ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর নৃশংস হামলার পর চার দিনের যুদ্ধ শেষে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আবার কঠোর অবস্থান জানিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন দেশটি র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সোমবার (১২ মে) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, “ভারত আর সন্ত্রাসবাদীদের চোখরাঙানি সহ্য করবে না।”

একই সঙ্গে তিনি পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেন, “বাঁচতে হলে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো নির্মূল করতে হবে।”

আরো পড়ুন:

নূর খান ঘাঁটিতে ভারতীয় হামলা মার্কিন হস্তক্ষেপের কারণ: এনওয়াইটি

পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি: আইএসপিআর প্রধান

“ভারত এখন আর সন্ত্রাসবাদীদের চোখরাঙানি সহ্য করবে না। নিরপরাধ নাগরিকদের রক্তপাতের জবাব কঠোরভাবে দেওয়া হবে। যারা ভারতের নিরাপত্তা ও নাগরিকদের শান্তি বিঘ্নিত করতে চাইছে, তারা কড়া জবাব পাবে,” বলেন তিনি।

মোদি বলেন, “ভারতের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যা প্রয়োজন, তাই করা হবে।”

পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি সাফ বলেছেন, “পাকিস্তান যদি বাঁচতে চায়, তাহলে তাদের নিজেদের মাটিতে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসের পরিকাঠামো ধ্বংস করতে হবে। পাকিস্তানের উচিত, নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, না হলে প্রতিক্রিয়া অনিবার্য।”

 “সন্ত্রাসবাদ ও শান্তি একসঙ্গে চলতে পারে না। পাকিস্তান এক দিকে শান্তির বার্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছে– এই দ্বিচারিতা আর চলবে না।”

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে মোদি বলেন, “কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে। কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার কোনো প্রয়োজন নেই। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সব সমস্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবেই সমাধান হওয়া উচিত।”

তিনি বলেন, “এবার পাকিস্তানের সঙ্গে কথা হলে সন্ত্রাসবাদ নিয়েই কথা হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে কথা হলে এবার পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই কথা হবে। আজ বুদ্ধপূর্ণিমা, শান্তির পথও যুদ্ধ দিয়ে হয়।”

তিনি আন্তর্জাতিক মহলকে ভারতীয় অবস্থান স্পষ্ট করে জানানোর জন্য তার দেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো সক্রিয় করার নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি জনগণের প্রতি শান্তি বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, “আমি দেশের নাগরিকদের ধৈর্য রাখার অনুরোধ করছি। আমাদের সেনাবাহিনী ও সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশ একসাথে থাকলে, কেউ আমাদের বিভক্ত করতে পারবে না।”

বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার বিষয়ে মোদি বলেন, “আমাদের স্কুল-কলেজ, সাধারণ নাগরিকের বাড়িঘর, মন্দিরকে নিশানা করেছে পাকিস্তান। এখানেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্ব দেখল কীভাবে পাকিস্তানের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের কাছে ধুলিসাৎ হয়েছে; আকাশেই বিনষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। 

“তিন দিনে পাকিস্তানকে যা করা হয়েছে, যা তারা ভাবতেই পারেনি। এখন তারা বাঁচার রাস্তা খুঁজছে। দেশে দেশে ঘুরছে। খারাপভাবে হেরে যাওয়ার পরে ১০ মে পাকিস্তানি সেনা আমাদের ডিজিএমওর দ্বারস্থ হয়। তার আগে আমরা পাকিস্তানের মাটিতে থাকা সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছি।”

তিনি বিভ্রান্তিমূলক গুজবে কান না দেওয়ার জন্য এবং গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করার দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের প্রশংসা করেন মোদি। তিনি বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা কোনো রাজনৈতিক বিভাজনের বিষয় নয়।”

“দেশ যখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন দলমত নির্বিশেষে সবাই একজোট– এটাই ভারতের শক্তি।” 

এই ভাষণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের বার্তা পৌঁছে দিতে চায় যে, ভারত শান্তি চায়, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের কাছে মাথা নোয়াবে না।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
  • অবিলম্বে গণভোটের দাবি চাকসুর
  • ক্ষমতার লোভে কেউ কেউ ধর্মকে ব্যবহার করছে: আব্দুস সালাম
  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম