চবিতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে কোরআন ও স্মার্টফোন বিতরণ
Published: 21st, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্রেইল কোরআন ও স্মার্টফোন বিতরণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এর ব্যবহার নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
বুধবার (২১ মে) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ভার্চুয়াল কক্ষে বিতরণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ডোরস্ ফর ইনক্লুসিভ সোসাইটি (ডিআইএস)’ এ কার্যক্রমের আয়োজন করেন।
ডিআইএসের সভাপতি এসএম ফেরদৌস আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
টানা ২৩ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে জবি
কুবির ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আল্টিমেটাম
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইন এবং আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান চৌধুরী।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দীন খান বলেন, “প্রতিবন্ধীরা কখনো রাষ্ট্রের বোঝা নয়, যদি তাদের সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা হয়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সর্বোচ্চ সুযোগ দেওয়া চেষ্টা করব। সরকারের উচিত, এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে প্রযুক্তির জ্ঞান দিয়ে দেশের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা।”
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সুরত আলম বলেন, “জুলাই পরবর্তী বৈষম্যহীন বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য এই সরকার কিছুই করতে পারেনি। অথচ এ দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ পিছিয়ে পড়া। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস তিনি শতাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি জানেন, উন্নত রাষ্ট্রগুলো কীভাবে তাদের দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে। তার ধারণা দিয়েই অনেক রাষ্ট্র পরিবর্তন হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কোনোভাবেই তিনি রাষ্ট্র সংস্কার করতে পারবেন না। আশা করি, সরকার আমাদের উপর সদয় দৃষ্টি দিয়ে অন্য ১০ জনের মতো বিবেচনা করবেন।”
ডিআইএসের সভাপতি এসএম ফেরদৌস আলম বলেন, “আমাদের শিক্ষকরা আমাদের যেকোনো উদ্যোগে সহযোগিতা করবেন বলে আশা রাখি। আমরা ডোরস্ ফর ইনক্লুসিভ সোসাইটি সবসময় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করব।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জনগ ষ ঠ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগের তদন্ত হোক
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের জঙ্গিবাদী তৎপরতায় যুক্ত হওয়ার অভিযোগটি গুরুতর বলেই অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন মালয়েশিয়ায় উগ্রবাদী মতাদর্শ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এরপর আইন ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, তিনজন ইতিমধ্যে দেশে ফিরেছেন এবং তঁাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর ঘটনাকে বিব্রতকর বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শুক্রবার কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করার কথা জানান। তাঁর বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শ্রমিকদের মধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর মতাদর্শ প্রচার এবং তহবিল সংগ্রহ করে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের এমন একটি চক্র ভেঙে দিয়েছে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। চক্রটি অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিককে নিশানা করে সদস্য সংগ্রহ করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উগ্র ও চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিত বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।
মালয়েশীয় পুলিশপ্রধানের বক্তব্য সন্দেহমুক্ত নয়। সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কেউ কেউ তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে আইএসের সাংগঠনিক ভিত্তি থাকার দাবি সঠিক নয়। তারপরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার অভিযোগকে উড়িয়ে না দিয়ে দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে দেশের ভেতরে কেউ থাকলে সেটাও বেরিয়ে আসবে। এর সঙ্গে কেবল বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয় জড়িত নয়, লাখ লাখ শ্রমিকের জীবিকার প্রশ্নও আছে। গেল শতকের শেষ দশক ও চলতি শতকের প্রথম দশকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও।
জঙ্গিবাদ বিশ্বব্যাপী প্রবণতা। এ থেকে খুব কম দেশই মুক্ত থাকতে পেরেছে। এখানে দুই ধরনের অতিশয়োক্তি আছে। এক পক্ষ মনে করে বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় জঙ্গিবাদী তৎপরতা ছিল। আরেক পক্ষের দাবি, জঙ্গিবাদ বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সহজ পথ ছিল যেকোনো তৎপরতা ও ব্যক্তিকে ‘জঙ্গি’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া। জঙ্গি ইস্যু কাজে লাগিয়ে তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়েছে। আবার অন্যদিকে ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি বলে কিছু নেই, ছিনতাইকারী আছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ে সংঘটিত হোলি আর্টিজানে হামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি এই উত্তর দেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেদিন সেই রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে, তা কি ছিনতাইকারীরা ঘটিয়েছিল?
মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার যে অভিযোগ উঠেছে, তাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। মালয়েশিয়ার অভিযোগ কতটা সত্য, তা যথাযথ তদন্ত করে বের করতে হবে। দেশের কোনো পক্ষ এর সঙ্গে যুক্ত আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার। সেখানে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে এই ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে বাংলাদেশকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিতে হবে। আবার নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও সরকারকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে।
দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আমরাও আশাবাদী হতে চাই যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, দেশটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তার নিরসন হবে।