প্রেক্ষাগৃহ থেকে নায্য হিস্যা চান প্রযোজকেরা
Published: 14th, May 2025 GMT
প্রেক্ষাগৃহ থেকে নায্য হিস্যা পাওয়ার প্রশ্নে ঐকমত্যে এসেছেন ঢাকাই সিনেমার প্রযোজকেরা। আজ বুধবার দুপুরে গুলশান-২ নম্বরের এক রেস্তোরাঁয় এক বৈঠক করেছেন তাঁরা। বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৈঠকের ছবি পোস্ট করেছেন তাঁরা।
বৈঠক নিয়ে প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রযোজকের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। প্রেক্ষাগৃহের মানি শেয়ারিংয়ের নায্য হিস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
আরও পড়ুনএসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে এত বিল১৩ মে ২০২৫গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোতে ‘এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে “অন্যায্য” বিল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৈঠকে বসলেন প্রযোজকেরা।
সংবাদে বলা হয়, স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, লায়ন সিনেমাস, শ্যামলী, মধুমিতাসহ দেশের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সব প্রেক্ষাগৃহেই এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ কেটে নেওয়া হয়। প্রেক্ষাগৃহের এই ‘অন্যায্য’ বিল মেটাতে গিয়ে ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রযোজকেরা।
তবে মাল্টিপ্লেক্সগুলো বলছে, চিরকাল ধরেই এমন বিল নেওয়া হয়।
এর মধ্যে এসি রক্ষণাবেক্ষণের বিল কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন প্রযোজকেরা। টিকিট বিক্রির অর্থের নায্য হিস্যা চেয়েছেন তাঁরা।
শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘আমরা প্রদর্শকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে নায্য বণ্টন চাই। আমরা আশা করি, তাঁরা আমাদের সঙ্গে ডায়লগে অংশ নেবেন; নায্যতার ভিত্তিতে সমাধান করবেন।’
বৈঠকে ছিলেন প্রযোজকদের সঙ্গে আসন্ন ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা চলচ্চিত্রের পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীরাও ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেন শাহরিয়ার শাকিল, রেদওয়ান রনি, শিহাব শাহীন, নুসরাত ইমরোজ তিশা, রায়হান রাফী, জাহিদ হাসান অভি, শাহরিন আক্তার সুমী, মোহাম্মদ আজিম হারুন, আবুল কালাম, সঞ্জয় সমদ্দার, শরাফ আহমেদ জীবন, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় ও আবুল ফজল মোহাম্মদ ইউনুস।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান: উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ
তিন দাবিতে লং মার্চ কর্মসূচি নিয়ে সকালে রাস্তায় মেনে গভীর রাত অবধি রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থান নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল নিক্ষেপ করা হয়।
রাত ১০টার দিকে জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গিয়ে হাজির হন উপদেষ্টা মাহফুজ। তার প্রায় ১৫ মিনিট পর বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন তিনি।
মাহফুজ আলম মোটের ওপর মিনিট দুয়েক কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে মাহফুজ বলেন, “জবি শিক্ষার্থীদের কথা এই সরকার শুনবে। তাদের সংকট নিরসনে আমাদের বারবার বসতে হবে।”
আরো পড়ুন:
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শাবিপ্রবিতে ছাত্রদলের কর্মসূচি
রাজশাহী কলেজে হোস্টেল ভাড়া কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জবির সংকট সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলোর বিষয়ে কথা বলতে প্রস্তুত।“
“এটা এক দিনে সমাধানযোগ্য বিষয় নয়, আমাদের বারবার বসতে হবে। রিলেভেন্ট মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছে। বাজেটসহ অন্যান্য দিক থেকেও সমস্যাগুলোর সমাধানে আমরা কাজ করব”, যোগ করেন মাহফুজ।
জবি শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি বলেন, “আপনারা ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এ বিষয়ে আগামীকাল (১৫ মে) শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।”
পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টেনে মাহফুজ বলেন, “আজকে কিছু পুলিশ সদস্য হয়তো উসকানি..।”
তার বক্তব্য মিনিট দুয়েক গড়াতেই শিক্ষার্থীরা মাহফুজের উদ্দেশে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান ধরেন। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ভিড় থেকে কেউ একজন মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে একটি প্লাস্টিকের পানির বোতল ছুড়ে মারেন, যা সরাসরি তার মাথায় গিয়ে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার অনুভূতি নিয়ে মাহফুজ আলমকে মাথায় হাত রাখতে দেখা যায়।
যদিও কে বা কারা বোতল ছুড়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেটি বোঝা যায়নি। তবে ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে, মাহফুজ আলমের মাথায় পানির বোতল এসে পড়ছে।
ঘটনার পর উপদেষ্টা মাহফুজ বক্তব্য বন্ধ করে দেন এবং আর কথা বললেন না জানিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান।
উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট জবি শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করার কথা তাদের।
এরপর আর বক্তব্য দেন এগোননি মাহফুজ আলম। জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থান স্থল ছেড়ে চলে যান। ফলে সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা অথবা বিক্ষোভকারীদের পক্ষে দাঁড়ানোর পরিষ্কার বার্তা দিতে পারেননি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠন মাহফুজ।
পূর্ণাঙ্গ আবাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঘোষিত বাজেট কাটাছেড়া না করা এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়ে বুধবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে পুরান ঢাকার সদরঘাটে জবি ক্যাম্পাস থেকে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
লং মার্চ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাওয়ার পথে রমনার মৎস্য ভবন ও কাকরাইল মোড়ে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে এক পর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ করে।
রাত পৌনে ১২টায় এই খবর লেখা পর্যন্ত জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ের রাস্তায় অবস্থান করছেন। তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার বিষয়ে আলাপ করছিলেন। তবে কী ধরনের কর্মসূচি, সে বিষয়ে জানা যায়নি।
বুধবার (১৪ মে) কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নিয়ে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান জবি শিক্ষার্থীরা। তবে এখনো সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য কোনো বার্তা আসেনি।
বুধবার বিকেলেই আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাতে যান জবি উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম। কিছুক্ষণ পর সেখানে যোগ দেন জবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমিন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আলোচনায় অংশ নিতে যান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইস উদ্দিন। আলোচনা শেষ হলেও সরকারের কাছ থেকে তারা কোনো বার্তা পাননি।
জবির এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আন্দোলন করি, আমাদের ওপর লাঠিচার্জ হয়। অথচ ঢাবি থেকে কেউ আসলে তাদের ঠান্ডা পানি দেওয়া হয়। আমাদের দাবি যৌক্তিক— এটি মানতেই হবে।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, “আমরা মোড়ে আসা মাত্রই অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের ওপর গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রশাসনের কোনো বার্তা পাইনি।”
আরেক শিক্ষার্থী তৈমুর মবিন বলেন, “আগামীকাল থেকে পুরান ঢাকার সব মোড় ব্লক করে দেওয়া হবে। সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদের দাবি মানতেই হবে।”
তবে তৈমুরের বক্তব্যই কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নয় বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী পদযাত্রায় অংশ নিয়ে যমুনার দিকে রওনা হন। গুলিস্তান মাজার গেট ও মৎস্য ভবনে পুলিশের বাধা পেরিয়ে তারা কাকরাইল মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ অতর্কিত টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গরম পানি ছোড়ে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চললেও সরকারের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস বা বার্তা না পেয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে রাজধানীজুড়ে।
ঢাকা/লিমন/রাসেল