বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ড. আনিসুজ্জামানের বৈঠক ২৯ মে
Published: 20th, May 2025 GMT
পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী ২৯ মে (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
উক্ত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী ড.
বিনিয়োগকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
ওয়ান ব্যাংকের পর্ষদ সভা ২৫ মে
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের প্রয়াত উদ্যোক্তার শেয়ার হস্তান্তর
মঙ্গলবার (২০ মে) বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েরেছ।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিএসইসি'র সাথে সাথে বর্তমান সরকারও দেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কারের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। পুঁজিবাজারের অংশীজনদের মতামত এবং তাদের সাথে নিয়েই বাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব বলে বিএসইসি মনে করে। সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত, অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে বিএসইসি বদ্ধ পরিকর। সাধারণ বিনিয়োগকারী দেশের পুঁজিবাজারের প্রাণ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিএসইসি'র উদ্যোগে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে আগামী ২৯ মে বেলা ১১টায় একটি মতবিনিময় সভা আয়োজিত হবে। অনুষ্ঠিতব্য উক্ত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়াও বিএসইসি'র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ উক্ত সভায় উপস্থিত থাকবেন। উক্ত সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিএসইসি'র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করবেন।
সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়, উক্ত মতবিনিময় সভায় পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ একান্ত কাম্য। মতবিনিময় সভাটিতে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। তবে মতবিনিময় সভাটি সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পাদনের নিমিত্ত বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক-কে সভায় অংশগ্রহণের সম্মতি প্রকাশ করে তাদের নাম-পরিচয় ও যোগাযোগের ফোন নম্বরসহ বিস্তারিত উল্লেখ করে সংগঠনের প্যাডে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বরাবর কমিশনের দাপ্তরিক ইমেইল ঠিকানায় ([email protected]) পত্র প্রেরণের অনুরোধ করা যাচ্ছে।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
লাভজনক গাজী ওয়্যারস এখন লোকসানে ধুঁকছে
দেশের একমাত্র তামার তার প্রস্তুতকারী রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গাজী ওয়্যারস। প্রতিষ্ঠানটির তৈরি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। প্রতিবছর গড়ে ৪০০ টন তার কিনত তারা। বছর চারেক ধরে আর তার নিচ্ছে না বিআরইবি। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে গাজী ওয়্যারসকে। গত বছর ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরেও লোকসানের পরিমাণ ৫ কোটির বেশি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিআরইবি ছিল গাজী ওয়্যারসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বশেষ তার কিনেছিল তারা। এখন বাড়তি দামের কথা বলে আর তার কিনছে না। এ কারণেই মূলত লোকসান গুনতে হচ্ছে গাজী ওয়্যারসকে। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতাই লোকসানের অন্যতম কারণ। আবার বিকল্প ক্রেতা খোঁজার ক্ষেত্রেও গাজী ওয়্যারসের উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে।
গাজী ওয়্যারস হলো শিল্প মন্ত্রণালয়ভুক্ত বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি মালিকানার একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৫ সালে ব্যক্তিমালিকানায় জাপানের ফুরুকাওয়া ইলেকট্রিক কোম্পানির সহযোগিতায় এটি চালু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করে এটিকে বিএসইসির সঙ্গে একীভূত করা হয়। এরপর আবার এটিকে বিএসইসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়। বর্তমানে তিন ধরনের তার উৎপাদন করছে গাজী ওয়্যারস। এগুলো হচ্ছে সুপার এনামেল তামার তার (গেজ ১২ থেকে ৪৬), এনিল্ড তামার তার (গেজ ১০ থেকে ৪৬) ও হার্ডড্রন বেয়ার তামার তার (গেজ ১ থেকে ৪৬)। সবচেয়ে বেশি বিক্রি ও উৎপাদন হয় সুপার এনামেল তামার তার। প্রতিষ্ঠানটিতে ১২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।
সর্বশেষ ২০২০–২১ অর্থবছরে পৌনে ৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। সেখানে গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান করেছে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা।প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, গাজী ওয়্যারসের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা দেড় হাজার টন। তবে চাহিদা না থাকায় ওই সক্ষমতা অনুযায়ী কখনো উৎপাদন হয়নি। মোটাদাগে ৮০০ টন তার উৎপাদন করলে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয় না। কিন্তু গত বছর উৎপাদন হয়েছে ২৬৭ টন। আর চলতি অর্থবছরে উৎপাদন মাত্র ৮৭ টন। প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার কাছাকাছি।
জানতে চাইলে গাজী ওয়্যারসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশি দামের কথা বলে বিআরইবি তার কেনা বন্ধ রেখেছে। অথচ আমরা ভালো মানের তার উৎপাদন করি। তাই লোকসান কমাতে এখন আমরা বিকল্প বাজার খোঁজার চেষ্টা করছি। সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এর মধ্যে রয়েছে বিপিসির বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।’
আবদুল হালিম আরও বলেন, ‘বিআরইবি কর্তৃপক্ষ গত ২২ মে গাজী ওয়্যারস কারখানা পরিদর্শন করেছে। তারা দাম নিয়ে আবার আলোচনা করছে। এ প্রতিষ্ঠান আবার তার কেনা শুরু করলে লাভে ফিরতে পারব। অন্যদিকে গত মাসে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে গাজী ওয়্যারস থেকে পণ্য কেনার বিষয়ে আদেশ দিয়েছে।’
লোকসান বেড়েছে ১১ গুণ
প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, ২০১৪-২০১৫ থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭৩ কোটি টাকা লাভ করেছিল। ২০২০-২০২১ অর্থবছরেও ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা লাভ হয়। এরপর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এসে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে চার বছরের ব্যবধানে লোকসান বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ।
অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে যে প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন বাজার হারাচ্ছে, তা–ও উঠে এসেছিল বিএসইসির এক তদন্ত প্রতিবেদনে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়মসংক্রান্ত অভিযোগ পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি পরে অনিয়মের সত্যতা খুঁজে পায়। মূলত ওই প্রকল্পে জাপান ও তাইওয়ানে উৎপাদিত ‘জাপানি মানের’ ৪৫ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার কথা। কিন্তু কেনাকাটা শেষে যন্ত্রপাতি কারখানায় স্থাপন করা হয়ে গেলেও জানা যায়নি এগুলো আসলে কোন দেশে তৈরি। যন্ত্রপাতি কেনার আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ার বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি।
পরিকল্পনার ঘাটতি, এক ক্রেতার ওপর নির্ভরশীলতা, বাজার সম্প্রসারণ না করা ও অদক্ষতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ধুঁকছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক মো. আলী আরশাদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাজার সম্প্রসারণ বা ক্রেতা না বাড়ালে প্রতিষ্ঠানটি লাভে ফিরতে পারবে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।