ট্রেড লাইসেন্সের জন্য সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৩–এর লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার শেখ শওকত হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার অঞ্চল-৩–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ উল মোস্তাক রাজস্ব বিভাগের ওই কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।

শেখ শওকত হোসেনকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, তিনি লাইসেন্সের সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে তাঁদের কাছ থেকে অনৈতিক টাকাপয়সা নিচ্ছেন। এমন অনিয়মের ভিডিও ফুটেজ সেবাগ্রহীতা ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে, যা ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩–এর কার্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রয়োজনে ওই ভিডিও তাঁকেও দেওয়া যাবে।

কারণ দর্শানোর চিঠিতে আরও বলা হয়, শওকত হোসেন দপ্তরে নিজের কক্ষের জানালার গ্লাসে বিভিন্ন ধরনের কাগজ লাগিয়ে রেখেছেন। এতে তাঁর কক্ষের ভেতরের কর্মকাণ্ড ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে না। এর মাধ্যমে তিনি নিজের কাজকর্ম সন্দেহজনকভাবে লোকানোর অপচেষ্টা করেছেন বলে কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছে। এ বিষয়ে আগেও তাঁকে সতর্ক করা হয়েছিল, ওগুলো অপসারণের আদেশ দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি পালন করেননি।

এ ছাড়া শওকত হোসেন দাপ্তরিক শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত সহকারী রেখেছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে রাজস্ব শাখার অফিস সহায়ক হাবিবুর রহমান শওকতের কক্ষে সহযোগী হিসেবে তাঁর টেবিল-চেয়ার ব্যবহার করছেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ওই অফিস সহায়ককে লাইসেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে শওকত নিয়োজিত করেছেন, যা দাপ্তরিক শৃঙ্খলাপরিপন্থী। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুযায়ী লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার হিসেবে তিনি ব্যক্তিগত কোনো অফিস সহায়ক পান না।

নোটিশে বলা হয়, শওকতের এমন অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে ঢাকা উত্তর সিটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং নাগরিকেরা সেবা গ্রহণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাঁর এমন কার্যকলাপ সিটি করপোরেশন চাকরি বিধিমালা ১৯৮৯–এর ধারা ৩৯ (খ) মতে অসদাচরণের শামিল।

এ বিষয়ে অঞ্চল-৩–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ উল মোস্তাক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (শওকত) এবং তাঁর দপ্তরের একজন অফিস সহায়ক বহিরাগত দুই–তিনজনের সঙ্গে লাইসেন্সের বিষয়ে কথা বলছিলেন এবং কিছু টাকাপয়সা লেনদেন করছেন—এমন ফুটেজ আমরা হাতে পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স করে দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয় বক্তব্য জানতে শেখ শওকত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। শওকত ঢাকা উত্তর সিটির জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (শ্রমিক দল) সহসভাপতি। ২৭ আগস্ট তাঁকে অঞ্চল-৩-এর লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর আগে তিনি নগর ভবনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বেঞ্চ সহকারী ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শওকত হ স ন

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. শওকত আলী চৌধুরীসহ তাঁর পরিবারের চার সদস্যের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। শওকত আলী চৌধুরী চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একজন ও ফিনলে বাজার লিমিটেডের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গতকাল সোমবার এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে তাদের হিসাবে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো ক্রেডিট কার্ড থাকলে তা–ও বন্ধ হয়ে যাবে।

শওকত আলী চৌধুরীসহ আরও যাঁদের হিসাব স্থগিত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন শওকত আলী চৌধুরীর স্ত্রী তাসমিয়া আম্বারীন, তিনি ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান। হিসাব স্থগিতের তালিকায় থাকা অপর দুজন হলেন তাঁর মেয়ে জারা নামরীন ও জারান আলী চৌধুরী। এর মধ্যে জারা নামরীন ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালক।

ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, তাঁদের নামে ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের (লিমিটেড কোম্পানিসহ) নামে কোনো ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা থাকবে। এসব হিসাবের যাবতীয় দলিল (হিসাব খোলার ফরম, টিপি, কেওয়াইসি) ২ জুলাইয়ের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক অপরাধের তদন্তের অংশ হিসাবে এক মাসের জন্য এসব ব্যক্তি ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে হিসাবগুলো স্থগিত করা হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটার পর থেকে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার শওকত আলী চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যদের হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তিনি বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি বই বিক্রি করা সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
  • ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
  • ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
  • ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ
  • অর্থনীতির গতি ফেরাতে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই: মির্জা ফখরুল