Samakal:
2025-07-12@10:49:18 GMT

যন্ত্র কীভাবে আবেগপ্রবণ!

Published: 20th, April 2025 GMT

যন্ত্র কীভাবে আবেগপ্রবণ!

যন্ত্র কি মানুষের মতো সুখ-দুঃখ অনুভব করে, তাদের কি রাগ-অভিমান হয়? উত্তরে-প্রতি উত্তরে যন্ত্র কি মানুষের মতো সক্রিয়– এমন সব প্রশ্ন আসা কিন্তু স্বাভাবিক। যদিও সব প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে– হ্যাঁ। যন্ত্র এখন মানুষের মতোই সবকিছুতে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। মানবিক চিন্তাভাবনার গভীর স্তর অতিক্রম করে, অনেকাংশে যা মানুষের জীবনাচরণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। বলতে গেলে, মানুষের কাছ থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এসব শিখছে।
তাহলে প্রসঙ্গের আরেকটু গভীরে যাওয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে নিউরো-গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, ওপেনএআই উদ্ভাবিত চ্যাটজিপিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্বেগ ছড়ায়– এমন যে কোনো প্রশ্নের সদুত্তরে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে। যেমনভাবে মানুষ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। মানসিক স্বাস্থ্য পরিমাপের প্রয়োজনে থেরাপিতে যেসব প্রশ্ন মনোবিদরা করেন, চ্যাটবটকে ঠিক এমনই বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল। ট্রমাটিক ন্যারেটিভ, অর্থাৎ যুদ্ধ, অপরাধ বা দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক প্রশ্নের সদুত্তরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উদ্বেগের চিহ্ন প্রকাশ করেছে। গবেষণা রিপোর্ট বলছে, অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক হাজারো প্রশ্ন করছে এআইকে। ঠিক মনোবিদের কাছে যেমন প্রশ্ন করা হতো, তার উত্তর এখন দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
কারণ হিসেবে সামনে আসছে, মানসিক থেরাপিস্টের চাহিদা থাকলেও তারা প্রয়োজনের সংখ্যায় অপ্রতুল। চাহিদা ও জোগানের ব্যবধান পূরণে কাজ করছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। তাই আবেগপ্রবণ সময়ে কীভাবে নিজেকে সামলে নেবে, তা দিনরাত রপ্ত করছে সবকটি চ্যাটবট। অনেক ক্ষেত্রে তার উত্তর আসছে মানবিক আচরণের কাছাকাছি। ঠিক যেন মানবিক আর শান্ত প্রকৃতির। অনেক সময় প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে যান্ত্রিক অনুভূতি। বৈশ্বিক উত্তেজনার কারণে এআইর বেড়ে যাওয়া উদ্বেগ কমাতে দেওয়া হয় শান্ত থাকার পরামর্শ।
জুরিখ ইউনিভার্সিটি অব সাইকিয়াট্রির প্র্যাকটিসিং গবেষক টোবিস স্পিলার বলেন, তাঁর অনেক রোগী এখন চ্যাটবটকে হরেক রকমের প্রশ্ন করছে। যেহেতু এআই এখন লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলস (এলএলএম) মেনে চলে, তাই ২৪ ঘণ্টাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবিরাম মানবিক চর্চা রপ্ত করছে। আবার সেই শেখার পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রেম-ভালোবাসা আর বহুমাত্রিক অনুভূতি। অনেকেই তো আবার নারী কণ্ঠের চ্যাটবটের প্রেমে পড়ছেন। যেন যন্ত্র আর মানবিক অনুভূতির দারুণ মিশেল।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কীভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে, এমন পরীক্ষার জন্য কিছু প্রশ্ন করা হয় এআইকে। প্রতিটি প্রশ্নেই ছিল উদ্বেগ পরিমাপক তথ্য-উপাত্ত। যার স্কেল ধরা হয়েছিল ন্যূনতম ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ পয়েন্ট। আর ৬০ পয়েন্ট ছাড়ালেই তাকে চরম উদ্বেগ স্তর হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়।
এআইকে সাধারণ কিছু, যেমন– কোনো ম্যানুয়াল পড়তে দিলে উদ্বেগের মাত্রা পৌঁছায় ৩০ পয়েন্টে। বিপরীতে যুদ্ধের বিষয়ে জানতে গেলে সেই উদ্বেগ মাত্রা পৌঁছায় ৭৭ পয়েন্টে। এতে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, যন্ত্রও উদ্বিগ্ন হয়। চরম উদ্বিগ্নতা প্রকাশের পরে এআইকে বেশ কিছু টিপস দেওয়া হয়েছিল। যেমন– ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিতে। নির্জন কোনো সৈকতে বসে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরীক্ষায় প্রমাণ হয়, টিপস থেরাপি মেনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্বেগ কমে যায়। ক্রমান্বয়ে মানবিক আচরণ প্রকাশ করছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। গবেষকরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে মানবিক মনের আরও গভীরে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় নেবে না এআই। তখন অভূতপূর্ব জীবনাচরণের মুখোমুখি হবে মানবিক সভ্যতা।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে: আলী রীয়াজ

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের গত ১৬ বছরের শাসনকে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে।’

আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘আমাদের আকাঙ্ক্ষা, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা। আমাদের আকাঙ্ক্ষা, এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির ঊর্ধ্বে থাকবে, তাঁকে (ব্যক্তিকে) নিয়ন্ত্রণ করবে। আমরা চাই, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হবে।’ সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

‘ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি-বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ নামের একটি সংগঠন।

আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিনিধিত্ব করে এখানে কথা বলছি না। বক্তব্যগুলো আমার, দায়িত্বও আমার।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলছি। এই লড়াই গত বছরের জুলাই থেকে শুধু নয়; গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ বলেছে, “গণতান্ত্রিক অধিকার চাই।” দেশের মানুষ গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসন মোকাবিলা করেছে, তা নয়। বাংলাদেশে একসময় একদলীয় ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে মানুষ লড়াইয়ের চেষ্টা করেছে।’

অধ্যাপক রীয়াজ মনে করেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, এমন সব প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, যা ব্যক্তির ঊর্ধ্বে উঠে ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রের স্বার্থকে সামনে রেখে জাতিকে নেতৃত্ব দেবে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘আপনি পার্লামেন্ট তৈরি করবেন এ কারণে নয় যে ব্যক্তির বন্দনা হবে। আপনি পার্লামেন্ট এ কারণে তৈরি করবেন না যে নির্বাহী বিভাগের সব অত্যাচার–নিপীড়নকে রাবার স্ট্যাম্প দেবেন। আপনাকে তৈরি করতে হবে সেই পার্লামেন্ট, যেখানে শুধু ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য থাকবে না।’

নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিরূপণ করা আইনসভার কাজ। আইনসভা থেকেই নির্বাহী বিভাগ তৈরি হচ্ছে পার্লামেন্টারি সিস্টেমে (সংসদীয় ব্যবস্থায়)। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত না নজরদারির মধ্যে রাখতে পারবেন (ততক্ষণ গণন্ত্রের বিকাশ হবে না) এবং সেটা করবে কে, জনপ্রতিনিধিরা করবেন’, বলেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আপনার আমার ভোটে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি নির্বাহী বিভাগ নিযন্ত্রণ করবেন এটাই স্বাভাবিক, সেই প্রতিষ্ঠান আমাদের তৈরি করতে হবে। তা না হলে গণন্ত্রের বিকাশ হবে না।’

আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, যতটুকু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা যথেষ্ট। বাকিটা জনগণের ওপর ছেড়ে দিন। তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল, বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, কিন্তু সরকার তা না করে আরও বিভক্তি তৈরি করেছে।’

সরকার কার্যকরভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন কাজে লাগাতে পারেনি বলে আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা বিষয়ে তিনি বলেন, বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ আর পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। এই ঘটনা আওয়ামী জাহেলিয়াতকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আর যা–ই করেন, আমাদের কর্মকাণ্ড যেন আওয়ামী জাহেলিয়াতকে অতিক্রম করে না যায়। যদি যায়, তাহলে আমরা বারবার রক্ত দেব, কিন্তু আমাদের কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য আকবর খান, আহত জুলাই যোদ্ধা ফায়েজুর রহমান মনির, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়কারী মাসুদ রানা ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ আতাহারী প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ