দিনাজপুরে গৃহবধূর গায়ে রাসায়নিক পদার্থ নিক্ষেপ, চাচাতো ভাশুর আটক
Published: 25th, May 2025 GMT
দিনাজপুর সদর উপজেলায় সোহানা আক্তার (২৫) নামের এক গৃহবধূর গায়ে রাসায়নিক পদার্থ নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নিজ বাড়িতে তাঁর ওপর এটি নিক্ষেপ করা হয় বলে অভিযোগ করেন সোহানা। এ ঘটনায় তাঁর চাচাতো ভাশুর গোলাম রাব্বানীকে (৪০) আটক করেছে পুলিশ।
সোহানা আক্তার উপজেলার দিঘন এলাকার শামীম পারভেজের স্ত্রী। অভিযুক্ত গোলাম রাব্বানী একই এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে। বর্তমানে সোহানা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
সোহানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির পাশে একটি পুকুর খনন নিয়ে গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে শামীম পারভেজের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বিকেলে সোহানার তিনটি ছাগল খেত থেকে ধরে নিয়ে যান গোলাম রাব্বানী এবং নিজের বাড়িতে আটকে রাখেন। ছাগল ফেরত চাইলে তিনি অস্বীকার করেন এবং একপর্যায়ে সোহানাকে মারধর করেন। সোহানা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে জানিয়ে প্রতিকার চান এবং ওই দিনই কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
সোহানা বলেন, ‘শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রান্নাঘরে কাজ করছিলাম। জানালাটি খোলা ছিল। হঠাৎ জানালা দিয়ে পানি ছোড়ার মতো কিছু এসে পড়ে। আমি পেছনে সরে যাই, তাই মুখে না লেগে গলার নিচে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। চিৎকার শুনে শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজন এসে পানি ঢালে। রাত সাড়ে দশটার দিকে স্বামী আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’
সোহানার অভিযোগ, জমিজমা–সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে তাঁর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করেছেন রাব্বানী।
সোহানার স্বজনদের অভিযোগ, জরুরি সেবায় ফোন করে এবং থানায় লিখিত অভিযোগ করেও তাঁরা কোনো প্রতিকার পাননি। পুলিশ যদি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখত তাহলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান আবদুস সালাম বলেন, ‘রোগীকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আজ সকালে তাঁকে দেখে নিশ্চিত হয়েছি, কোনো রাসায়নিক পদার্থে গলা থেকে বুক পর্যন্ত অংশ ঝলসে গেছে। আনুমানিক ৯ শতাংশ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত।’
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, দুই পরিবারের মধ্যে আগেই বিরোধ চলছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। অভিযুক্ত গোলাম রাব্বানীকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা চলছে। জরুরি সেবায় কল করেও প্রতিকার না পাওয়ার বিষয়ে তদন্ত করা হবে। দায়িত্বে অবহেলা পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন ডিসেম্বর না জুনে, এই বিতর্কের সমঝোতাভিত্তিক সমাধান চায় এবি পার্টি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা আছে কি না, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
একই সঙ্গে মজিবুর রহমান মঞ্জু নির্বাচন ডিসেম্বরে না হয়ে জুনে হলে কোনো অসুবিধা আছে কি না, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন বিএনপির কাছে। নির্বাচন ডিসেম্বরে না জুনে, এই বিতর্কের সমঝোতাভিত্তিক সমাধানও চেয়েছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যায় সেখান থেকে বেরিয়ে যমুনার সামনে বৈঠকের খুঁটিনাটি সাংবাদিকদের জানান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
মজিবুর রহমান বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের ব্যাপক সন্দেহ, সংশয় ও ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। নবগঠিত দল এনসিপির সঙ্গেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। এমনকি গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রসমাজের মধ্যে বিভাজন দেখা দিলেও সরকার সে বিষয়ে নির্বিকার থেকেছে। এটা ক্রমেই সরকারের সমর্থনের ভিত্তিকে দুর্বল করে তুলেছে।
মজিবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন ডিসেম্বরে করতে কী সমস্যা? অনিবার্য কারণে জুন পর্যন্ত সময় লাগলেই বা অসুবিধা কী? অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির কাছে জনগণ এর ব্যাখ্যা জানতে চায়। আশা করি উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরবে।’
প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে দেশ এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে মন্তব্য করে মজিবুর রহমান বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সঠিক উপলব্ধি, ছাড় দেওয়ার মনোভাব প্রদর্শন, ইগো পরিত্যাগ ও সমঝোতামূলক পদক্ষেপই উত্তম সমাধান। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে সেগুলো সংশোধনেও উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন, সংশোধন, পরিমার্জনসহ জাতীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে কঠোর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এ ছাড়া সরকারকে সবার ঐকমত্যে গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র ও জাতীয় সনদ তৈরি এবং নির্বাচন, সংস্কার ও ফ্যাসিবাদী-খুনিদের বিচারের একটি রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন মজিবুর রহমান।
আজ দুই দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। প্রথম দফায় বিকেলে এবি পার্টি ছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অধ্যাপক ইউনূস।
এরপর দ্বিতীয় দফায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি এবং ইসলামী ঐক্য জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
নানা ক্ষোভ ও হতাশা থেকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন, এমন খবরে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সব মহলে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়।