পুঁজিবাজার কার্যকর করতে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা
Published: 24th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে কার্যকর, স্বচ্ছ ও ভবিষ্যৎমুখী করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সুশাসন এবং অংশগ্রহণমূলক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, গবেষক ও পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলেছেন, শেয়ারবাজারে দুটি বড় ধসের নেপথ্যে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় তাদের বিচার হয়নি। ফলে মানুষ আস্থা হারিয়েছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কার্যালয়ে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ আয়োজিত ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার : দর্শন এবং চর্চা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মাননীয় ড.
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনতে হবে। পুঁজিবাজার অর্থনীতির বাইরের কিছু নয়। টেকসই উন্নয়নে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজির উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে সক্রিয় করতে হবে।
আইএমএফের কাছে ৪ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার জন্য সরকারের দৌড়ঝাঁপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের পুঁজিবাজারগুলোতে ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে, ভিয়েতনামও ৩০০ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। বাংলাদেশ কেন পায় না, তা ভাবার সময় এসেছে। অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বহুজাতিক বিনিয়োগ সংস্থায় কাজ করেন এবং বাংলাদেশের বাজারে আসতে আগ্রহী। তবে তারা একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছেন।
তিনি দাবি করেন, পুঁজিবাজারকে অতীতে কোনো সরকার রাজনৈতিকভাবে ‘নিজের’ করে নেয়নি। এ বাজার এখনও কতিপয় ব্যক্তির ‘ক্যাসিনো’ হয়ে আছে। যেখানে কিছু লোক মুনাফা করে, বাকিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিএনপি ভবিষ্যতে সরকার গঠনের সুযোগ পেলে পুঁজিবাজারকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা হবে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি শেয়ারবাজারের বড় দুর্বলতা বলে মনে করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, দেশে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের কারসাজির বিচার হয়নি। ছিয়ানব্বই কেলেঙ্কারিতে ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হলেও কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। ফলে ২০১০ সালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত ও থাইল্যান্ডে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দোষীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকায় বিচার প্রক্রিয়া ধামাচাপা পড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বাজার কারসাজিরা স্মার্ট ও সৃষ্টিশীল। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতে দক্ষ ও সাহসী লোক বসাতে হবে। বাজার অংশীজনের নিজস্ব স্বচ্ছ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এ খাতের উন্নয়নে বড় ধরনের ‘চিকিৎসা’ দরকার। পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার ৫ দফা নির্দেশনার বাস্তবায়নে স্থবিরতা দেখে এ দেশে সিদ্ধান্ত হয়, বাস্তবায়ন হয় না। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার দুই সপ্তাহ পর একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি নির্বাক ছিলেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, রাজনৈতিক অর্থনীতি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ব্যাংকমুখী করে রেখেছে। বাংলাদেশে যারা রাজনৈতিক অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণে আছেন, তারাই ব্যাংকের মালিক। ফলে পুরো অর্থনীতি ব্যাংকমুখী হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ শতাংশ থেকে ২৮ শতাংশে উন্নীত করতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। ব্যাংক খাতের পক্ষে এত বড় অঙ্কের অর্থ জোগান দেওয়া অসম্ভব। ফলে পুঁজিবাজারকেই মূলধন সঞ্চালনের বড় মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
শেয়ারবাজার সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার বলে মনে করেন সরকার গঠিত দুর্নীতিবিরোধী সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুসতাক হোসেন খান। তিনি বলেন, সবাইকে ঐকমত্যে এনে সংস্কার সম্ভব নয়। কারণ নানাজনের নানা স্বার্থ কাজ করে। পুঁজিবাজারের কাঠামোগত সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার মোহসীন চৌধুরী বলেন, বাজার-সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চলছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ৫ নির্দেশনা বাস্তবায়নে রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, কোনো দেশের মূলধনের জোগানে ব্যাংক একমাত্র উৎস হতে পারে না। দেশের পুঁজিবাজার এখন প্রায় অকার্যকর। একে সক্রিয় করতে হবে। অংশগ্রহণ বাড়িয়ে শক্তিশালী বাজার গড়া জরুরি বলে মনে করেন পেশাদার হিসাববিদদের সংগঠন আইসিএমএবি সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমানে ১ শতাংশ মানুষও পুঁজিবাজারে সক্রিয় নয়। যা ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
সিএসই চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, কার্যকর পুঁজিবাজার গড়তে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের সংস্কার এমনভাবে করতে হবে যাতে বিনিয়োগকারীরা কম কষ্টে সুষ্ঠু পরিবেশ পান।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনুভা জাহীন বলেন, দেশের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। এনসিপি ক্ষমতায় এলে এ সংস্কৃতি বদলে দিয়ে পুঁজিবাজারের ওপর জোর দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র জ ব জ রক র জন ত ক ক র যকর র অর থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এবি পার্টির চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মজিবুর রহমান বলেছেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন, সংস্কার, সংশোধন, নতুন করে লেখা বা বাতিলের চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের। আমরা ঐক্যবদ্ধ মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরি করেছি, হয়তো কয়েকটি বিষয়ে কারও কারও “নোট অব ডিসেন্ট” (দ্বিমত) আছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনটা হবে, তা নির্ধারণের মূল ক্ষমতা জনগণের।’
কমিশনের আজকের প্রস্তাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদকে রেফারেন্স আকারে উল্লেখ করায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতা জুলাই ঘোষণাপত্রের বৈধতা নিয়ে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যাঁরা আজ প্রশ্ন তুলছেন, কাল তাঁরা সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন এবং এই সনদকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক বলেন, সংবিধানে এটা নেই, ওটা নেই বলে সংবিধান সংস্কার করা যাবে না—এই ধারণা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাপরিপন্থী। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান থেকে নমনীয় না হয়, তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পুরো প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, এমন পরিস্থিতি জাতিকে এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি; অন্যথায় গণভোট ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুনবর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ৪ ঘণ্টা আগে