আড়াই মাস ধরে গাজায় কোনো সহায়তা ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। পানীয় জল, খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জ্বালানির অভাবে ধুঁকছে হাসপাতালগুলোও। এর মধ্যেও ফিলিস্তিনের উপত্যকায় বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ইসরায়েলের বিমান হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় গাজায় বহু মানুষ না খেয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উপসাগরীয় সফরের শেষ দিন শুক্রবার আবুধাবিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের গাজা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য এমন একসময় এলো, যখন তিনি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বিদেশ সফর শেষ করছিলেন। সফরে তিনি বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ ভ্রমণ করলেও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইসরায়েলকে বাদ দিয়েছেন। যদিও ব্যাপকভাবে আশা করা হয়েছিল, সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের ফলে গাজা নিয়ে নতুন ঘোষণা আসতে পারে। পুনরায় সেখানে খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রবেশ শুরু হবে। 

তবে এখনও তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্টো গত ৭২ ঘণ্টা ধরে গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণের ফলে সহিংসতার মাত্রা গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় সফরের শেষ দিন শুক্রবার ট্রাম্প আবুধাবিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা গাজার দিকে নজর রাখছি। আমরা অঞ্চলটির যত্ন নেব। সেখানে বহু মানুষ না খেয়ে আছে।’ 

গত ২ মার্চ থেকে গাজায় কোনো সহায়তা ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, সেখানে গুরুতর খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার কাতারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজা নিয়ে নিলে, এটিকে মুক্ত অঞ্চল (ফ্রিডম জোন) বানালে, আমি মনে করি, আমি গর্বিতই হবো। ভালো কিছু হতে দিন। মানুষজনকে ঘরে রাখুন, যেখানে তারা নিরাপদে থাকবে। হামাসকেও মোকাবিলা করা হবে। চলুন, গাজাকে একটি ‘ফ্রিডম জোন’ হিসেবে তৈরি করি। এখানে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িত হতে দিন।’ 

ট্রাম্পের মন্তব্যের পর বৃহস্পতিবার হামাস জোর দিয়ে বলেছে, বিধ্বস্ত অঞ্চলে পুনরায় মানবিক সহায়তা চালু করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এখানে অন্য কোনো আলোচনা একেবারেই অবান্তর। ট্রাম্প আবারও এই অঞ্চলটি দখল করে ‘একটি মুক্ত অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি সতর্ক করে দিয়েছে, গাজা বিক্রয়ের জন্য নয়। 

আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলা উত্তর গাজায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-মুগাইর শুক্রবার বলেন, মধ্যরাত থেকে ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। বিকেল নাগাদ মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। এর আগে বুধ ও বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ছিল আড়াই শতাধিক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৫৩ হাজার ১১৯ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজারের কাছাকাছি। 

উত্তর গাজার বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী উম্মে মোহাম্মদ আল-তাতারি এএফপিকে বলেন, আমরা ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ আমাদের চারপাশের সবকিছু বিস্ফোরিত হয়ে গেল। সবাই এদিক-সেদিক দৌড়াতে শুরু করে। আমরা নিজের চোখে ধ্বংসস্তূপ দেখেছি। সর্বত্র রক্ত, শরীরের বিচ্ছিন্ন অংশ ও মৃতদেহ। আমরা জানতাম না কে মারা গেছে, আর কে এখনও বেঁচে আছে। ৩৩ বছর বয়সী আহমেদ নাসর বলেন, রাতভর বোমাবর্ষণ অব্যাহত ছিল। আমরা ঘুমাতে পারিনি। কোনো নিরাপত্তা নেই। আমরা যে কোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারি। 

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা করে নিয়ে যাওয়া ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৫৭ জন গাজাতেই রয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী। 

গাজায় এখনও বন্দি জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী ইসরায়েলের প্রধান গ্রুপটি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাদের প্রিয়জনদের বের করে আনার একটি ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ হারিয়ে ফেলছেন। 

হোস্টেজস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় ক্রমবর্ধমান হামলা ও ট্রাম্পের এই অঞ্চলে সফর শেষের খবরে জিম্মিদের পরিবারগুলো সকালে গভীর উদ্বেগ নিয়ে ঘুম থেকে উঠেছিল। এই ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া করা হবে একটি বিরাট ব্যর্থতা, যা চিরকাল কুখ্যাতভাবে স্মরণ করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল শ ক রব র ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কারের আলোচনা থাকলেও বাস্তব প্রতিফলন নেই: জোনায়েদ সাকি

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার বাস্তব অগ্রগতি নেই বলে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, সংস্কারের আলোচনা ও প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে না। এখনও ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। এখনও বৈষম্য ও শোষণ-বঞ্চনা চলছেই।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটি আয়োজিত মানববন্ধনে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। ভিসা সমস্যার সমাধান, বেকার ক্যাডেট এবং রেটিংসদের চাকরি নিশ্চিতকরণ এবং ডিপ্লোমাধারীদের সিডিসি প্রদানের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিলের ৫ দফা দাবিতে মেরিনারদের এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টাদের কাছে জানতে চাই- এখনও ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের আস্তানা ধ্বংস করতে না পারলে ক্ষমতায় আছেন কেন? এসব অব্যাহত থাকলে তা হবে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত ও তাদের আকাঙ্খার প্রতি অবমাননা। মেরিনারদের পাঁচদফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে অনতিবিলম্বে এসব দাবি পূরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মানববন্ধনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে দেশের জন্য রেমিটেন্সের পাশাপাশি সম্মানও বয়ে আনেন। দেশের মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে মেরিনারদের দাবি পূরণ করতে পারে।

বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটির মুখ্য সংগঠক ক্যাপ্টেন রেদওয়ান সিকদারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের  সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী প্রীতি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, মেরিন ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম জিলানী, ইঞ্জিনিয়ার রইচ উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ, চিফ অফিসার কায়কোবাদ, ইঞ্জিনিয়ার বজলুল রহমান প্রমুখ।

মেরিনারদের পাঁচদফা দাবি তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বেকার মেরিন ক্যাডেট এবং রেটিংসদের চাকরি নিশ্চিত করতে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে ক্যাডেট ও ফ্রেস রেটিং দ্বিগুণ করা হোক। ডিপ্লোমাধারীদের সিডিসি প্রদানের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। ভিসা সমস্যার সমাধান ও বিদেশি চাকরির বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে হবে। নাবিক প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সবধরনের অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতে হবে। ভেনিজুয়েলাতে বন্দি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে অতিদ্রুত মুক্ত করে আনতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্ধকারের হয়নি অবসান
  • উচ্চশিক্ষার সংকট ও সংস্কার  
  • বুলেটের আঘাত ছাপিয়ে যায় সহোদর হারানোর ব্যথায়
  • সাগর-রুনিকে ঘিরে নির্মিত ‘অমীমাংসিত’ পেল ছাড়পত্র
  • সংস্কারের আলোচনা থাকলেও বাস্তব প্রতিফলন নেই: জোনায়েদ সাকি
  • সোনাক্ষী আর চুপ থাকতে পারলেন না
  • শেকড়ে ফেরাল ফুটবল, ট্রায়ালের ফলাফল কবে
  • ৫০০ বছরের তেঁতুল গাছ
  • বন্দর-কাস্টমসের কার্যক্রম সচল হলেও কাটেনি ভোগান্তি
  • হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের লাশ: প্রশ্ন অনেক, উত্তর খুঁজছে পুলিশ