পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী সিরাজ মিয়ার স্ত্রী। বিয়ের পর আলাদা সংসার হয়েছে বড় ছেলের। অন্য চার ছেলে কর্মক্ষম নয়। বাধ্য হয়ে রান্নাবাড়া করছেন ৬০ বছর বয়সী সিরাজ। নদীতে মাছ ধরা ছাড়া অন্য কাজ শেখেননি। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছয়জনের সংসার চালাতে তাই হিমশিম খাচ্ছেন লক্ষ্মীপুর সদরের চর রমণীমোহন গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ।
কয়েক দফায় নদীভাঙনের শিকার সিরাজ এখন ঘর বেঁধেছেন নদীতীরের সরকারি জমিতে। এক মাস ধরে আয়ের পথ বন্ধ। আসন্ন ঈদের হাসি নেই তাঁর মুখে। ছেলেদের গায়ে নতুন জামা দেবেন দূরের কথা, ভালো খাবারই জোটে না কতদিন! ঘরে সরকারি সহায়তায় চাল ও রান্না করা ডাল ছাড়া কিছুই নেই।
মঙ্গলবার এই গ্রামের কয়েকটি পরিবারের একই দশা দেখা গেছে। তাজল ইসলাম নামের আরেক জেলের ঘরে চালও ছিল না। ধারদেনা করে কোনোমতে পরিবার-পরিজনের খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
তিনি বললেন, ‘এ বছরের ঈদ আমাদের জন্য নয়। বছরে একবার ঈদে ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনে দিই, এবার তা-ও পারিনি।’
জেলেসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১০০ কিলোমিটার নদীতে দুই মাসের জন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সব জেলের আয়ের পথ থমকে গেছে। ফলে আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের উৎসব পালন করবেন, না দেনা পরিশোধ করবেন– এ নিয়েই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন জেলেরা।
জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে চারটি উপজেলাই। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতির মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় জেলে সংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। যদিও তাদের মধ্যে সরকারি তালিকায় নিবন্ধিত আছেন ৪৩ হাজার ৪৭২ জন। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৩৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য ২ হাজার ২৬৭ টন ভিজিএফের চাল চাল বরাদ্দ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার মাস প্রতি পরিবার চাল পাবে ৪০ কেজি করে ১৬০ কেজি। যদিও প্রায় সমপরিমাণ জেলে এই সুবিধার বাইরে থেকে যান।
সরকারের চালে সংসারের সামান্য সুবিধা হলেও অন্য জিনিসপত্র জোগাড়ে এ সময়টিতে বেগ পেতে হয়। রমণীমোহনের জেলে তাজলের পরিবারে সদস্যসংখ্যা ৮ জন। চার ছেলে ও দুই মেয়ে তাঁর। তাদের মধ্যে ২২ বছর বয়সী বড় ছেলে সুজন ভ্যানচালক। তিনিই সংসারের জন্য কিছুটা খরচ দিতে পারেন। এই পরিবারে দিনে চালই লাগে ৬ কেজির মতো। তাজল বলেন, ঈদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেবেন কোথা থেকে, ফিরনি-শেমাই কেনার পয়সাই তো নেই।
একই গ্রামের অপর জেলে বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী মিনার বেগম বলেন, অন্যদিনের সঙ্গে ঈদের দিন আলাদা করার কোনো উপায় তাদের নেই। নদীতীরের সরকারি জমিতে তোলা ঘরেই থাকেন। এখানে দুই মেয়ে, স্বামী-শাশুড়ি নিয়ে তাঁর সংসারে সদস্য পাঁচজন। স্বামীর আয়েই চলে সংসার। নদীতে মাছ ধরা না গেলে আয় বন্ধ। তখন চুলাই জ্বলে না ঠিকমতো।
অন্যের বাড়িতে কাজ করেন মিনার বেগম। সেখান থেকে যে অল্প সহায়তা পান, তা দিয়েই দুই মেয়ে ও শাশুড়িকে খেতে দেন। স্বামী-স্ত্রীতে কোনোদিন আধাপেটা খেয়ে থাকতে হয়। দুই বেলা দুই মুঠো ভাত জোগাড় নিয়েই যত দুশ্চিন্তা। ঈদ নিয়ে ভাবার ফুরসত নেই।
চর রমণীমোহন ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নয়ন আক্তার বলেন, এ বছর মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় জেলেপল্লিতে হতাশা বিরাজ করছে। ভিজিএফের চাল দেওয়ায় কিছু জেলের স্বস্তি হয়েছে। আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এসব নিয়ে যেতেন। এবার এমন অভিযোগ নেই।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, জেলেদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ হচ্ছে। আশা করি ঈদ আনন্দময় হবে। ২৮ হাজার ৩৪৪ জেলে পরিবারের জন্য বরাদ্দ এসেছে। নিষেধাজ্ঞার চার মাসে মোট ১৬০ কেজি করে সহায়তা পাবেন তারা। তবে ঈদের উপহার হিসেবে বিতরণের কোনো বরাদ্দ নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘অলৌকিক ওষুধ’ খেয়ে জোকোভিচ দ্বিতীয় রাউন্ডে
উইম্বলডনে গতকাল প্রথম রাউন্ডে আলেক্সান্দ্রে মুলারকে ৬-১, ৬-৭ (৭/৯), ৬-২, ৬-২ গেমে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছেন সার্বিয়ান কিংবদন্তি নোভাক জোকোভিচভ। ফিলিপাইনের আলেক্সান্দ্রা এয়ালাকে ৩-৬, ৬-২, ৬-১ গেমে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছেন মেয়েদের এককে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বারবারা ক্রেইচিকোভা। ইউক্রেনের দায়ানা ইসত্রেমেস্কার কাছে ৭-৬ (৭/৩), ৬-১ গেমে হেরে বিদায় নিয়েছেন গত মাসে ফ্রেঞ্চ ওপেনজয়ী কোকো গফ।
উইম্বলডনে মেয়েদের এককে দ্বিতীয় বাছাই যুক্তরাষ্ট্রের কোকো গফ গতকাল প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছেন। র্যাঙ্কিংয়ে ৪২তম ইউক্রেনের দায়ানা ইসত্রেমেস্কার কাছে মাত্র ৭৮ মিনিটের লড়াইয়ে ৭–৬ (৭/৩), ৬–১ গেমে হেরেছেন গত মাসে ফ্রেঞ্চ ওপেনজয়ী গফ।
বিদায়বেলায় অশ্রুসিক্ত গফ স্বীকার করেন, ফ্রেঞ্চ ওপেনে ক্লে কোর্ট থেকে উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারেননি। গফের বিদায়ের মধ্য দিয়ে কাল একটি অপ্রত্যাশিত রেকর্ডও হয়েছে। উইম্বলডনের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো ছেলে ও মেয়েদের একক মিলিয়ে শীর্ষ ১০ বাছাইয়ের মধ্যে চারজন বিদায় নিলেন প্রথম রাউন্ড থেকে।
আরও পড়ুনউইম্বলডনে জয়ে ছিল কোটিপতি হওয়ার সুযোগ, ছাত্র হওয়ায় লাখপতি হতে হচ্ছে০১ জুলাই ২০২৫এর আগে ছেলেদের তৃতীয় বাছাই আলেক্সান্দার জভেরেভ, মেয়েদের তৃতীয় বাছাই জেসিকা পেগুলা এবং মেয়েদের পঞ্চম বাছাই ও অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন চীনের ঝেং কিনওয়েনও হেরে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেন।
রেকর্ড ২৫তম গ্র্যান্ড স্লামের খোঁজে গতকাল সেন্টার কোর্টে নামা সাতবারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন নোভাক জোকোভিচ অবশ্য উঠেছেন দ্বিতীয় রাউন্ডে। র্যাঙ্কিংয়ে ৪১তম ফ্রান্সের আলেক্সান্দ্রে মুলারকে প্রথম রাউন্ডে ৬–১, ৬–৭ (৭/৯), ৬–২, ৬–২ গেমে হারিয়েছেন সার্বিয়ান এই ষষ্ঠ বাছাই। দ্বিতীয় সেটের খেলা চলাকালে পেটের ব্যথায় ভুগেছেন জোকোভিচ এবং জয়ের পর স্বীকার করেন, ম্যাচটি তাঁর জন্য কঠিন হয়ে উঠেছিল। নিজস্ব ব্র্যান্ডের ইলেকট্রোলাইট পানীয়র সঙ্গে ওষুধ খাওয়ার পর ছন্দে ফেরেন ছেলেদের এককে রেকর্ড ২৪ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী কিংবদন্তি।
ম্যাচ চলাকালীন ওষুধ খান জোকোভিচ