ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তার সমর্থকরা।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের মূল ফটকের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলন করছেন তারা। মাইকে বাজানো হচ্ছে গান। তাদের স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে চারপাশ।
এদিকে, বিক্ষোভের কারণে অচল হয়ে পড়েছে ডিএসসিসি’র নাগরিক সেবা ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড। নগরর ভবনের ফটকে তালা থাকায় সেবাপ্রত্যাশীরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি।
আরো পড়ুন:
নগর ভবনের সামনে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচি
ইশরাককে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানি দুপুরে
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গবাজার থেকে গোলাপ শাহ মাজার মোড় পর্যন্ত সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খণ্ড খণ্ড মিছিল, ব্যানার আর নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে শত শত আন্দোলনকারী দখল নেন পুরো এলাকা। এই কর্মসূচি টানা কয়েক দিন ধরে চালিয়ে আসছেন ইশরাকপন্থি সমর্থকেরা, ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে।
স্লোগানে বলা হয়- “শপথে আর দেরি কেন, বাধা দিচ্ছে কে?”, “গেজেট হয়েছে, দায়িত্ব দিন!”, “ঢাকাবাসীর রায় মেনে নাও, ইশরাককে চেয়ার দাও!’।
নগর ভবনের ফটকে জনসাধারণের ভিড় ছিল আগের মতোই, তবে তা সেবা পাওয়ার জন্য নয়, বরং ভোগান্তির সাক্ষী হতে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা নুরজাহান বেগম বলেন, “চারদিন ধরে আসছি। কাজ তো হয়নি, বরং প্রতিবার ফিরে যেতে হয়েছে। ভেতরে কেউ নেই, ফটকও বন্ধ।”
ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, “ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। অফিসে ঢুকতেই দিচ্ছে না। কাজ করব কীভাবে?”
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স, নির্মাণ অনুমোদনসহ নাগরিক সেবার গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ। কর্মীরা অফিসে এলেও ভবনে ঢুকতে পারছিলেন না।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রিন্স নামে একজন বলেন, “নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে ইশরাক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করার পর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে। অথচ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ‘আইনি জটিলতার’ অজুহাত দেখিয়ে শপথ গ্রহণে বাধা দিচ্ছেন।”
ইশরাক হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “সরকার ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকাতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে। তাতেই বোঝা যায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা কী ভূমিকা রাখতে চায়।”
তিনি আরো বলেন, “মেয়র পদটা মুখ্য নয়, মুখ্য হলো কতিপয় ব্যক্তির ক্ষমতার লোভ-এটাই আসল সত্য।”
উল্টো সুরে কথা বলেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, আইনি ও প্রক্রিয়াগত ১০টি জটিলতা এখনো নিরসন হয়নি। তাই শপথ গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। গায়ের জোরে নগর ভবন দখল করে আন্দোলন চালানো জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ডিএসসিসি’র কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও দেখা গেছে আন্দোলনে সংহতি জানাতে।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইশরাক হোসেন বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। সেবার নির্বাচনকে ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০২৫ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে। পরবর্তীতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে ইশরাক হোসেন বিজয়ী প্রমাণিত হন এবং নির্বাচন কমিশন তার পক্ষে গেজেট প্রকাশ করে।
ঢাকা দক্ষিণের বাসিন্দা আবুল কাশেম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “নগর ভবন মানেই মানুষের সেবা। রাজনীতি তো মানুষের জন্যই। কিন্তু এই রাজনীতি যদি সেই সেবা বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটার মানে কী?”
ঢাকা/এএএম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ড এসস স ইশর ক হ স ন নগর ভবন র সরক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
দাবি আদায়ে শহীদ মিনারে বিসিএসের ২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তাদের মানববন্ধন
বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার প্রতিবাদে এবং পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, উপসচিব পদে কোটা বাতিলসহ কয়েকটি দাবিতে মানববন্ধন করেছে প্রশাসন ক্যাডার বাদে সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের’ আহ্বানে আজ মঙ্গলবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এই কর্মসূচি পালিত হয়। বিকেল পাঁচটার পর শুরু হয়ে এই কর্মসূচি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চলে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরিষদ জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৬ মের মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহার করা না হলে ২৭ ও ২৮ মে অর্ধদিবস কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা।
এর আগে পরিষদের পক্ষ থেকে একই দাবিতে গত ২ মার্চ পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। এ ছাড়া দাবি আদায়ে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে এক ঘণ্টার কলমবিরতি ও ২৬ ডিসেম্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির জন্য ২৫ ক্যাডারের ১২ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টি সমাধানের জন্য আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টিকে আটকে রাখা হয়েছে। উপরন্তু সম্প্রতি কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন, মন্ত্রণালয়ের ভেতরে মারামারি করছেন, তারপরও তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, পক্ষপাতদুষ্ট জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একটি ক্যাডারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। জবাবদিহিমূলক জনবান্ধব সিভিল সার্ভিসের দাবিকে অগ্রাহ্য করে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর স্বার্থে ৫৫ হাজার ক্যাডার কর্মকর্তার দাবিকে উপেক্ষা করা হলে, তা পরিষদ প্রত্যাখ্যান করবে বলে জানায়।