ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব হস্তান্তরের দাবিতে নগর ভবনের সামনে হাজারো নেতাকর্মী ৭ম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।      

মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ১০টার আগে থেকেই নেতাকর্মীরা  প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাজপথে অবস্থান নেন। আজকে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। 

‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলররাও এতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা নগর ভবনের সামনের মূল সড়কে বসে ‘ইশরাককে মেয়র করো’, ‘ইশরাক তোমার ভয় নাই, নগরবাসী তোমার সাথে’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা চলবে না’, ‘ঢাকাবাসীর অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন। তারা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগও দাবি করছেন। 

২০২০ সালের ডিএসসিসি নির্বাচনে পরাজিত বিএনপিপ্রার্থী ইশরাক হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে চলতি বছরের ২৭ মার্চ আদালত তাকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে তাকে আনুষ্ঠানিক মেয়র ঘোষণা করে। কিন্তু দীর্ঘ এক মাস পেরিয়ে গেলেও তার শপথ গ্রহণ ও দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। আন্দোলনকারীদের দাবি, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।

রাজধানীর ৫২ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বলেন, ‘‘ইশরাক ভাই হলো আমাদের জনতার মেয়র। তাকে মেয়র ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। শুরুর দিন থেকেই আমাদের ওয়ার্ডের সভাপতি রবিউল ইসলাম দিপু ভাইয়ের নেতৃত্বে প্রায় শখানেক নেতাকর্মী নিয়ে আন্দোলনে আছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রতিদিনের মতো মাঠে থাকবেন এবং প্রয়োজনে আন্দোলন আরও কঠোর রূপ নেবে।’’

করিম হোসেন নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘ইশরাক হোসেনকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই অচলাবস্থা শুধু একটি দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয় নয়, এটি এখন বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রশ্নে রূপ নিচ্ছে।’’

‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারের প্রধান মুখপাত্র মশিউর রহমান বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি, তবে সরকার যদি আজকের মধ্যে কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে পরিণতির জন্য তারাই দায়ী থাকবে। আদালতের রায়, নির্বাচন কমিশনের গেজেট সব কিছুর পরও দায়িত্ব হস্তান্তর না হওয়া রাষ্ট্রীয় অবহেলার প্রমাণ।”

এদিকে আন্দোলন শুরুর দিন থেকেই নগর ভবনের মূল ফটকে আন্দোলনকারীরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। বন্ধ রাখা হয়েছে ডিএসসিসির প্রতিটি রুম, লিফট এবং জনসেবামূলক সকল কার্যক্রম। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সেবাপ্রত্যাশীরা ফিরে যাচ্ছেন। 

আন্দোলনের কারণে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবাজার এলাকার সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অফিসগামী মানুষ, সিএনজি ও রিকশাচালক এবং পথচারীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। নগর ভবনের সামনের রাজপথ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

নগর ভবনের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে। তবে এখনো আন্দোলন প্রসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/এএএম//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইশর ক হ স ন অবস থ ন ত কর ম ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগের তদন্ত হোক

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের জঙ্গিবাদী তৎপরতায় যুক্ত হওয়ার অভিযোগটি গুরুতর বলেই অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন মালয়েশিয়ায় উগ্রবাদী মতাদর্শ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এরপর আইন ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, তিনজন ইতিমধ্যে দেশে ফিরেছেন এবং তঁাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর ঘটনাকে বিব্রতকর বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শুক্রবার কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করার কথা জানান। তাঁর বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শ্রমিকদের মধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর মতাদর্শ প্রচার এবং তহবিল সংগ্রহ করে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের এমন একটি চক্র ভেঙে দিয়েছে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। চক্রটি অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিককে নিশানা করে সদস্য সংগ্রহ করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উগ্র ও চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিত বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।

মালয়েশীয় পুলিশপ্রধানের বক্তব্য সন্দেহমুক্ত নয়। সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কেউ কেউ তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে আইএসের সাংগঠনিক ভিত্তি থাকার দাবি সঠিক নয়। তারপরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার অভিযোগকে উড়িয়ে না দিয়ে দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে দেশের ভেতরে কেউ থাকলে সেটাও বেরিয়ে আসবে। এর সঙ্গে কেবল বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয় জড়িত নয়, লাখ লাখ শ্রমিকের জীবিকার প্রশ্নও আছে। গেল শতকের শেষ দশক ও চলতি শতকের প্রথম দশকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও।

জঙ্গিবাদ বিশ্বব্যাপী প্রবণতা। এ থেকে খুব কম দেশই মুক্ত থাকতে পেরেছে। এখানে দুই ধরনের অতিশয়োক্তি আছে। এক পক্ষ মনে করে বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় জঙ্গিবাদী তৎপরতা ছিল। আরেক পক্ষের দাবি, জঙ্গিবাদ বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সহজ পথ ছিল যেকোনো তৎপরতা ও ব্যক্তিকে ‘জঙ্গি’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া। জঙ্গি ইস্যু কাজে লাগিয়ে তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়েছে। আবার অন্যদিকে ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি বলে কিছু নেই, ছিনতাইকারী আছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ে সংঘটিত হোলি আর্টিজানে হামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি এই উত্তর দেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেদিন সেই রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে, তা কি ছিনতাইকারীরা ঘটিয়েছিল? 

মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার যে অভিযোগ উঠেছে, তাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। মালয়েশিয়ার অভিযোগ কতটা সত্য, তা যথাযথ তদন্ত করে বের করতে হবে। দেশের কোনো পক্ষ এর সঙ্গে যুক্ত আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার। সেখানে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে এই ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে বাংলাদেশকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিতে হবে। আবার নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও সরকারকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে।

দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আমরাও আশাবাদী হতে চাই যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, দেশটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তার নিরসন হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ