সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একটি ইটভাটার গ্যাসের তাপে ৯৭ কৃষকের প্রায় ২০০ বিঘা জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকদের আপত্তির পরও মনির হাজি নামের এক ব্যক্তি অবৈধভাবে কৃষিজমির মাঝখানে ভাটা স্থাপন করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এজিএন নামের অবৈধ এ ভাটাটির অবস্থান উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের স্বরূপপুর গ্রামে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার রাতে গরম বাতাস বইতে থাকে। এতে ফুল বের হওয়া কাঁচা ধান পুড়ে যায়। সকালে ধানের অবস্থা দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন কৃষকরা। খবর পেয়ে বুধবার শাহজাদপুর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল হক ঘটনাস্থলে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। 

কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল হক বলেন, ইট পোড়ানোর সময় ভাটায় এক ধরনের গ্যাস জমে। হয়তো জমে থাকা সেই গ্যাস কোনোভাবে চুল্লি দিয়ে বের হয়ে গেছে। তাপে ৯টি স্কিমের ১৯৩ বিঘা জমির ২৩১ দশমিক ৬ টন ধান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এতে ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

এদিকে বুধবার বেলা ১১টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপজেলা পরিষদে এসে ভাটা মালিকের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

কামরুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিত অভিযোগ দেন। 

এ সময় কথা হয় ষাটোর্ধ্ব ভুক্তভোগী এক নারী কান্নাভেজা চোখে তিনি জানান, স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। সন্তানরা খবর নেয় না। অনেক কষ্টে ৫০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করছিলেন। কিন্তু মনি হাজি ইচ্ছে করে ভাটার আগুন ছেড়ে দিয়ে সব ধান পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন নিজে কী খাব, স্বামীকেই বা কী খাওয়াব? 

ভুক্তভোগী হাসানুর প্রামাণিক, ফিরোজা বেগমসহ কয়েকজন কৃষক জানান, গত বছরও মনি হাজি ভাটার আগুন ছেড়ে দিয়ে ধান পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। আন্দোলনের মুখে কয়েকজনকে নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দেন। কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি কৃষকদের ক্ষতি করেই যাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে কথা বলতে এজিএন ভাটায় গেলে মালিক বা ব্যবস্থাপককে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকেই তারা পলাতক। তাদের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, কৃষি কর্মকর্তা মাঠ পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে কৃষকের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি, ইটভাটাটির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ কর মকর ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘সাগরত ইলিশ ধরিত ন পারির, চোখেমুখে অন্ধহার দেহির’

বৈরী পরিবেশের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারছে না কক্সবাজার উপকূলের কয়েক হাজার ট্রলার। বেকার হয়ে পড়েছেন ১ লাখের বেশি জেলে। অধিকাংশ ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে।

আজ মঙ্গলবার সকালে নদী নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা অলস সমায় কাটাচ্ছেন। সেখানে দেখা হয় জেলে জুবাইদুল ইসলামের (২৫) সঙ্গে। সাগর উত্তাল থাকায় গত সাত দিন ইলিশ ধরতে যেতে পারেননি। সংসার কীভাবে চলবে, সে ভাবনায় দিন কাটছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরি সাগরত ইলিশ ধরিত ন পারির। সাগর বেশি গরম। ট্রলারত বই বই টেনশন গরির (করছি)-সংসার কেনে (কীভাবে) চালাইয়ুম। ঘরত মা-বাপ, বউ আছে। তারা ঠিক মতন একবেলা খাইত ন পারের। চোখেমুখে অন্ধহার দেহির।’

জুবাইদুলের বাড়ি সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল গ্রামে। কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায় থেকে সাত বছর ধরে তিনি ট্রলারে জেলে শ্রমিকের কাজ করছেন। ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়নি জানিয়ে জুবাইদুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ১৭ জুন একটি ট্রলার নিয়ে তাঁরা ১৫ জন জেলে সাগরে ইলিশ ধরতে গিয়েছিলেন। ইলিশের সন্ধানে সাগরে তাঁরা সাত দিন অবস্থান করে গত ২২ জুন ঘাটে ফিরে আসেন। তত দিনে জালে ধরা পড়ে ১৪ মণ লইট্যা মাছ। বিক্রি করে পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার টাকা। অথচ সমুদ্রযাত্রায় ট্রলারে খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। লোকসান হলে জেলেদের সংকট বাড়ে।

পাশের আরেক ট্রলারের জেলে কামরুল হাসান (৪৫) বলেন, গভীর সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছে ভরপুর, কিন্তু সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিন সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩ বছরের জেলে জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে।

আজ সকাল থেকেই কক্সবাজারের আকাশ ছিল মেঘলা। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। এমন আবহাওয়ায় বাঁকখালী নদীর পাঁচ-ছয় কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান করছে তিন হাজারের বেশি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে জেলে থাকেন ১৬-২২ জন। কয়েকজন জেলে ট্রলার পাহারা দিলেও বেশির ভাগ বাড়িতে চলে গেছেন।

কক্সবাজার ফিশিং বোটমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত ১২ জুন ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার মুহূর্তে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। গত ১৮ দিনে সাগরে তিনটি লঘু ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখনো সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অনিরাপদ। ফলে কক্সবাজার সদরসহ মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার ছোট–বড় অন্তত ৬ হাজার ট্রলার ঘাটে পড়ে আছে। কিছু ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে সাগরের কাছাকাছি এলাকায় গিয়ে জাল ফেলে ছোট আকৃতির লইট্যা, ফাইস্যা, পোঁপা, ছুরি ধরে আনলেও ইলিশের দেখা নেই। ইলিশ ধরতে গেলে ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে যেতে হবে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো ট্রলার নেই। ২০ জুলাই পর্যন্ত সাগরের উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার উপকূলে জেলেরা ইলিশ ধরতে যেতে পারছেন না। কাটাচ্ছেন অলস সময়। আজ সকালে নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে

সম্পর্কিত নিবন্ধ