শেষ সিনেমায় কত টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন সালমান শাহ
Published: 13th, March 2025 GMT
মৃত্যুর ২৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সালমান শাহকে নিয়ে এখনো চর্চা হয়। তাঁর অভিনয় ও স্টাইলে এখনো মুগ্ধ বর্তমান প্রজন্মের দর্শকেরা। ক্যারিয়ারের সময়সীমা মাত্র চার বছর, আর তাতেই হয়েছিলেন খ্যাতিমান। নব্বইয়ের শুরুতে দেশের সিনেমা অঙ্গনকে দেখিয়েছিলেন নতুন দিশা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সালমান হয়ে উঠেছিলেন সবচেয়ে ব্যস্ত ও সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেতা।
সালমান শাহ অভিনীত শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘বুকের ভেতর আগুন’। ছটকু আহমেদ পরিচালিত সিনেমাটিতে সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন শাবনূর। সিনেমাটির জন্য এ অভিনেতা নিয়েছিলেন সে সময়ের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক, দুই লাখ টাকা, এমনটাই জানিয়েছেন পরিচালক ও সিনেমাটির প্রযোজক ছটকু আহমেদ।
তবে এ সিনেমার কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারেননি সালমান। গল্পের কিছুটা পরিবর্তন এনে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয় ফেরদৌস আহমেদকে। সালমানের মৃত্যুর এক বছর পর সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই সিনেমা দিয়েই শেষ হয় সালমানের সেলুলয়েড সফর।
মৃত্যুর সময় সালমানের হাতে তখন অনেকগুলো ছবির কাজ। কিছুর ডাবিং চলছিল, কিছুর শুটিং শেষ দিকে, আবার কিছু একেবারে মাঝপথে। মোট পাঁচটি ছবির শিডিউলে ঘুরেফিরে অভিনয় করছিলেন তিনি। মৃত্যুর ঠিক এক সপ্তাহ পর ১৩ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ছটকু আহমেদের পরিচালিত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’। নির্মাতাদের পরিকল্পনা ছিল সালমানের জন্মদিনের ছয় দিন আগে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার এবং সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সিনেমা মুক্তির আগেই না–ফেরার দেশে চলে যান নায়ক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
নিম্নবিত্তের জীবনে সুখের সংজ্ঞা
সুখ এমন একটি শব্দ, যার পেছনে পৃথিবীর সব মানুষ নিরন্তর ছুটে চলে। তবে এই শব্দের অর্থ সবার কাছে এক নয়। জীবনের অবস্থান, আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সুখের সংজ্ঞাও বদলে যায়। ধনীদের কাছে যেখানে সুখ মানে আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, সেখানে নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে সুখের অর্থ অনেক সহজ, অনেক বাস্তব এবং অনেক বেশি অনুভবের। তারা সুখ খোঁজে বড় স্বপ্নে নয়; বরং দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট প্রাপ্তির মধে৵।
নিম্নবিত্ত মানুষ প্রতিদিন সংগ্রাম করে জীবনযাপন করেন। তাঁদের জীবনের প্রতিটি দিন যেন নতুন একটি যুদ্ধ। সকাল শুরু হয় জীবিকার চিন্তায়, আর রাত শেষ হয় পরের দিনের ভাবনায়। তবু এই কঠিন বাস্তবতার মাঝেও তারা সুখ খুঁজে নিতে জানে। এক বেলা পেট ভরে খেতে পারা, কাজ শেষে ক্লান্ত দেহে শান্তির ঘুম, সন্তানদের হাসিমুখ—এই সাধারণ বিষয়গুলোই তাদের কাছে অমূল্য সুখ। যেখানে ধনী মানুষ অনেক কিছু পেয়েও তৃপ্ত না, সেখানে এই মানুষগুলো অল্পে সন্তুষ্ট থাকতে পারে।
নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে সুখের সবচেয়ে বড় উৎস হলো পরিবার। পরিবারের সদস্যরা একে অপরের শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা। একজন বাবা সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করেন শুধু এই আশায় যে সন্তানেরা দুই বেলা খেতে পারবে। একজন মা নিজের কষ্ট লুকিয়ে সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে চান। ভাই-বোনের মধ্যে ভালোবাসা, দুঃখ ভাগ করে নেওয়া, একসঙ্গে বসে সাধারণ খাবার খাওয়া—এই ছোট ছোট মুহূর্তই তাদের কাছে জীবনের বড় সুখ হয়ে ওঠে।
তা ছাড়া নিম্নবিত্ত মানুষের চাওয়ার পরিধি খুব বড় নয়। তাঁরা আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখেন না, বিলাসী জীবনের কল্পনায় বিভোর হন না। তাঁদের চাওয়া খুব সাধারণ—একটু নিশ্চয়তা, একটু শান্তি আর পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি। এ কারণে তাঁরা ছোট সুখে বড় আনন্দ পান। কেউ নতুন জামা কিনতে না পারলে সন্তানের পুরোনো জামা সেলাই করে নতুন করে পরাতে পেরে আনন্দ পান। আবার কোনো দিন সন্তানের ভালো ফল দেখে ভুলে যান নিজের সব কষ্ট।
নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে সুখের আরেকটি দিক হলো সহনশীলতা। তাঁরা কষ্ট সহ্য করতে জানেন, অভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন। অনেক সময় প্রতিকূলতার মধে৵ও তাঁদের মুখে হাসি লেগে থাকে। এই হাসি তাঁদের চরিত্রের শক্তি প্রকাশ করে। তাঁরা জানেন জীবনের পথ সহজ নয়, তবুও জীবনের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা কমে না; বরং কষ্টের মধে৵ও তাঁরা হাসতে শেখেন, আনন্দ খোঁজেন।
এই ব্যস্ত শহরে এমন সুখের চিত্র অহরহ। যেমন একজন রিকশাচালক সারা দিন রোদ-বৃষ্টিতে মানুষের বোঝা টেনে নিয়ে বেড়ান। শরীর ভেঙে গেলেও রাতে ঘরে ফিরে যখন সন্তান তাঁর কাছে ছুটে আসে, তখন সে সব কষ্ট ভুলে যায়। সন্তানের সেই নিষ্পাপ হাসিই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ।
একজন পোশাকশ্রমিক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানায় কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তবু মাসের শেষে যখন তিনি বেতন পান এবং সেই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনেন, তখন তাঁর মনে গভীর তৃপ্তি অনুভব হয়। পরিবারের মুখে হাসি ফুটলেই তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন।
নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে সুখ ক্ষণস্থায়ী হলেও গভীর। হয়তো আজ ভালো খেতে পেলেন, কাল পেলেন না; আজ কাজ আছে, কাল নেই। তবুও যখন সুযোগ আসে, তাঁরা সেই সুখ পুরো হৃদয় দিয়ে উপভোগ করেন। তাঁরা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা জানেন, তবুও বর্তমানকে উপভোগ করতে শেখেন। এটাই তাঁদের জীবনের বিশেষ দিক।
আমরা অনেক সময় সুখকে বড় বড় জিনিসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখি—বড় বাড়ি, দামি গাড়ি, প্রচুর টাকা; কিন্তু নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন আমাদের শেখায় সুখ আসলে মানুষের মনের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। যাঁর মন তৃপ্ত, সেই মানুষই সুখী। টাকা সুখ কিনতে পারে; কিন্তু শান্তি কিনতে পারে না। নিম্নবিত্ত মানুষ হয়তো ধনী নয়; কিন্তু অনেক সময় তাঁরা শান্তির দিক দিয়ে ধনীদের থেকেও ধনী।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে কষ্ট বেশি; কিন্তু সেই কষ্টের মধে৵ই তাঁরা জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পান। তাঁরা মানুষকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসতে জানেন। সাহায্যের হাত বাড়ান, সহানুভূতি বোঝেন, অন্যের দুঃখে কাঁদতে পারেন। এই মানবিক গুণাবলিই তাঁদের সুখকে অর্থবহ করে তোলে।
পরিশেষে বলা যায়, নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে সুখের সংজ্ঞা বইয়ের পাতায় লেখা কোনো তত্ত্ব নয়; বরং জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে গড়ে ওঠা এক অনুভূতি। তাঁদের সুখ বড় না হলেও সত্যিকারের। তাঁদের আনন্দ অল্প হলেও গভীর। তাঁরা আমাদের শেখায়—জীবন মানে শুধু পাওয়ার হিসাব নয়; বরং যা আছে তা নিয়ে আনন্দ খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতাই প্রকৃত সুখ। তাই বলা যায়, সুখের সংজ্ঞা শিখতে চাইলে আমাদের উচিত নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনকে কাছ থেকে দেখা, বোঝা ও সম্মান করা।
তাসনিম জাহান শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়