ডেভেলপমেন্ট খাতে বিশেষ করে ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশনসে ক্যারিয়ার করতে চাইলে  শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস জরুরি।

এই খাতে কাজ করতে হলে যেতে হয় দূরদূরান্তে, রোদে, বৃষ্টিতে, পাহাড়-জঙ্গলে। মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়, কখনো কমিউনিটির গল্প তুলতে, কখনো ক্রাইসিস নিয়ে কাজ করতে, কখনো বা হাই লেভেল মিশন কাভার করতে। তাই যদি ভাবেন যে শুধু এসি রুমে বসে কাজ করবেন, আর সবখানে ফোর-হুইলারে যাওয়া-আসা করবেন, তাহলে এই ক্যারিয়ার আপনার জন্য না।

আরও পড়ুন৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা: বিষয়ভিত্তিক মডেল টেস্ট-৩২৪ মে ২০২৫

তবে শুধু শরীর ফিট থাকলেই হবে না, লাগবে মানসিক শক্তিও। এই ধরেন, বান্দরবানের কোনো রিমোট জায়গায় কাজ করতে গেলেন, যেখানে নেটওয়ার্কও নেই। সারা দিন পর একটুখানি সিগন্যাল পাওয়া মাত্রই ঢাকার অফিস থেকে মেসেজ—কালকের মধ্যে একটা ক্রাইসিস সলভ করতে হবে। এই মুহূর্তে আপনি অফিসের হয়ে বান্দরবানে, নাকি ঘুরতে মালয়েশিয়ায়, তা কারও মাথাব্যথা না। তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকলে এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়া স্বাভাবিক। পাশাপাশি নতুন আইডিয়া, স্টোরিটেলিং বা ক্যাম্পেইনের জন্য দরকার পজিটিভ মাইন্ডসেট। তাই যদি ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করতে চান, আজ থেকেই নিজের যত্ন নেওয়া শুরু করুন, শরীর আর মন ফিট না থাকলে এই দিকে পা না বাড়ানোই ভালো।

এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে দরকার তিনটি এইচ: হেড, হার্ট ও হ্যান্ড অর্থাৎ মাথা, মন আর হাত।

আরও পড়ুনপল্লী বিদ্যুতে বড় নিয়োগ, ২ পদে নেবে ২১৫০ জন১৬ মে ২০২৫

মাথা:ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ মানেই সময়োপযোগী পরিকল্পনা আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। তাই জানতে হবে আমার আশপাশে কী ঘটছে, দেশের বাইরে কী চলছে। এর মানে এই নয় যে সাধারণ জ্ঞানের বই নিয়ে বসে থাকতে হবে! বরং রিলস-এ সময় কম দিয়ে, সময় কাজে লাগাতে হবে। দেশি-বিদেশি নিউজ পোর্টাল নিয়মিতভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি মিশতে হবে মানুষের সঙ্গে, তৈরি করতে হবে স্ট্রং নেটওয়ার্ক।

মন: এই সেক্টরের মূলেই আছে মানুষ আর তার চারপাশের পরিবেশ। এখানে কাজ করতে হলে মানুষের প্রতি সহানুভূতি থাকা জরুরি।

হাত: মন আর মাথা থাকলেই হবে না, দরকার দক্ষতা। এই সেক্টর অনেক বড়, সেখানে আপনার জায়গা কোথায়, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। ক্লাসরুম থেকে শেখার বাইরে আরও অনেক কিছু শিখতে হয়। আমার ক্ষেত্রে যেমন কমিউনিকেশন, আউটরিচ ও ক্যাম্পেইন এই জায়গাগুলোতেই আমি নিজের অবস্থান গড়ে তুলেছি। অন্য কিছু পারি না, কিন্তু আফসোসও নেই। কারণ, আমি যেটা করি, সেটা ভালোবেসে করি। কাজটি যদি উপভোগ করেন, সেটি হয় প্যাশন। জোর করে করলে সেটা স্ট্রেস। এখন আপনি স্ট্রেস নেবেন নাকি প্যাশন, সেটা আপনার হাতে।

আরও পড়ুনটিসিবিতে নতুন নিয়োগ, ২২ পদের আবেদন অনলাইনে১৪ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ভ লপম ন ট ক জ করত

এছাড়াও পড়ুন:

তালিকায় কৃষকের নাম নেই যন্ত্রেরও খোঁজ নেই

২০২২-২৩ অর্থবছরে খুলনার কয়রা উপজেলার হড্ডা গ্রামের আবুল কালামের নামে একটি কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র বরাদ্দ দেখায় কৃষি বিভাগ। গ্রামটিতে এ নামে কৃষক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তালিকায় দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা বলে জানান। কাগজে তাঁকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা (৭০ শতাংশ)। তাঁর কাছে যন্ত্র নেই। তিনি বলেন, ‘সই করার জন্যি কৃষি অফিসে গেলাম। কিছু টাকা দেয়, যন্ত্র সম্পর্কে জানা নেই।’

কয়রায় গত পাঁচ বছরে ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে’র মাধ্যমে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও বড় অংশ নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শতাধিক সুবিধাভোগীর কাছে সরেজমিন গিয়ে বা ফোনে খোঁজ নিয়ে হাতেগোনা কয়েকজনের কাছে যন্ত্র পাওয়া গেছে। 
পাঁচ বছরে দুর্নীতির এ চক্রে কৃষি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় সাবেক এমপি, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের সরকারের সময় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সুপারিশে লোকজনকে কৃষক সাজিয়ে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে তালিকা প্রকল্প পরিচালকের অনুমোদনের পর কোম্পানির প্রতিনিধির মাধ্যমে যন্ত্র সরবরাহের কাগজ প্রস্তুত করে ভর্তুকির অর্থ তুলে নেওয়া হয়।

কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্যিকীকরণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক করে তোলার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ১২ ধরনের যন্ত্র দেওয়ার কথা। উপকূলীয় উপজেলায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে এসব দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত কৃষক এ থেকে বঞ্চিত। ২০২০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে এ বছরের জুনে। ৫ ধরনের ৬৩৩টি যন্ত্র বিতরণের তথ্য মিলেছে। ভর্তুকি হিসেবে তুলে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
ভাগবা গ্রামের তাপস মণ্ডল ২০২৩ সালে পাওয়ার থ্রেসার যন্ত্র পেয়েছেন। এক লাখ ২০ হাজারে এ যন্ত্র কিনতে ভর্তুকি বাদে তাঁর ২৬ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। তিনি বলেন, এ যন্ত্র নিতে তাঁকে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
কৃষকের সঙ্গে কথা বলে, সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং সরেজমিন জানা গেছে, ভর্তুকিতে ভাগ বসিয়েছেন অসাধু কর্মকর্তা, কোম্পানি ও দালাল। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দালালরা।  তারা ভর্তুকিতে যন্ত্র কিনেও বিক্রি করেছেন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে মহেশ্বরীপুর গ্রামের কমলেশ মণ্ডল ও বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল, ৪ নম্বর কয়রার আল আমীন ও দক্ষিণ বেদকাশির মোশাররফ হোসেনের নামে ৩২ লাখ টাকার হারভেস্টার বরাদ্দ দেখিয়ে ভর্তুকির ৮৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা তোলা হয়। তারা কেউই যন্ত্রের বিষয়ে জানেন না। এমন ৫০টি যন্ত্র বিতরণের তথ্য পাওয়া গেছে। এর প্রতিটির বিক্রয়মূল্য ৩০-৩২ লাখ টাকা। ভর্তুকি হিসেবে তুলে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা।

সরাসরি কৃষিকাজে যুক্ত না থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে পাওয়ার থ্রেসার ও পাওয়ার টিলার যন্ত্রের বরাদ্দপত্রে নাম রয়েছে ১ নম্বর কয়রা গ্রামের রফিকুল ইসলাম গাজী, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে সাইফুল্লাহ গাজীর। তাদের বাড়ি যন্ত্র পাওয়া যায়নি। রফিকুল বলেন, ‘যন্ত্র বরাদ্দ নিয়েছিলাম; কিন্তু কাজে না লাগায় বিক্রি করে দিয়েছি।’
একই অর্থবছরে মহারাজপুর গ্রামের শাহাজান সিরাজের নামে দুটি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ হয়েছে। সরকার পতনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তাঁর বাড়িতে গিয়ে যন্ত্রের হদিস মেলেনি। মোবাইল ফোনে শাহাজান বলেন, ‘একটি যন্ত্র আমার আত্মীয়র বাড়িতে আছে, আরেকটি নেওয়া হয়নি।’
জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি যন্ত্র বিতরণ দেখানো হয়। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামের বনি আমিনের প্রতিষ্ঠান উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বেশির ভাগ যন্ত্র সরবরাহ দেখানো হয়েছে। কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসের উন্নয়ন শাখার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গুরুদাস কুমার ও অনুতাব সরকারের মাধ্যমে কাগজে বিভিন্ন কোম্পানির যন্ত্র সরবরাহ দেখিয়েছেন তিনি।

প্রকল্পের শুরু থেকে এখনও এ দু’জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে রয়েছেন। বেশির ভাগ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন অসীম কুমার দাস। প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগের বিষয়ে তাঁর ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী বনি আমিন ৫ আগস্টের পর কয়রা থেকে তাঁর অফিস সরিয়ে নিয়েছেন। তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গুরুদাস কুমার বলেন, কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে।
একই কথা বলেন আরেক কর্মকর্তা অনুতব সরকার। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘আমি যোগদানের পর যন্ত্র বিতরণ করা হয়নি। অনিয়মের একটি অভিযোগের তদন্ত চলছে।’
প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে স্বীকার করে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক স্থানে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কয়রায় অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ