রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে বিক্ষোভরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও কয়েক শ শিক্ষক–শিক্ষার্থী। আজ বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বাসে করে এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এসব শিক্ষক–শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীনও রয়েছেন।

দুপুরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের মুখে ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর বেলা দুইটার দিকে প্রায় দুই শ শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকেলে তাদের সঙ্গে ওই সব শিক্ষক–শিক্ষার্থী এসে যোগ দেন। তাঁরা সবাই নিজেদের দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে আন্দোলন বন্ধ করবেন না তাঁরা। হামলার অনুমতি দেওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) বিচারের দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সংঘর্ষে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো.

রইছ উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’

এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। সহকারী প্রক্টরকে পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচরণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে যাওয়া হবে না।

এর মধ্যে বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যায়। রাত আটটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করছিলেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। ঘণ্টাখানেক পর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ কাকরাইলে যমুনা অভিমুখী সড়কে এসে অবস্থান নেন। তাঁদের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, এখানে ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে। আইন ভঙ্গ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

আরও পড়ুনপুলিশের লাঠিপেটা–কাঁদানে গ্যাস, যমুনা অভিমুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের লংমার্চ ছত্রভঙ্গ৭ ঘণ্টা আগেচিকিৎসা নিয়ে আবার আন্দোলনে

যমুনা অভিমুখী লংমার্চে পুলিশের সঙ্গে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে ৩৬ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে বিকেলে তাঁরা আবার আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, ‘পুলিশ আমার বুকে লাথি মারে। লাঠি দিয়ে ঘাড়ে আঘাতও করে। মেডিকেলে প্রায় দুই ঘণ্টা ছিলাম। ডাক্তার ১০ দিনের বেড রেস্ট (বিশ্রাম) দিয়েছিল। সবাই বাসায় যেতে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু বাসায় যেতে মন চাচ্ছে না। আমাদের দাবি আদায়ে সহপাঠীদের সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছি।’

আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৬ জন, ভর্তি ২১ ঘণ্টা আগে

পুলিশের লাঠিপেটায় ডান হাতে ‘ফ্র্যাকচার’ হয়েছে বলে জানান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির নাদিব সংগ্রাম। তিনি বলেন, ‘সহপাঠীরা আন্দোলন করছেন, আর আমি হাসপাতালে শুয়ে থাকব এটা মানতে পারছি না। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার এসেছি।’

ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল চোখের ডান পাশে লাগে। হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি, আমাদের ভাইবোনেরা এখনো অবস্থান করছেন। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার এসেছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন করছ

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক

গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।

জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’

অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।

জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ