দক্ষতা নয়, বিশ্বাসই যেখানে নিয়োগের মূল শর্ত
Published: 26th, May 2025 GMT
বিশ্বব্যাপী ধনী ব্যক্তিরা এখন সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা চাইছেন। তাঁদের এই চাহিদা পূরণে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে অপেক্ষাকৃত অপ্রচলিত এক খাত—পারিবারিক দপ্তর বা ফ্যামিলি অফিস। তবে এই দপ্তরগুলো এখন সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা হলো দক্ষ জনশক্তির অভাব।
বহুজাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৮ হাজার ৩০টি পারিবারিক দপ্তর সক্রিয় ছিল। তাদের যৌথ পরিচালনায় ছিল প্রায় ৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদ। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৭২০-এ পৌঁছাবে এবং তখন পারিবারিক দপ্তরগুলোর অধীনে পরিচালিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। প্রসঙ্গত, এক ট্রিলিয়নে এক লাখ কোটি।
কিন্তু ধনী ব্যক্তিদের বিপুল চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সিএনবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে। বিষয়টি হলো, এই খাতে যোগ্য ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা এবং বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক পাওয়া যাচ্ছে না, অর্থাৎ এ ধরনের পেশাজীবীর অভাব রয়েছে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পরামর্শদাতাদের উৎপাদনশীলতা অপরিবর্তিত থাকলে ২০৩৪ সালের মধ্যে এই খাতে প্রায় ১ লাখ উপদেষ্টার ঘাটতি দেখা দেবে।’ উত্তর আমেরিকায় এই খাতে কর্মী নিয়োগ ও ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।
নিয়োগে প্রধান মানদণ্ড বিশ্বাস
অন্যান্য খাতে যেখানে দক্ষ মানবসম্পদ প্রধান যোগ্যতা বা শর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়, সেখানে এই খাতের বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে যে কর্মী সংকট হচ্ছে, তা শুধু প্রার্থীর অভাবে নয়, বরং কঠোর নিয়োগপ্রক্রিয়াও অনেকাংশে দায়ী। ‘বিশ্বাস’ এখন দক্ষতার চেয়েও বড় মানদণ্ড। অর্থাৎ ধনীরা নিজেদের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কর্মীর চেয়ে বরং বিশ্বাসী বা আস্থাভাজন কর্মী খুঁজছেন বেশি।
পারিবারিক দপ্তর নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করা টোবিয়াস প্রেস্টেল সিএনবিসিকে বলেন, ‘এই খাতে অনেক সময় সবচেয়ে দক্ষ ব্যক্তি চাকরি পান না, বরং যাঁর ওপর পরিবারের বেশি ভরসা রয়েছে, তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়। আপনি যদি ৫০ কোটি ডলারের মালিক হন, তখন আপনি কাকে বিশ্বাস করবেন? আপনি কার হাতে সিন্দুকের চাবি তুলে দেবেন—এটাই বড় সিদ্ধান্তের বিষয়।
বিশ্বাসের এই বিষয় যেমন ভালো হতে পারে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে বলে মত দেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসজেড অ্যান্ড জের অংশীদার রেটো ইয়াউচ। তিনি সিএনবিসিকে বলেন, ‘কখনো কখনো পরিবারগুলো এত বেশি বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে যে কখনো কখনো দক্ষতা বা পেশাদারত্বকেও উপেক্ষা করা হয়। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যায় পড়তে হয়।
অটোমেশন, আউটসোর্সিং
এশিয়ার ধনী দেশ, যেমন সিঙ্গাপুরে দক্ষ জনবলের সংকট এতটাই প্রকট যে অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কাজের অটোমেশন ও আউটসোর্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাকাউন্টিং ও করপোরেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জেঙ্গার প্রতিষ্ঠাতা আইরিস সু বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তার ভূমিকায় একসঙ্গে কাজ করতে পারেন—এমন পেশাদার খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। এ ক্ষেত্রে পেশাদার মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি উভয় ভূমিকায় দক্ষ এবং উভয় ভূমিকায় কাজ করতে চান।
এ ছাড়া পারিবারিক দপ্তরগুলোকে মেধাবী কর্মী নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক, প্রাইভেট ইকুইটি প্রতিষ্ঠান ও হেজ ফান্ডের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। জনবলের সংকটের পেছনে কেবল যোগ্য প্রার্থীর অভাবই একমাত্র কারণ নয়। অনেক সময় অতিরিক্ত বাছবিচারের কারণেও বিপাকে পড়ছে এসব দপ্তর।
তবে ধনীরা যে ধরনের মানুষ চাইছেন, সে ধরনের কর্মী নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাঁরা এখন অনেক বেতন দিতে রাজি। এই অতিরিক্ত বেতনের বিষয়টিকে অনেকে বলছেন ‘বিশ্বাসভিত্তিক প্রিমিয়াম’ বা ‘ট্রাস্ট ডেল্টা’। এমনকি এখন অনেক প্রতিষ্ঠান একজন নির্বাহী সহকারীর পেছনে বছরে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে রাজি।
এইচএসবিসি ও ক্যাম্পডেন ওয়েলথের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইউরোপের অনেক পারিবারিক দপ্তর নানাভাবে কর্মীদের ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কর্মীদের বোনাস, প্রণোদনা ও এমনকি লাভের অংশ দিয়েও তারা এই চেষ্টা করছে।
কেন তরুণেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন
তরুণ পেশাজীবীদের অনেকেই পারিবারিক দপ্তরে কাজ করতে আগ্রহী নন। কারণ হিসেবে বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কাঠামো অস্পষ্ট, রিপোর্টিং লাইন অনির্ধারিত। সবচেয়ে বড় কথা, ক্যারিয়ারে উন্নতির পথ কী হবে, তা অস্পষ্ট। আইরিস সু বলেন, পারিবারিক দপ্তরে বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া সবচেয়ে কঠিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখানে কর্মীদের চাকরির স্থায়িত্ব মাত্র এক থেকে দুই বছর।
এসজেড অ্যান্ড জের ইয়াউচ বলেন, ‘এটা এমন ধরনের পরিবেশ, যেখানে আপনাকে পরিবারকেন্দ্রিক চিন্তা করতে হবে, অহং দমন করতে হবে; আবার আত্মবিশ্বাসও থাকতে হবে। পরিবারই এখানে শেষ সিদ্ধান্ত নেয়, আপনি কেবল মতামত দিতে পারবেন, কিন্তু সেটাই চূড়ান্ত নয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাঝবয়সী আইনজীবী বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের এক পারিবারিক দপ্তরে সাধারণ পরামর্শক হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘সেই পরিবার যদি একদিন মনে করে আমাকে আর দরকার নেই, তাহলে আমাকে ছাঁটাই করতে এক মুহূর্তও সময় নেবে না। এটা বড় ঝুঁকি।’ তাঁর মতে, পারিবারিক দপ্তরে পারিশ্রমিক ও পদোন্নতি নিয়ে স্বচ্ছতা কম থাকে এবং ক্যারিয়ারের প্রাথমিক পর্যায়ে সেখানে কাজ শুরু করলে পরে করপোরেট জগতে ফিরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
এত সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রেটো ইয়াউচ বলেন, যাঁরা কাজের মান ও পেশাদারির উন্নয়নে নজর দিতে চান এবং পদপদবি বা পদোন্নতি নিয়ে চিন্তিত নন, তাঁদের জন্য পারিবারিক দপ্তর অনন্য সুযোগ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক জ কর পর ব র এই খ ত ধরন র সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
দীপিকা ও আলিয়া নন, ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পান এই অভিনেত্রী
বলিউড হোক বা দক্ষিণি—সিনেমাপ্রতি কে কত পারিশ্রমিক পান, সেটা সাধারণত বেশ গোপনেই রাখা হয়। তবে মাঝেমধ্যে কিছু প্রতিবেদন কিংবা বিশ্বস্ত সূত্র সেই পর্দা সরিয়ে দেয়, আর তখনই সামনে আসে তারকাদের চোখধাঁধানো পারিশ্রমিকের অঙ্ক। এত দিন ভারতে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী ছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। পারিশ্রমিকের দৌড়ে দীপিকার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই আলিয়া ভাটও। তবে সাম্প্রতিক এক চুক্তিতে বদলে গেছে ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীর নাম। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, যিনি প্রায় ছয় বছর পর ভারতীয় সিনেমায় ফিরছেন। তিনি একটি ছবির জন্য ৩০ কোটি রুপি নিয়েছেন। এটিই এখন পর্যন্ত কোনো ভারতীয় অভিনেত্রীর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।
প্রিয়াঙ্কা ফিরছেন রাজামৌলির ছবিতে
এস এস রাজামৌলির পরবর্তী ছবিতে মহেশ বাবুর বিপরীতে অভিনয় করছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। একদিকে এটি তাঁর বলিউডে প্রত্যাবর্তনের ছবি, অন্যদিকে দক্ষিণি ছবিতেও তিনি ফিরছেন দুই দশকের বেশি সময় পর। বলিউড হাঙ্গামার খবর অনুযায়ী, এই ছবির জন্য প্রিয়াঙ্কা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ৩০ কোটি রুপিতে।