লাইসেন্সের জন্য ‘ঘুষ নেওয়ার ভিডিও’, সুপারভাইজারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
Published: 1st, July 2025 GMT
ট্রেড লাইসেন্সের জন্য সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৩–এর লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার শেখ শওকত হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার অঞ্চল-৩–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ উল মোস্তাক রাজস্ব বিভাগের ওই কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
শেখ শওকত হোসেনকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, তিনি লাইসেন্সের সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে তাঁদের কাছ থেকে অনৈতিক টাকাপয়সা নিচ্ছেন। এমন অনিয়মের ভিডিও ফুটেজ সেবাগ্রহীতা ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে, যা ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩–এর কার্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রয়োজনে ওই ভিডিও তাঁকেও দেওয়া যাবে।
কারণ দর্শানোর চিঠিতে আরও বলা হয়, শওকত হোসেন দপ্তরে নিজের কক্ষের জানালার গ্লাসে বিভিন্ন ধরনের কাগজ লাগিয়ে রেখেছেন। এতে তাঁর কক্ষের ভেতরের কর্মকাণ্ড ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে না। এর মাধ্যমে তিনি নিজের কাজকর্ম সন্দেহজনকভাবে লোকানোর অপচেষ্টা করেছেন বলে কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছে। এ বিষয়ে আগেও তাঁকে সতর্ক করা হয়েছিল, ওগুলো অপসারণের আদেশ দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি পালন করেননি।
এ ছাড়া শওকত হোসেন দাপ্তরিক শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত সহকারী রেখেছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে রাজস্ব শাখার অফিস সহায়ক হাবিবুর রহমান শওকতের কক্ষে সহযোগী হিসেবে তাঁর টেবিল-চেয়ার ব্যবহার করছেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ওই অফিস সহায়ককে লাইসেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে শওকত নিয়োজিত করেছেন, যা দাপ্তরিক শৃঙ্খলাপরিপন্থী। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুযায়ী লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার হিসেবে তিনি ব্যক্তিগত কোনো অফিস সহায়ক পান না।
নোটিশে বলা হয়, শওকতের এমন অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে ঢাকা উত্তর সিটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং নাগরিকেরা সেবা গ্রহণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাঁর এমন কার্যকলাপ সিটি করপোরেশন চাকরি বিধিমালা ১৯৮৯–এর ধারা ৩৯ (খ) মতে অসদাচরণের শামিল।
এ বিষয়ে অঞ্চল-৩–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ উল মোস্তাক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (শওকত) এবং তাঁর দপ্তরের একজন অফিস সহায়ক বহিরাগত দুই–তিনজনের সঙ্গে লাইসেন্সের বিষয়ে কথা বলছিলেন এবং কিছু টাকাপয়সা লেনদেন করছেন—এমন ফুটেজ আমরা হাতে পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স করে দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয় বক্তব্য জানতে শেখ শওকত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। শওকত ঢাকা উত্তর সিটির জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (শ্রমিক দল) সহসভাপতি। ২৭ আগস্ট তাঁকে অঞ্চল-৩-এর লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর আগে তিনি নগর ভবনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বেঞ্চ সহকারী ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শওকত হ স ন
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের বিমা দাবি নিষ্পত্তির অনুরোধ বিটিএমএর
গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানার বিমা দাবি নিষ্পত্তি করে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। তাদের অভিযোগ, বিমা কোম্পানিগুলো নানা ধরনের পদ্ধতিগত জটিলতা ও পলিসির শর্তের অপব্যাখ্যা করে বিমা দাবি পরিশোধে বিলম্ব করছে। অনেক ক্ষেত্রে দাঙ্গা, হাঙ্গামা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা–সংক্রান্ত ক্ষতির অজুহাতে বিমা দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, যা বিমাশিল্পের মূলনীতির পরিপন্থী।
আজ বুধবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে দেওয়া এক চিঠিতে বিমা দাবি পরিশোধের অনুরোধ জানান বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ। তিনি বলেন, ‘গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক সদস্যের কারখানা, গুদাম ও অন্যান্য স্থাপনা ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। আকস্মিক এই সহিংসতায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।’
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, সব ধরনের অপ্রত্যাশিত ক্ষতি মোকাবিলায় প্রায় প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানই যথাযথ প্রিমিয়াম পরিশোধের মাধ্যমে বিমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অগ্নিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির বিপরীতে বিমা পলিসি নিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, ঘটনার পর বছর পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ বিমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
চিঠিতে বিটিএমএ সভাপতি জানান, গত ৩ মার্চ সাধারণ বীমা করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানার উত্থাপিত বিমা দাবি নিয়ে সভা হয়। এতে বিমা দাবি নিয়ে বিভিন্ন বিমাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিভিন্নভাবে ক্ষতির বিবরণ ও ব্যাখ্যা দেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঘটনাগুলো গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে হওয়ায় তা স্ট্যান্ডার্ড ফায়ার পলিসি (এসএফপি) বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অল রিস্ক (আইএআর) পলিসির আওতায় কোনো বিমা দাবি পরিশোধযোগ্য হবে না। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানার মালিকেরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে সব নন-লাইফ বিমা কোম্পানিকে সুস্পষ্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে গত বছরের জুলাই-আগস্টের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিমা দাবি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ। তিনি বলেন, বিমা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তির বিধানটির কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার।