতির মুখে জীবন অতিবাহিত করছি।”
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, “দ্বীপের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গেছে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ট্রলার, দোকান সবখানেই নেমে এসেছে অচলাবস্থা। স্থানীয় মানুষ পর্যটন নির্ভর জীবিকা চালায়। এখন তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার পক্ষে, তবে জীবিকার দিকটাও যেন সরকার বিবেচনায় নেয় এটাই আমাদের মিনতি।”
কক্সবাজার থেকে জাহাজ যাবে সেন্টমার্টিন:
প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের মধ্যে আট থেকে দশটি জাহাজ চলাচল করে। এবার কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ায় অবস্থিত অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে। আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে উখিয়ার ইনানী জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি মেলেনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নীতিগত সম্মতি দিয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।
পর্যটকবাহী জাহাজগুলোর মধ্যে এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস জাহাজ দুইটি বেশিরভাগ সময় কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে পরিচালনা করে।
জাহাজের পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, “নভেম্বরের কার্যক্রম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যদি কোনো জাহাজ সকাল ৭টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যায়, তা দুপুর ২টার দিকে সেন্টমার্টিনে পৌঁছায়। আমাদের জাহাজের সময় লাগে প্রায় ৭ ঘণ্টা, অন্যগুলোর আরো বেশি সময় লাগে। ফলে একদিনে গিয়ে ফিরে আসা সম্ভব নয়। রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরাও আগ্রহ দেখান না।”
তিনি আরো বলেন, “পর্যটন বোর্ডের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা এখনো চালু হয়নি, যার ফলে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে মূল মৌসুম শুরু হলে রাত্রিযাপনের সুযোগ তৈরি হবে এবং তখন নিয়মিত ভ্রমণ কার্যক্রম শুরু হতে পারে।”
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “দ্বীপে মোটরযান নিষিদ্ধ ও পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কড়া নজরদারি থাকবে। দ্বীপে পর্যটক পরিবহনের জন্য নৌযানগুলোকে অনুমতি নিতে হবে। স্থানীয়দের জন্য অনুমতির দরকার নেই। পরিবেশ রক্ষায় এ পদক্ষেপ জরুরি।”
ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ