ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি ইশরাক সমর্থকদের
Published: 20th, May 2025 GMT
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর জন্য বুধবার (২১ মে) সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময়ের মধ্যে তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া না হলে ঢাকা অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে ডিএসসিসি’র নগর ভবনের সামনে চলমান ষষ্ঠ দিনের অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন ঢাকাবাসীর পক্ষে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক সচিব মশিউর রহমান।
মশিউর রহমান বলেন, “বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ঘোষণা না এলে আমরা ঢাকাকে অচল করে দেব। নগরবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠার এই লড়াই আমরা থামাব না।”
আরো পড়ুন:
বৃষ্টি মাথায় কাকরাইলে তিন কারাখানার শ্রমিকদের অবস্থান
নগর ভবনের সামনে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচি
এর আগে, আজ সকাল ১০টা থেকেই নগর ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তারা নগর ভবনের প্রধান ফটকের সামনে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান বাজিয়ে কর্মসূচি আন্দোলন করেন। এসময় ইশরাক সমর্থকদের অনেকেই মঞ্চে বক্তব্যে দেন।
বক্তারা বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিকে দায়িত্ব না দেওয়া গণতন্ত্রের প্রতি চরম অবজ্ঞা। আমরা তা মেনে নেব না।
গত বুধবার থেকে চলা এই অবস্থান কর্মসূচির ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে নগর ভবন। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম। এতে বিপাকে পড়েছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। ঢাকার নাগরিকদের জন্য ২৮টি গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিয়ে থাকে ডিএসসিসি, যার মধ্যে পরিচ্ছন্নতা, জন্মনিবন্ধন, কর আদায়, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, মশক নিধনসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা রয়েছে।
সেবা নিতে এসে দুর্ভোগে পড়া একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা সানাউল জক বলেন, “জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য এসেছিলাম। এসে দেখি, অফিস পুরো বন্ধ। কেউ কোনো তথ্যও দিচ্ছে না।”
আন্দোলনকারীরা জানান, বুধবার সকাল ১০টা থেকে একই স্থানে আরো বৃহৎ পরিসরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
ডিএসসিসির পাঁচটি কর্মচারী ইউনিয়ন এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নগর সেবায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, “যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়রকে দায়িত্ব না দিয়ে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত আসে, তখন আমরা চুপ থাকতে পারি না। আমরা নগর সেবা বন্ধ রেখে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাব।”
জানা গেছে, ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালি, জল সরবরাহ এবং নির্মাণ বিভাগের কর্মচারীরাও কর্মবিরতিতে অংশ নেবেন। এতে নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ঢাকা/এএএম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এসস স নগর ভবন র ড এসস স র জন য র স মন ইশর ক
এছাড়াও পড়ুন:
জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগের তদন্ত হোক
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের জঙ্গিবাদী তৎপরতায় যুক্ত হওয়ার অভিযোগটি গুরুতর বলেই অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন মালয়েশিয়ায় উগ্রবাদী মতাদর্শ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এরপর আইন ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, তিনজন ইতিমধ্যে দেশে ফিরেছেন এবং তঁাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর ঘটনাকে বিব্রতকর বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শুক্রবার কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করার কথা জানান। তাঁর বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শ্রমিকদের মধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর মতাদর্শ প্রচার এবং তহবিল সংগ্রহ করে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের এমন একটি চক্র ভেঙে দিয়েছে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। চক্রটি অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিককে নিশানা করে সদস্য সংগ্রহ করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উগ্র ও চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিত বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।
মালয়েশীয় পুলিশপ্রধানের বক্তব্য সন্দেহমুক্ত নয়। সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কেউ কেউ তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে আইএসের সাংগঠনিক ভিত্তি থাকার দাবি সঠিক নয়। তারপরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার অভিযোগকে উড়িয়ে না দিয়ে দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে দেশের ভেতরে কেউ থাকলে সেটাও বেরিয়ে আসবে। এর সঙ্গে কেবল বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয় জড়িত নয়, লাখ লাখ শ্রমিকের জীবিকার প্রশ্নও আছে। গেল শতকের শেষ দশক ও চলতি শতকের প্রথম দশকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও।
জঙ্গিবাদ বিশ্বব্যাপী প্রবণতা। এ থেকে খুব কম দেশই মুক্ত থাকতে পেরেছে। এখানে দুই ধরনের অতিশয়োক্তি আছে। এক পক্ষ মনে করে বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় জঙ্গিবাদী তৎপরতা ছিল। আরেক পক্ষের দাবি, জঙ্গিবাদ বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সহজ পথ ছিল যেকোনো তৎপরতা ও ব্যক্তিকে ‘জঙ্গি’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া। জঙ্গি ইস্যু কাজে লাগিয়ে তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়েছে। আবার অন্যদিকে ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি বলে কিছু নেই, ছিনতাইকারী আছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ে সংঘটিত হোলি আর্টিজানে হামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি এই উত্তর দেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেদিন সেই রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে, তা কি ছিনতাইকারীরা ঘটিয়েছিল?
মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার যে অভিযোগ উঠেছে, তাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। মালয়েশিয়ার অভিযোগ কতটা সত্য, তা যথাযথ তদন্ত করে বের করতে হবে। দেশের কোনো পক্ষ এর সঙ্গে যুক্ত আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার। সেখানে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে এই ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে বাংলাদেশকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিতে হবে। আবার নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও সরকারকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে।
দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আমরাও আশাবাদী হতে চাই যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, দেশটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তার নিরসন হবে।