একসময় বছরে দুটি মৌসুমে ধান চাষ করতেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর ঢেমশা, তৈমুহনী, মরফলা ও রসুলাবাদ এলাকার কৃষকেরা। সম্প্রতি বোরো মৌসুমে সেসব ধানি জমিতে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। চাষাবাদের জমিতে বিশাল বিশাল গর্ত। একেকটি গর্তের গভীরতা ৪০ থেকে ৫০ ফুট। অনেকগুলো গর্তেই পানি জমে জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইটভাটার জন্য ফসলি জমির মাটি কেটে এসব গর্ত ও জলাশয়ের সৃষ্টি করা হয়েছে।

তৈমুহনী এলাকার প্রবীণ কৃষক মোহাম্মদ আলিম উল্লাহ বলেন, উত্তর ঢেমশা ও তৈমুহনী এলাকায় যেখানে এখন বিশাল জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে একসময় কৃষকেরা আমন ও বোরো ধানের আবাদ করতেন। মাটি ব্যবসায়ীরা ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করায় জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয়ে মাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু ব্যক্তি।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া উপজেলার আন্ধারমার দরগার পশ্চিম পাশে উত্তর ঢেমশা ও তৈমুহনী এলাকায় বিশাল এক জলাশয়। জলাশয়টির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এবং উত্তর পাশের রেললাইন ঘেঁষে সদ্য কেটে নেওয়া বোরো ধানের নাড়া। উত্তর পাশে বেশ কয়েকটি ইটের ভাটা। সেখান থেকে অল্প কিছু দূরে পশ্চিমে মরফলার বিল ও উত্তরে রসুলাবাদ এলাকায়ও দেখা যায় বিশাল বিশাল গর্ত। গর্তগুলোর আশপাশেও বেশ কয়েকটি ইটের ভাটা।

কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের লোকজন ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কেরানীহাট থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত জনার কেঁওচিয়া, উত্তর ঢেমশা, তৈমুহনী, মরফলা ও রসুলাবাদ এলাকায় ৪০টির অধিক ইটভাটা আছে। প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে এসব এলাকার দুই ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে আসছেন স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীরা। এতে ওই সব এলাকায় ১৮ থেকে ২০ হেক্টর ফসলি জমি জলাশয় ও বিশালাকার গর্তে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

মনিরুজ্জামান।

ইটভাটায় পাচারের জন্য মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। তাই ফসলি জমিতে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার রসুলাবাদ এলাকা থেকে তোলা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ত ম হন এল ক য ইটভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

লাল চাঁদকে নৃশংসভাবে হত্যা বিচারহীনতার সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা: এইচআরএসএস

রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। সংগঠনটি বলেছে, এ হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং বিচারহীনতার সংস্কৃতি, দণ্ডহীনতার চলমান ধারারই ধারাবাহিকতা।

আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম। লাল চাঁদকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।

বিবৃতিতে বলা হয়, লাল চাঁদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে, কুপিয়ে এবং শরীর থেঁতলে হত্যা করা হয়েছে। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ ঘটনা দেশের সামাজিক ও বিচারিক ব্যবস্থার ওপর একটি ভয়াবহ প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি করেছে।

এ হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর সরাসরি জড়িত থাকা অত্যন্ত উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এইচআরএসএস বলেছে, এটি প্রমাণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র কীভাবে দণ্ডমুক্তির সংস্কৃতিকে পুঁজি করে নিরীহ নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করছে। এ ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে মানুষের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

বিবৃতিতে এইচআরএসএস কয়েকটি দাবি জানিয়েছে। সেগুলো হলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এ ঘটনার নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী বিচার নিশ্চিত করা; ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতার বিষয়েও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; গণপ্রতিরোধ ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ; ভুক্তভোগীর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

আরও পড়ুনশরীর থেঁতলে পিটিয়ে হত্যা করা হয় লাল চাঁদকে১৮ ঘণ্টা আগে

গত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ীকে হত্যা করে একদল ব্যক্তি। এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল চারজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ