স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ হোমিওপ্যাথি এবং শূন্য দশমিক ২ শতাংশ মানুষ আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা নেন। তবে এ পরিসংখ্যান ঠিক নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাতের চিকিৎসকরা। সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি হোটেলে ‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এ  দাবি জানান।

বৈষম্যবিরোধী হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক জাতীয় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের কোথায়  হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের সম্পর্কে কী ‘ভুল’ তথ্য ও পরিসংখ্যান রয়েছে, তা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর আগে বিভিন্ন জাতীয় জরিপ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২৮ শতাংশের বেশি মানুষ হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মির্জা লুৎফর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদনে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের প্রতি চরম অবহেলা দেখানো হয়েছে, অবমাননা করা হয়েছে। আমরা এ প্রতিবেদনের সংশোধন চাই।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত  হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে ৬০৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানের ওষুধের বাজার কমপক্ষে আড়াই হাজার কোটি টাকার। দেশে এই ধরনের চিকিৎসক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। আয়োজকরা বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন’ বা সনাতন চিকিৎসাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। চীন ও ভারতে এর বিশেষ কদর রয়েছে। বাংলাদেশেও এসব চিকিৎসা মূলত ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের আওতাভুক্ত। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতেও একে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা তো স্বীকৃত চিকিৎসক। তারা কোন পরিচয়ে চিকিৎসাসেবা দেবেন?

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ইউন ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’: প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর সৃজনশীলতার সেতুবন্ধন

প্রকৃতি, মানুষ আর সংস্কৃতির সম্মিলনে গড়ে ওঠা এক অনন্য আয়োজনের সাক্ষী গাজীপুরের কালীগঞ্জ। ফেসবুকভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’ স্থানীয় তরুণ সমাজকে সৃজনশীলতায় উদ্বুদ্ধ করতে, প্রকৃতি-সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে আয়োজন করে ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি প্রতিযোগিতা। 

এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ফুটে উঠছে কালীগঞ্জের নৈসর্গিক সৌন্দর্য, অন্যদিকে যুব সমাজও যুক্ত হচ্ছে নানা ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে কালীগঞ্জ পৌরসভার ভাদার্ত্তী এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মোহনায় আয়োজন করা হয় ভিডিও ও ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। 

আকাশ-বাতাস, নদীর কলতান আর হালকা কুয়াশা মোড়া প্রকৃতির কোলে মুখরিত এই আয়োজন একদিকে সৃষ্টি করে উৎসবের আবহ, অন্যদিকে তুলে ধরে স্থানীয় প্রতিভার ঝলক।

‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সম্পূর্ণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে কেন্দ্র করে। মূল উদ্দেশ্য কালীগঞ্জের প্রকৃতি, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে দেশ ও দেশের বাইরে প্রবাসীদের কাছে তুলে ধরা। বছরের বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ঋতুকে ঘিরে আয়োজন করা হয় ফটোগ্রাফি ও ভিডিও প্রতিযোগিতা। এতে অংশগ্রহণ করেন কালীগঞ্জসহ আশপাশের নানা বয়সী তরুণ-তরুণী।

এই গ্রুপ এখন শুধু ছবি বা ভিডিওর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এক অনলাইনভিত্তিক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে, যেখানে একদিকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, অন্যদিকে তরুণ সমাজকে মাদক, সন্ত্রাস, বেকারত্ব, হতাশা থেকে দূরে রাখতে চলছে নানামুখী আয়োজন।

‘ও আমার দেশের মাটি’ শিরোনামে আয়োজিত ভিডিও কনটেস্ট ছিল এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত প্রতিযোগিতা। দেশপ্রেম, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর মানবিক গল্পের এক অনবদ্য মিশেলে সেরা ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটর নির্বাচিত হন কালীগঞ্জের সুপরিচিত সাংবাদিক রফিক সরকার। তার ভিডিও যেন গ্রামবাংলার গল্প শোনায়; যেখানে প্রকৃতি, মানুষ আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে অবিচ্ছিন্ন বন্ধনে।

এই বিভাগে আরেক বিজয়ী শিক্ষার্থী সুমন প্রধান। তরুণ বয়সেই দেশ, সমাজ আর প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ তার ভিডিওতে উঠে এসেছে, তা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হন। তাদের সৃষ্টিশীলতাকে স্বীকৃতি জানাতে ‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’ এগিয়ে এসেছে হাতে-কলমে পুরস্কার নিয়ে।

‘বর্ষায় কালীগঞ্জের রূপ’ ফটো কনটেস্টেও প্রতিযোগীদের সৃজনশীলতার প্রশংসা করতে হয়। এই প্রতিযোগিতায় সেরা ফটোগ্রাফার নির্বাচিত হন তামিম রোহান। তার ক্যামেরার বন্দি হয়েছে বর্ষার ছায়া-সৌন্দর্য, আকাশের রং, নদীর ঢেউ, ভেজা মাটি আর মানুষের হাসিমুখ।

এই বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে তপু রায়হান, ইলিয়াস আহমেদ তন্ময় ও স্পেরো সুমাইয়া। তাদের তোলা ছবি যেন প্রকৃতির জীবনবোধের কাব্য। বর্ষার প্রতিটি ছোঁয়া, মেঘের নরমতা আর গ্রামের নিখাদ সরলতা ফুটে উঠেছে প্রতিটি ছবির প্রতিটি রঙে।

শীতকালীন ফটো কনটেস্টেও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। সেরা নির্বাচিত হন ইউনুস আলী। শীতের সকালের কুয়াশা, শিশিরবিন্দু, আলোর রেখা আর গ্রামবাংলার প্রতিটি মূহূর্ত ধরা পড়েছে তার ক্যামেরায়। 

একই বিভাগে প্রথম হন সুমন হোসেন সৈকত, দ্বিতীয় ইলিয়াস হোসেন ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন রানা আফরিন। প্রত্যেকের ছবিতে ছিল শিল্পের ছাপ, হৃদয়ের স্পর্শ।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জের প্রধান নুরুল ইসলাম, অ্যাডমিন প্যানেলের সদস্য সাব্বির আহমেদ, হাসিব খান, রাশিদুল ইসলাম, সুমাইয়া হক, মোকারম আহাম্মদ ও অনিক সরকার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব।

পুরস্কারপ্রাপ্ত সবার মুখেই ছিল হাসি আর গর্ব। তারা জানান, এই স্বীকৃতি তাদের আগামী দিনে আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে। ভিডিও কিংবা ছবি সবখানেই ছিল নিজস্ব এলাকার প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর মানুষের গল্প। তাদের প্রত্যাশা, এই গ্রুপের এমন আয়োজন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশের অন্য অঞ্চলেও এমন সৃজনশীল প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠবে।

‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’-এর উদ্যোক্তারা বলেন, ‘‘আমরা চাই নতুন প্রজন্ম নিজেদের মাটি, মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসুক। তারা যাতে ভুল পথে না যায়, সেজন্য আমাদের এই ছোট্ট প্রয়াস।’’
 
এ গ্রুপের মাধ্যমে তরুণরা যেমন নিজের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে, তেমনি সামাজিক সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক হলেও এর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ছে অফলাইনে বিশুদ্ধ সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে।

কালীগঞ্জের প্রতিটি বাঁক, নদী, মাঠ, কুয়াশা, ভোরের আলো কিংবা বর্ষার ঝমঝম সবকিছুই ধরা পড়ছে দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জের আয়োজনে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের ক্যামেরায়। এতে যেমন সৃজনশীল তরুণদের আত্মপ্রকাশ ঘটছে, তেমনি সংরক্ষণ করা হচ্ছে গ্রামবাংলার চিরচেনা মুখ।

প্রতিযোগিতার এই আয়োজনগুলো যেন ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এটাই প্রত্যাশা স্থানীয় মানুষ ও আয়োজকদের।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ