দাবি আদায়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ মিছিল–সমাবেশ করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। বিপুলসংখ্যক কর্মচারী মিছিলে যোগ দেন। আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে দিনভর কর্মবিরতি পালন করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তবে সরকারের আশ্বাসের পর তাঁরা আজ থেকে ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।

এদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তাঁর সমর্থক ও করপোরেশনের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা। নগর ভবনের সব ফটকে এখন তালা ঝুলছে।

এ ছাড়া কয়েকটি দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন। এতে বিপুলসংখ্যক কর্মী অংশ নেন। এর ফলে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থিত মেট্রো স্টেশনের দক্ষিণ পাশের ফটকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পাঁচ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। তিন দফা দাবিতে আজ সোমবার থেকে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা। দাবিদাওয়ার এসব আন্দোলনে অস্থির–অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবিদাওয়ার আন্দোলন চলছে। এখনো এ পরিস্থিতি চলছে। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল

সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য এ-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করেছে সরকার।

সচিবালয়ে বিক্ষোভ

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তাঁরা এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ -এর খসড়া অনুমোদনের পর গতকাল অধ্যাদেশ জারি করা হয়। কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে।

আন্দোলনকারী কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি করছেন। গতকাল সকালে সচিবালয়ে দেখা যায়, শত শত কর্মচারী দপ্তর ছেড়ে মিছিলে যোগ দেন। মিছিল থেকে ‘অবৈধ কালো আইন মানব না’, ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’ ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলটি সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রদক্ষিণ করে। একপর্যায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে সমাবেশ করেন কর্মচারীরা।

কোনো রকম আপত্তি থাকলে তাঁরা আলোচনা করতে পারেন কেবিনেট ডিভিশন কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আলোচনা করে সমস্যাটা সমাধান করে নেবেন।মো.

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এ সময় কয়েকজন কর্মচারী নেতা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর মিছিল নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের দপ্তরে যান। তখন তিনি দপ্তরে ছিলেন না। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে তাঁরা সচিবালয়ে মূল ফটকের কাছে যান। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সেখানে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর অধ্যাদেশটিকে কালাকানুন আখ্যায়িত করে বলেন, এটি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। গতকাল সন্ধ্যায় অধ্যাদেশ জারির পর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধ্যাদেশ প্রত্যাহার বা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান থেকে নড়ব না। আজ বেলা ১১টায় আবার জমায়েত করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে এনবিআর ভবনে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল বেলা দেড়টায় আগারগাঁওয়ে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উপদ ষ ট কর মকর ত অবস থ ন য় ত কর র কর ম কর ছ ন র স মন র ভবন গতক ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে আবারও ফিরবে ময়ূর

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার একেবারে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম দর্জিপাড়া। মাত্র ৫০০ মিটার দূরেই ভারতের কাঁটাতারের বেড়া। ছোট্ট এই গ্রামটিতে প্রায়ই বুনো ময়ূরের দেখা মেলে। বাংলাদেশে ময়ূর বিলুপ্ত হলেও কয়েক বছর ধরে পাখিটির আনাগোনা দেখছেন দর্জিপাড়ার বাসিন্দারা।

এই ময়ূরগুলো গ্রামটির স্থায়ী বাসিন্দা নয়। খুব সম্ভবত এরা আমাদের সীমানার ভেতরে প্রজনন করে না। ওপারেই ভারতের সীমানায় একটি ছোট বন রয়েছে। ময়ূরগুলো খাবারের আশায় সেখান থেকে নিয়মিত দর্জিপাড়া আসে। খাওয়া শেষে আবার নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়। স্থানীয় লোকজন সেগুলোকে বিরক্ত করেন না।

ময়ূরগুলো মূলত দেখা যায় গ্রীষ্মকালে। গত ১১ এপ্রিল দর্জিপাড়ায় এমন একটি ময়ূর আলোকচিত্রী রেজাউল হাফিজের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ৯ মে তেঁতুলিয়া সীমান্ত থেকে ময়ূরের ছবি তোলেন আলোকচিত্রী হাসান মাহমুদ। আরেক আলোকচিত্রী বন্ধু ফিরোজ আল সাবাও নিয়মিত দর্জিপাড়া গ্রামে ময়ূর দেখার কথা জানিয়েছেন। ২০২২ সালে দর্জিপাড়ায় চারটি ময়ূরের একটি দলের সন্ধান পান তিনি। এর মধ্যে দুটি ছিল পুরুষ। ২০২৩ সালে এবং সর্বশেষ এ বছরও ময়ূর চোখে পড়েছে তাঁর।

সুখবর হলো ময়ূর বনে ফেরানোর প্রচেষ্টা গতকাল রোববারই শুরু হয়েছে। মধুপুর শালবনের দোখলা রেঞ্জের লহরিয়া বিটে ছাড়া হয়েছে পাঁচ জোড়া ময়ূর। প্রথমে এই ময়ূরগুলোকে বুনো পরিবেশে অভ্যস্ত করে তোলা হবে। এরপর সেগুলো বনে ফিরে যাবে।

দর্জিপাড়ায় চার থেকে পাঁচটি ময়ূরের একটি দল আছে বলে ধারণা করা হয়। সেখানে বন অধিদপ্তর ইউক্যালিপটাসের সামাজিক বনায়ন করেছে। কয়েক বছর আগে সেখান থেকে একটি ময়ূর উদ্ধার করা হয়। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার এই গ্রাম ছাড়াও ২০১৬ সালে দেবীগঞ্জের মারেয়া গ্রাম থেকে একটি এবং ২০২২ সালে বোদার চকলাহাট থেকে একটি ময়ূর উদ্ধার করা হয়েছিল।

সম্প্রতি দেশে ময়ূর দেখার তথ্য এতটুকুই। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন থেকে ২০১৫ সালে আমরা যে তালিকা প্রকাশ করেছিলাম, তাতে বাংলাদেশে ময়ূর একটি বিলুপ্ত প্রাণী। এর অর্থ বন্য পরিবেশে ময়ূর আর টিকে নেই। সর্বশেষ বাংলাদেশে বুনো ময়ূরের সন্ধান মিলেছিল ১৯৮৩ সালে—মির্জাপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের রাথুরা এলাকায়।

বাংলাদেশে দুই প্রজাতির ময়ূর ছিল। একটি হলো ভারতীয় ময়ূর। অন্যটি সবুজ ময়ূর। এর কোনোটিই দেশের বন্য পরিবেশে আর টিকে নেই। বিলুপ্তির আগে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যেত ভারতীয় ময়ূর। এই প্রজাতিটিই ভারতের জাতীয় পাখি। আর বিলুপ্ত হওয়া সবুজ ময়ূর আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় দেখা যেত। এই প্রজাতিটি এখন বিশ্বব্যাপী বিপন্ন।

গাজীপুরের মধুপুর শালবনের দোখলা রেঞ্জের লহরিয়া বিটে গতকাল ছাড়া হয় পাঁচ জোড়া ময়ূর। প্রথমে এই ময়ূরগুলোকে বুনো পরিবেশে অভ্যস্ত করে তোলা হবে। এরপর সেগুলো বনে ফিরে যাবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ