হবিগঞ্জ জেলার ভারত সীমান্তে টহল জোরদার ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে বিজিবি। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বিদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের পুশইন (জোরপূর্বক প্রবেশ) করার একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।

বিজিবি জানায়, ১০৩.২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। তবে, যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবি সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছেন।

বিজিবির ৫৫ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.

তানজিলুর রহমান বলেন, “বিজিবি সদর দপ্তরের নিদেশনা অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আমাদের প্রতিটি বিওপিতে (বর্ডার আউট পোস্ট) টহল জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় সন্দেহভাজন সব চলাচলের ওপর কঠোর নজরদারি চলছে।”

আরো পড়ুন:

বিজিবির অভিযানে এপ্রিলে শত কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী জব্দ

ঝিনাইদহ সীমান্তে নারী-শিশুসহ আটক ৪৪

আরো পড়ুন: খাগড়াছড়িতে ৬৬ ভারতীয়র অনুপ্রবেশ

তিনি বলেন, “সীমান্তে যে কোনো ধরনের পুশইন প্রতিরোধে আমরা প্রস্তুত। আমাদের মূল লক্ষ্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।”

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত এলাকার প্রতিদিনই সাধারণ মানুষদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ এবং প্রচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সীমান্তের বিশাল এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় ২৪ ঘণ্টা যে কোনো সন্দেহজনক অনুপ্রবেশ চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

ঢাকা/মামুন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন ঘটনা নেই, নজরদারিতে শিথিলতা 

দেশে গত ৯ বছরে বড় কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য প্রকাশ্য তৎপরতাও দেখা যায়নি। যদিও বিভিন্ন সময়ে ভেতরে-ভেতরে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছিল উগ্রবাদে সম্পৃক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী। তবে বড় হামলার শক্তি অর্জন করতে পারেনি তারা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এই গণ-আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং গুলি করে মানুষ হত্যায় জড়িয়ে পড়েন একশ্রেণির পুলিশ সদস্য। ফলে জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশও। ভঙ্গুর অবস্থা থেকে পুলিশকে আবার সংগঠিত করে পুলিশি কার্যক্রম শুরু হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একরকম বন্ধ হয়ে গেছে উগ্রবাদীদের ওপর নজরদারি।

দেশে গত তিন দশকে যেসব জঙ্গি হামলা হয়েছে, তাতে চারটি সংগঠনের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে। এগুলো হলো হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামি বাংলাদেশ (হুজি-বি), জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), নব্য জেএমবি ও আনসার আল–ইসলাম। 

আরও পড়ুনহোলি আর্টিজানে হামলা: নৃশংসতার সেই রাতের ৯ বছর আজ ৫২ মিনিট আগেবড় হামলার ঘটনা না থাকলেও নজরদারি বন্ধ হলে পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতিতে উগ্রবাদের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর বেশি আলোচনায় আসে নব্য জেএমবি। সেই হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী ১৫টি অভিযানে ৬৪ জন নিহত হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সিরিয়ায় আইএসের পতনের পর অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও তাদের অনুসারীরা আর সংগঠিত হতে পারেনি।

এবার বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকেও বাংলাদেশের ৩ ধাপ উন্নতি হয়েছে। এ বছরের ৫ মার্চ সিডনিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের (আইইপি) বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচক বা জিটিআই ২০২৫ প্রকাশ করে। এবার সন্ত্রাসবাদের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। স্কোর ৩.০৩। আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩২তম। এবার দক্ষিণ এশিয়ায় সূচকে সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। দক্ষিণ এশিয়ায় খারাপের দিক থেকে শীর্ষে অবস্থানে আছে পাকিস্তান, দ্বিতীয় স্থানে আফগানিস্তান ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, জঙ্গিবাদের বিস্তার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ। অনেক ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক প্রভাব জঙ্গিবাদে বড় ভূমিকা রাখে। এ জন্য বাংলাদেশ বর্তমানে ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় আছে তা বলার সুযোগ নেই। কারণ, অনলাইনে এখনো উগ্রবাদ প্রচারের তৎপরতা রয়েছে।

আরও পড়ুনহোলি আর্টিজানে হামলা: ৭ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ১৭ জুন ২০২৫

এদিকে মালয়েশিয়ায় জঙ্গি নেটওয়ার্কে জড়ানোর অভিযোগে ৩৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম দ্য স্টার ও দ্য ভাইবস–এর খবর অনুযায়ী, গত ২৪ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে। ওই দেশের সরকার জানিয়েছে, এই ব্যক্তিরা মালয়েশিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শ প্রচার করছিলেন। পাশাপাশি তাঁদের কমিউনিটির (যাঁদের সঙ্গে থাকেন) ভেতরে সদস্য সংগ্রহের সেল গঠন করেছিলেন।

এসব বিষয় উল্লেখ করে জঙ্গিবাদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সঙ্গে। সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মাসুদ করিম প্রথম আলোকে বলেন, দেশে বর্তমানে জঙ্গি হামলার বড় কোনো ঝুঁকি নেই। তবে স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখতে নজরদারি চলছে।

আরও পড়ুনচার মাস প্রস্তুতি নিয়ে হোলি আর্টিজানে হামলা০১ জুলাই ২০২৩

উঠেছে বিতর্ক, এখন ভয়

উগ্রবাদ নির্মূলে কাজ করা বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপকভাবে তৎপর ছিল। তবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলার নামে বিরোধী রাজনৈতিক মত দমনে নিরীহ ব্যক্তিদের হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগও ছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এমন অভিযোগ আরও তীব্র হয়। এমন পরিস্থিতিতে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রকৃত কার্যক্রমও বিতর্কের মুখে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও ওঠে।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনেও এ বিষয়টি উঠে আসে। ১৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসবাদ সারা বিশ্বে একটি বাস্তব হুমকি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ২০১৬ সালের হোলি আর্টিজানে হামলার মতো ঘটনা এর প্রমাণ। তবে এই হুমকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সততা, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি ও আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় অটল থাকা জরুরি। সরকার সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণাকে যখন রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন তা আইনের শাসন, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত কর্মকর্তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। আবার জঙ্গিবাদে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার হওয়া অনেকে এখন অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেআইনি আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবাদ নির্মূলের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিটগুলোতে যোগ দেওয়া নতুন কর্মকর্তারাও দায়িত্ব পালনে অস্বস্তিতে আছেন। যার কারণে উগ্রবাদের ওপর নজরদারিতে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুনহোলি আর্টিজান হামলা: যে প্রশ্নগুলো তোলা জরুরি০১ জুলাই ২০২২

জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে অনেক দিন ধরে কাজ করছে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিট। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মুহূর্তে উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর তাদের নজরদারি নেই বললেই চলে। উগ্রবাদী কার্যক্রমের বিষয়ে অনলাইন মাধ্যমেও আগের মতো তাদের তৎপরতা (সাইবার প্যাট্রোলিং) নেই। সন্দেহভাজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের কার্যক্রমও কখনো খুব সীমিত পরিসরে, আবার কখনো বন্ধ থাকছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উগ্রবাদকে নির্মোহভাবে দেখে ঝুঁকি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

জঙ্গিবাদ বিষয়েবিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে পর পর বেশ কিছু জঙ্গি হামলায় অনেকে নিহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। পাশাপাশি জঙ্গি বার্তা সামনে নিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পশ্চিমাদের দৃষ্টি আকর্ষণে কিছু নাটকীয় ঘটনাও ঘটেছে। কেবল ধর্মকর্ম পালনকে পর্যবেক্ষণে নিয়ে আটক করে জঙ্গি তকমা দেওয়ার ঘটনাও দেখা গেছে। তবে ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের পর প্রকৃতপক্ষে জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকেই জামিনে মুক্ত বা বিভিন্নভাবে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁদের ওপর নজরদারিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শৈথিল্য দেখছি। এটা বেশি দিন চলতে দেওয়া ঠিক হবে না। এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব না দিলে সেটা পরে বড় বিপদের কারণ হতে পারে।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হালদায় মা মাছ রক্ষায় এবার ড্রোন দিয়ে নজরদারি
  • নতুন ঘটনা নেই, নজরদারিতে শিথিলতা