১৯৭৩ সালের জুন মাসের এক ঘোরলাগা বিকেল। ধানমন্ডির কবি ভবন থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বের হলেন ঢাকার গেন্ডারিয়ার পথে। গাড়ি এসে থামল সীমান্ত খেলাঘর আসরের সামনে। সেদিন স্থানীয় লোকদের মধ্যে অন্য রকম আনন্দ। তাঁদের মধ্যে এসেছেন কবি নজরুল ইসলাম। কবি নির্বাক তাতে কী! তাঁকে দেখা তো যাচ্ছে।

শিশুসাহিত্যিক হাবীবুর রহমান ১৯৫২ সালের ২ মে ঢাকায় খেলাঘর প্রতিষ্ঠা করলেন। দিনে দিনে এর শাখা ছড়িয়ে পড়ল। সীমান্ত গ্রন্থাগারের সঙ্গে সীমান্ত খেলাঘর আসর যাত্রা শুরু করল ১৯৭২ সালে। সীমান্ত খেলাঘর আসরের মূল ব্যক্তি ছিলেন গোলাম আব্বাস। এই সংগঠন রবীন্দ্র-নজরুলসহ কবি-সাহিত্যিকদের জন্মদিন উদ্‌যাপন করত সাড়ম্বরে। তেমনই একটি আয়োজনের অংশ হিসেবে গেন্ডারিয়ায় খেলাঘরের মাঠে আনা হয়েছিল কবি নজরুলকে।

আগের বছরই (১৯৭২ সালের ২৪ মে) কাজী নজরুলকে সরকারিভাবে সপরিবার ঢাকায় আনা হয়েছে। তাঁর ঠিকানা হয়েছে ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি নম্বর বাড়িতে। বাড়িটি তত দিনে পরিচিতি পেয়েছে কবি ভবন নামে। প্রতিদিন ভক্ত-অনুরাগীরা সেখানে যাচ্ছেন তাজা ফুল হাতে নিয়ে। কবিকে কদমবুসি করছেন।

কবি ভবনে যাতায়াত ছিল সীমান্ত খেলাঘর আসরের তৎকালীন সাহিত্য সম্পাদক আবদুল হালিমের। তিনি চেষ্টা করলেন কবিকে গেন্ডারিয়ায় নেবেন। একবার কবির পরিবার রাজি হলেও তিনি যেতে পারলেন না। কারণ, কবি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সপ্তাহখানেক পরে কবি একটু সুস্থ হলে তাঁকে নেওয়া সম্ভব হলো।

নজরুলের সেই ছবি

২০২০ সালে গেন্ডারিয়া সীমান্ত গ্রন্থাগারের দেয়ালে নজরুলের একটি ছবি দেখি। কোনো বইপত্র বা অন্য কোথাও ছবিটি আগে দেখিনি। তিনটি ছবি। অনেকটা একই রকম। নজরুলকে ঘিরে আছেন কয়েকজন কিশোর-তরুণ। ছবিতে আছেন কবি পরিবারের সদস্যরাও। এর মধ্যে বাঁ দিকে দাঁড়ানো একটি কিশোর, সপ্রতিভ। কবিকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন। সাল ১৯৭৩।

গত ১৫ এপ্রিল সীমান্ত গ্রন্থাগারে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে ছবিটি আবার দেখি। আলোচনা করি কয়েকজন বয়সী সংগঠকের সঙ্গে। ক্যাপশনে লেখা ‘কিশোরটির নাম গোলাম কিবরিয়া’।

সীমান্ত গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতান টোকনের মাধ্যমে জানা গেল, ছবির ওই কিশোরটি এখন কানাডায় থাকেন। সীমান্ত গ্রন্থাগারের উল্টো দিকের বাড়িটাই তাঁদের। তাঁরা সবাই সীমান্ত খেলাঘর করতেন।

কাজী সুলতানের মাধ্যমে অবশেষে পাওয়া গেল গোলাম কিবরিয়াকে। সেদিনের সেই ১৩ বছরের কিশোরের বয়স এখন ৬৫। সন্তানদের সূত্রে কানাডার টরন্টোয় থাকছেন ২০১৭ সাল থেকে। তবে নিয়মিত দেশে যাওয়া-আসা করেন। স্বপন নামে পরিচিত তিনি।

নজরুলকে নিয়ে সেদিনের সেই আয়োজনের অনেক কিছুই তাঁর মনে আছে। আবার কিছু ভুলে গেছেন। ২২ মে রাতে মুঠোফোনে গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে কথা হলো। জানালেন, তখন সীমান্ত খেলাঘরের প্রধান সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন সীমান্ত খেলাঘরের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান কামাল, সহসভাপতি মুক্তাদির রহমান, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল কবীর বাবলু। উপদেষ্টা ছিলেন গোলাম আব্বাস ও সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার। কাজী কামাল এখন জার্মানিপ্রবাসী, আবদুল হালিম ইংল্যান্ডে। অন্যরা কে কোথায় আছেন, ঠিক জানা নেই তাঁর।

আরও পড়ুনহারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে২৭ আগস্ট ২০২৩

গোলাম কিবরিয়ার স্মৃতিতে

সেদিন নজরুলের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর কে কে এসেছিলেন? জানতে চাইলাম গোলাম কিবরিয়ার কাছে। বললেন, উমা কাজী, কল্যাণী কাজী, খিলখিল কাজী, মিষ্টি কাজী, বাবুল কাজী সবাই এসেছিলেন। উমা কাজী নজরুলের ছেলে খ্যাতনামা বাচিকশিল্পী কাজী সব্যসাচীর স্ত্রী। আর কল্যাণী কাজী নজরুলের আরেক পুত্র খ্যাতনামা গিটারবাদক কাজী অনিরুদ্ধের স্ত্রী। খিলখিল, মিষ্টি ও বাবুল তিনজনই সব্যসাচী-উমা দম্পতির সন্তান।

খেলাঘরের মঞ্চে অনুষ্ঠান শুরুর আগে নজরুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য নেওয়া হলো সাহিত্য সম্পাদক আবদুল হালিমের বাড়িতে। সেখানে নজরুলকে ফুল দিয়ে বরণ করা হলো। নজরুল ও তাঁর পরিবারের জন্য আনা হয়েছিল গেন্ডারিয়ার বিখ্যাত সোনা মিয়ার দই; আর ছবিটি তোলা হয় সেখানে, অর্থাৎ আবদুল হালিমের বাড়িতে।

শুভেচ্ছা ও ছবি তোলা পর্ব শেষ করে সবাইকে মঞ্চে নেওয়া হলো। এ সময়ের একটি দৃশ্য খুব মনে আছে গোলাম কিবরিয়ার। সেটা কী? ‘কামাল ভাই নজরুলকে কোলে করে মঞ্চে নিয়ে গেলেন।’

কারণ, সেদিন খুব বৃষ্টি হয়েছিল। খেলাঘরের মাঠে পানি। তারপরও কবিকে দেখার জন্য আশপাশ থেকে মানুষ বানের মতো আসতে লাগল।

সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। নজরুলকে মঞ্চে বসানো হলো। পাশে পরিবারের সদস্যরা, সীমান্ত খেলাঘরের সংগঠকেরা। সামনে অপেক্ষা অভ্যাগতদের। অমনি চলে গেল বিদ্যুৎ।

বিদ্যুৎ গেছে, আবার নিশ্চয়ই আসবে। এক ঘণ্টা গেল, দুই ঘণ্টা গেল, বিদ্যুৎ আর আসে না।

কল্যাণী কাজী বারবার বলছিলেন, ‘আজ খুব ভালো মুডে ছিলাম; কিন্তু এ কী হলো!’

কবি ভবনে (বাঁ দিক থেকে) উমা কাজী, মিষ্টি কাজী, কাজী নজরুল ইসলাম, বাবুল কাজী ও খিলখিল কাজী.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম ন ত গ রন থ গ র র গ ল ম ক বর য় র পর ব র র সদস আবদ ল হ ল ম র পর ব র র খ ল ঘর র নজর ল র

এছাড়াও পড়ুন:

আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।

সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১

গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২

এশিয়া কাপ ক্রিকেট

আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক

অ্যাথলেটিকস

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২

ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১

নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২

ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ