নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ওপর এখন থেকে মাঠের চাপ তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। পবিত্র ঈদুল আজহার পর বিভিন্ন ইস্যুতে এই চাপ আরও বাড়ানো হবে।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার এবং ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, সেটি সরকারের ওপর চাপ তৈরির কৌশলেরই অংশ। এ দুটি ইস্যুতে আন্দোলন আরও জোরদার করতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা যৌথ সভা করেন। সভায় আগামীকাল বুধবার থেকে দুই কর্মসূচিতে জনসমাগম আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার হত্যার বিচার এবং আদালতের রায়ের পরেও ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে শপথ না পড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট পথনকশা ঘোষণা না করার বিষয়ে আলোচনার পর স্থায়ী কমিটির নেতারা দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। সভায় কয়েকজন সদস্য অভিমত প্রকাশ করেন যে সরকার নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করছে, তাতে নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে।

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সোমবার রাত সাড়ে আটটায় সভা শুরু হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা চলে। সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।

কথা বলে জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর মাঠের চাপ তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেও যাতে কোনো সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে বিএনপি। কারণ, সরকারকে বিপদে ফেলে নয়, বরং চাপে রেখে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা যথাসময়ে নির্বাচন আদায় করতে চান। ইতিমধ্যে পতিত আওয়ামী লীগের লোকজন হঠাৎ হঠাৎ রাজপথে মিছিল করছে, আবার নানা পক্ষ ইস্যু সৃষ্টি করে রাস্তায় নামছে। এর মধ্য দিয়ে তারা সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে বলে বিএনপির সন্দেহ।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ, বর্তমান সংবিধান বাতিল, গণভোট অনুষ্ঠান, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন—এ বিষয়গুলো সামনে এনে জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ (এনসিপি) কোনো কোনো পক্ষ নতুন করে বিতর্কের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে এমন কিছুর আশঙ্কা করছেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা। বাস্তবে এ ধরনের কিছু হলে তখন সরকার কী ভূমিকা নেবে, পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে, সেটি নিয়ে চিন্তিত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

আজ ব্যাংকক থেকে ঢাকার এক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ধরনের আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন। তিনি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে ‘কালো ছায়া’ দেখছেন বলেও মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া, জনগণের ভোটের যে অধিকার, সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার একটা পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ওপর পর স থ ত ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

মন্ত্রী, এমপিদের ‘আবদারে’ হয়েছিল নতুন নতুন ট্রেন, এখন খরচ ওঠে না

বর্তমানে সবচেয়ে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করা ট্রেনগুলোর একটি বিজয় এক্সপ্রেস। ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর চালুর সময় এটি ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলাচল করত। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনটির যাত্রার স্থান পরিবর্তন করে জামালপুরে নেওয়া হয়। এতে বেড়ে যায় যাত্রার সময়। কমতে থাকে যাত্রীর সংখ্যা। এখন ট্রেনটি চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে খরচই তোলা যাচ্ছে না।

রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, বিজয় এক্সপ্রেসের যাত্রার স্থান পরিবর্তনের আগে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। ফলে লাভ-লোকসানের বিষয়টি বিবেচনায় আসেনি। মূলত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দলের নেতাদের আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনটির যাত্রার স্থান পরিবর্তন করে।

রেলওয়ে সূত্রমতে, জ্বালানি খরচ, লোকবল ও অন্যান্য খরচ বিবেচনায় শতভাগ যাত্রী পরিবহন করার পরও আন্তনগর ট্রেনে লোকসান হয়। এ ছাড়া আছে ইঞ্জিন-কোচের সংকট। এ পরিস্থিতিতে যাত্রীর চাহিদা বেশি না থাকলে নতুন ট্রেন চালু করতে চায় না কর্তৃপক্ষ।

মূলত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দলের নেতাদের আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনটির যাত্রার স্থান পরিবর্তন করে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনীতিকদের চাপে নতুন নতুন ট্রেন চালু, ট্রেনের গন্তব্যস্থল সম্প্রসারণ, নতুন নতুন স্টেশনে ট্রেন থামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবই করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা বলে।

যেমন নুরুল ইসলাম সুজন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকার সময় দিনাজপুর ও আশপাশের জেলাগুলোয় চলাচলকারী প্রায় সব আন্তনগর ট্রেনের গন্তব্যস্থল বর্ধিত করে তাঁর নিজ জেলা পঞ্চগড়ে নেন। মন্ত্রীর ভাইয়ের নামে স্টেশনের নামকরণ এবং নতুন এক জোড়া আন্তনগর ট্রেনও চালু করা হয়।

রেলওয়ে সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে অন্তত পাঁচটি আন্তনগর ট্রেনে পর্যাপ্ত যাত্রী হচ্ছে না। রাজনীতিবিদদের চাপে এসব ট্রেন চালু করা হয়েছে। তবে স্থানীয় মানুষজন ট্রেনগুলোর চলাচল বন্ধ হোক, তা চান না। এমনকি ট্রেন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হলে বাধা আসে। ফলে দিন দিন লোকসানের বোঝা ভারী হচ্ছে। রেলওয়ে এখন প্রতিবছর গড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে লোকসান ছিল ৬৯০ কোটি টাকা।

নুরুল ইসলাম সুজন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকার সময় দিনাজপুর ও আশপাশের জেলাগুলোয় চলাচলকারী প্রায় সব আন্তনগর ট্রেনের গন্তব্যস্থল বর্ধিত করে তাঁর নিজ জেলা পঞ্চগড়ে নেন। মন্ত্রীর ভাইয়ের নামে স্টেশনের নামকরণ এবং নতুন এক জোড়া আন্তনগর ট্রেনও চালু করা হয়।

২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগপর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ৬৬টি নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করে। এ সময়ের মধ্যে মেইল, এক্সপ্রেস, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন চালু করে ৯২টি। অবশ্য জনপ্রিয় প্রায় ৯৮টি মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ একদিকে বন্ধ করে অন্য পথে ট্রেন চালু করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রেলের রুট রেশনালাইজেশন করার উদ্যোগ নেয়। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে কম আয় করা ট্রেন বন্ধ এবং বেশি যাত্রী চাহিদা রয়েছে, এমন পথে ট্রেন বাড়ানো। এ ছাড়া আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়া ট্রেনও বন্ধ করে দেওয়া। এ লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রূপম আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ ও ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছেন। গত প্রায় ছয় মাসে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। তবে এখনো সুপারিশ তৈরি করতে পারেনি কমিটি।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, লাভজনক রুটে ট্রেন বাড়ানো এবং লোকসানি রুট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে কাজ চলছে। অতীতে রাজনীতিকদের ইচ্ছাপূরণের ট্রেনগুলো নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অলাভজনক ও অপ্রয়োজনীয় ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, রেলে বর্তমানে কোচের সংকট আছে। এটার কারণেও রুট রেশনালাইজেশনের কাজ কিছুটা ধীরে এগোচ্ছে। এ ছাড়া একবার একটা ট্রেন কোনো এলাকায় চালু করা হলে তা বন্ধ করতে গেলে স্থানীয়দের কাছ থেকে বাধা আসে। এগুলোও বিবেচনায় নিয়ে এগোচ্ছে রেলওয়ে।

লাভজনক রুটে ট্রেন বাড়ানো এবং লোকসানি রুট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে কাজ চলছে। অতীতে রাজনীতিকদের ইচ্ছাপূরণের ট্রেনগুলো নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অলাভজনক ও অপ্রয়োজনীয় ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হবে।রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান খরচ তোলাই কঠিন

সিরাজগঞ্জ শহর থেকে শহীদ মনসুর আলী স্টেশনের দূরত্ব মাত্র ছয় কিলোমিটার। মনসুর আলী স্টেশনে উত্তরবঙ্গের পথের অনেক ট্রেন থামে। সিরাজগঞ্জ শহরে একটি ট্রেন নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে ট্রেন চালু করা হয়। তবে আশানুরূপ যাত্রী হয় না।

অথচ আগে থেকে ঈশ্বরদী থেকে ঢাকায় একটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করত। সেটি বাদ দিয়ে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে নতুন ট্রেন চালু করা হয়। তবে রাতে ট্রেনটি রাখার জন্য সিরাজগঞ্জে জায়গা নেই। ফলে যাত্রী নামিয়ে ট্রেনটি নেওয়া হয় ঈশ্বরদীতে। আবার যাত্রী আনতে সেটি সিরাজগঞ্জ যায়। এভাবে জামতৈল, সিরাজগঞ্জ ও ঈশ্বরদীর মধ্যে ঘোরাঘুরিতে সময় নষ্ট হয় এবং অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হয়।

রেলওয়ের তথ্যমতে, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি গড়ে ৮৮ শতাংশ যাত্রী হয়। মাসে আয় ৩০ লাখ টাকার মতো।

ঈশ্বরদী থেকে পাবনার ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয় ২০১৮ সালে। এতে ব্যয় হয় ১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকায়। এই পথে রেললাইন নির্মাণে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি। উদ্বোধনের পর দুই বছর রেলপথটিতে কোনো ট্রেনই চলেনি। ২০২০ সালে ঢালারচর এক্সপ্রেস নামে এক জোড়া ট্রেন চালু করা হয়। যদিও প্রকল্প নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল এই পথে ১০টি ট্রেন চলবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপচয়ের যেসব অভিযোগ রয়েছে, এই রেলপথ তার অন্যতম উদাহরণ।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢালারচর এক্সপ্রেস ১১টি কোচ নিয়ে চলাচল করে। আসা-যাওয়া মিলে দুবার চলে। অর্থাৎ রেলে দুটি ট্রেন হিসাব করা হয়। মাসে গড়ে দুটি ট্রেন থেকে গড়ে আয় ৩৬ লাখ টাকা। এই ট্রেনে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী যাতায়াত করে। তবে বেশির ভাগ যাত্রী স্বল্প দূরত্বের। এ জন্য আয় কম হয়।

উপকূল ও নতুন ট্রেন

ঢাকা-নোয়াখালী পথে দীর্ঘদিন ধরে একটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করছে, নাম উপকূল এক্সপ্রেস। এটি ওই পথের একমাত্র আন্তনগর ট্রেন হলেও তুলনামূলক যাত্রী কম। রেলওয়ে থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে উপকূল এক্সপ্রেসে গড় যাত্রী বা অকুপেন্সি ছিল ১৯০ শতাংশ। অর্থাৎ আসনের প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী যাতায়াত করতেন। ওই সময় নোয়াখালী থেকে ঢাকায় আসার সময় যাত্রী হতো ২৬৯ শতাংশ এবং ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে ১১১ শতাংশ। এখন সেই ট্রেনের আসনও পূর্ণ হয় না।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, উপকূল এক্সপ্রেসে বছর পাঁচেক ধরে যাত্রী কমছে। এর মূল কারণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়া। এতে ট্রেনের চেয়ে কম সময়ে নোয়াখালী যাওয়া যাচ্ছে। এই সড়কপথে ভালো মানের বাসও নেমেছে। এ ছাড়া ট্রেন সময়সূচি মেনে চলাচল না করার কারণেও যাত্রীর চাহিদা কমেছে।

এরপরও ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে নতুন এক জোড়া আন্তনগর ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত হয় ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর। ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনটির নামও ঠিক করেছিলেন, ‘সুবর্ণচর এক্সপ্রেস’। তবে ট্রেন চালুর জন্য পর্যাপ্ত কোচ না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তা চালু করা যায়নি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে নতুন ট্রেন চালুর তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নোয়াখালীর রুটে নতুন ট্রেন চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে নোয়াখালীর পরিবর্তে কক্সবাজার পথে নতুন ট্রেন চালু করে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, উপকূল এক্সপ্রেসে বছর পাঁচেক ধরে যাত্রী কমছে। এর মূল কারণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়া। এতে ট্রেনের চেয়ে কম সময়ে নোয়াখালী যাওয়া যাচ্ছে। এই সড়কপথে ভালো মানের বাসও নেমেছে। এ ছাড়া ট্রেন সময়সূচি মেনে চলাচল না করার কারণেও যাত্রীর চাহিদা কমেছে।উত্তরে যাত্রী বেশি, মনোযোগ কম

রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ নিয়ে রেলের উত্তরাঞ্চল। এই পথে ৩২টি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। রেলের হিসাবে, পশ্চিমাঞ্চলে সব কটি ট্রেন গড়ে ১১৪ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলে। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলে গড় যাত্রী ৯৪ শতাংশ।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, পশ্চিমাঞ্চলের সব কটি ট্রেনের পথই দীর্ঘ। পথে অনেক স্টেশনে থামে। ফলে বেশির ভাগ ট্রেনই সময় মেনে চলতে পারে না। অথচ কোনো কারণে একটি ট্রেন দেরি হলে বিকল্প রেক (নির্ধারিত কোচ নিয়ে তৈরি ট্রেন) থাকলে সময় মেনে চালানো সম্ভব। সে ব্যবস্থা নেই। পঞ্চগড় থেকে ছয়টি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এগুলোর জন্য চারটি রেক রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের বাকি ২৬টি ট্রেনের বিকল্প রেক নেই। ফলে যে ট্রেন যায়, সেটিই ফিরে আসে। পথে দুর্ঘটনা বা বিলম্ব হলে যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়।

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের পথে চলাচলকারী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস গড়ে ১১১ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। ট্রেনটি থেকে মাসে গড় আয় দুই কোটি টাকার মতো। একইভাবে লালমনিরহাট এক্সপ্রেসে যাত্রী হয় গড়ে ১১৫ শতাংশ। মাসে গড়ে আয় সোয়া দুই কোটি টাকার মতো। কিন্তু ট্রেন দুটির বিকল্প রেক না থাকায় সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই দেরিতে চলাচল করে।

রেলওয়ে যখন উন্নয়ন প্রকল্প নেয়, তখন দেখানো হয় বিপুল লাভ হবে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা মন্ত্রী হয়ে প্রকাশ্যে বলেন, রেল লাভ করার জন্য চলে না। এগুলো অপেশাদারি কথা। এ জন্যই রেল এক টাকা আয় করতে আড়াই টাকা ব্যয় করে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।বুয়েট পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক

রেলের হিসাবে, রাজশাহী থেকে পঞ্চগড়ের চিলাহাটি পর্যন্ত চলাচলকারী বরেন্দ্র এক্সপ্রেসে সবচেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে চলে—১২৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি আয় হয় ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের একতা এক্সপ্রেস থেকে। ট্রেনটি থেকে মাসে গড়ে চার কোটি টাকার বেশি আয় হয়।

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের পথে চলাচলকারী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস গড়ে ১১১ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। ট্রেনটি থেকে মাসে গড় আয় দুই কোটি টাকার মতো। একইভাবে লালমনিরহাট এক্সপ্রেসে যাত্রী হয় গড়ে ১১৫ শতাংশ। মাসে গড়ে আয় সোয়া দুই কোটি টাকার মতো। কিন্তু ট্রেন দুটির বিকল্প রেক না থাকায় সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই দেরিতে চলাচল করে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ে যখন উন্নয়ন প্রকল্প নেয়, তখন দেখানো হয় বিপুল লাভ হবে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা মন্ত্রী হয়ে প্রকাশ্যে বলেন, রেল লাভ করার জন্য চলে না। এগুলো অপেশাদারি কথা। এ জন্যই রেল এক টাকা আয় করতে আড়াই টাকা ব্যয় করে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরও বলেন, কোন পথে কত যাত্রীচাহিদা, লাভ-লোকসান বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়। সমীক্ষা ছাড়া নতুন ট্রেন চালু কিংবা নতুন স্টেশনে ট্রেন থামানো উচিত নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ