মহাস্থান জাদুঘরের নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর, অভিযোগ এনসিপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে
Published: 27th, March 2025 GMT
বগুড়ায় প্রত্নতত্ত্বস্থল মহাস্থানগড়ের ফটক খুলতে দেরি হওয়ায় নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মহাস্থান প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা গত বুধবার রাতে শিবগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
অভিযোগে রাজিয়া জানান, রমজান মাসে মহাস্থান জাদুঘর ও প্রত্নস্থল জাহাজঘাটা খোলা রাখার সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে এনসিপি নেতাকর্মী পরিচয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন জাহাজঘাটার মূল ফটকে যান। তাদের একজন রাজিয়াকে ফোন করে সেখানে প্রবেশের অনুমতি চান। পরে তিনি চাবি পাঠান। তবে জাদুঘর থেকে জাহাজঘাটা কিছুটা দূরে হওয়ায় চাবি নিয়ে যেতে ৫ মিনিট দেরি হয়। এই দেরির জন্য দলটি ভেতরে ঢোকার পর নিরাপত্তাকর্মী বাপ্পী মিয়াকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। মোবাইল ফোনে কল করে তাকেসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে এনসিপির বগুড়া জেলা সংগঠক মৃদুল হোসাইন খন্দকার বলেন, ‘মঙ্গলবার ঢাকা থেকে এনসিপির কিছু নেতাকর্মী মহাস্থানগড়ে বেড়াতে এসেছিলেন বলে শুনেছি। সেখানে কাউকে মারধর করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুজ্জামান বলেন, মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান থানায় একটি জিডি করেছেন। তদন্ত করে দেখছি কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম রধর এনস প ন ত কর ম জ দ ঘর ম রধর এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি’ বলার তাৎপর্য
এটি একটি দোয়া। মহানবী (সা.) এই দোয়া সাহাবিদের শিখিয়েছেন। আমরা মানুষ হিসেবে খুব দুর্বল প্রাণী, আমাদের প্রতিনিয়ত মহান শক্তিমান আল্লাহর কাছে তাই সাহায্য চাইতে হয়। এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আমরা অবিশ্বাস ও আল্লাহকে অস্বীকার করার মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।
দোয়ার প্রেক্ষাপটরাসুল (স.) তাঁর সাহাবিদের এ দোয়া নিয়মিত পড়ার পরামর্শ দিতেন, বিশেষ করে নামাজের পর ও সকালে-সন্ধ্যায়। এক বর্ণনায় এসেছে, “নবীজি (সা.) এ দোয়া নিয়মিত পাঠ করতেন—
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, ওয়া আউজুবিকা মিন আযাবিল কবর।’”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি তোমার আশ্রয় চাই কুফর (অবিশ্বাস) ও দারিদ্র্য থেকে এবং তোমার আশ্রয় চাই কবরের আজাব থেকে।” (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৬৫)
এতে বোঝা যায়, নবী (স.) কেবল অবিশ্বাস (কুফর) নয়, বরং এমন সব পরিস্থিতি থেকেও আশ্রয় চাইতেন, যা মানুষকে কুফরের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেমন চরম দারিদ্র্য বা হতাশা।
আরও পড়ুনকেন শিরক সবচেয়ে বড় পাপ১৮ জুন ২০২৫কুফর অর্থ কীকুফর শব্দের আদি অর্থ “ঢেকে ফেলা” বা “অস্বীকার করা”। ইসলামি পরিভাষায় কুফর মানে হলো,
আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ব বা তাঁর নির্দেশ অস্বীকার করা, কিংবা এমন কোনো কাজ বা বিশ্বাস রাখা যা ইমানের বিপরীত।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা কুফরি করে, তাদের আমল ধূলিকণার মতো ম্লান হয়ে যায়।” (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ১৮)
আরেক আয়াতে সতর্ক করা হয়েছে, “যে কেউ ইমানের পর কুফরি করে, সে সরল পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে গেল।” (সুরা নিসা, আয়াত: ১৩৭)
কেন কুফর থেকে আশ্রয় চাওয়া জরুরি১. কুফর মানব জীবনের সর্বনাশ ডেকে আনে। যখন কেউ ইমান হারায়, তখন তার জীবনের উদ্দেশ্য, নৈতিক দিকনির্দেশ ও আখিরাতের পরিণতি—সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়।
২. কুফর থেকে শুরু হয় নৈতিক অবক্ষয়। যে আল্লাহকে ভয় করে না, তার হৃদয় ধীরে ধীরে পাপ ও অন্যায়ের প্রতি উদাসীন হয়ে যায়।
৩. কুফরের পরিণতি ভয়াবহ। কোরআনে বলা হয়েছে, “যারা কুফরি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন।” (সুরা মুলক, আয়াত: ৬)
দোয়ার শিক্ষণীয় দিক১. ইমান রক্ষা সর্বপ্রথম কর্তব্য। এই দোয়া শেখায় যে জীবনের সবচেয়ে বড় অনিষ্ট কুফর; তাই প্রথমেই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে এই বিপদ থেকে।
আরও পড়ুনইসলামে ‘কলব’ ও ‘আকল’–এর সম্পর্ক১০ নভেম্বর ২০২৫২. দারিদ্র্য থেকেও আশ্রয় চাওয়া উচিত। কারণ, অভাব ও হতাশা অনেক সময় মানুষকে কুফর ও অন্যায়ের পথে ঠেলে দেয়। ইবন কাসির ব্যাখ্যা করেছেন, “রাসুল (স.) কুফর ও দারিদ্র্যের মধ্যে সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন, কারণ অভাব অনেক সময় ঈমানের পরীক্ষায় মানুষকে দুর্বল করে।” (তাফসির ইবন কাসির, ২/ ৪৮৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০০ খ্রি)
৩. কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাওয়ার বিকল্প নাই। এ দোয়ার শেষাংশে কবরের আজাবের উল্লেখ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই জীবন ক্ষণস্থায়ী, প্রকৃত নিরাপত্তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি।
নবীজির (স.) কুফর থেকে আশ্রয় প্রার্থনাআরেক হাদিসে এসেছে, “নবীজি (স.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার আশ্রয় চাই কুফর, ঋণ, পাপ ও দারিদ্র্য থেকে।’” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৬)
এখান থেকে বোঝা যায়, নবীজি (স.) বিশ্বাস করতেন, ইমান নষ্ট হওয়ার ভয় যেকোনো বিপদের চেয়ে বড় বিপদ।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে দোয়ার তাৎপর্যআজকের যুগে কুফর কেবল মুখের অবিশ্বাস নয়, বরং তা নানা আকারে আসে। যেমন:
ধর্মকে উপহাস করা,
পাপকে স্বাভাবিক মনে করা,
আল্লাহর বিধান অমান্য করে আধুনিকতার নামে গাফেল হওয়া।
এই সময় এ দোয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য আত্মরক্ষার ঢালস্বরূপ। মনোবিজ্ঞানীরাও বলেন, বিশ্বাসী মানুষরা জীবনের কষ্টে অধিক মানসিক স্থিতিশীল থাকে, কারণ তারা আশ্রয় খোঁজে এক উচ্চতর সত্তার কাছে। (Harold G. Koenig, Handbook of Religion and Health, Oxford University Press, 2012, পৃ. ১৮–২০)
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি”, এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর দোয়া প্রতিটি মুসলমানের জন্য দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত। এটি কেবল অবিশ্বাস থেকে নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছায় সেই মানসিকতা থেকেও রক্ষা করবে, যা মানুষকে ধীরে ধীরে ইমান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
আসুন আমরা প্রতিদিন এই দোয়া পড়ি, যেন আল্লাহ আমাদের ইমান অটুট রাখেন, কুফর ও হতাশা থেকে রক্ষা করেন, এবং দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপত্তা দান করেন।
আরও পড়ুনদারিদ্র্যের ক্ষতিকর প্রভাব, ইসলামের সমাধান২৪ অক্টোবর ২০২৫