যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনসংক্রান্ত নিয়মকানুন কঠোর করার মধ্যেই মার্কিন সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, তাঁরা যদি ‘ক্লাস না করেন বা কাউকে না জানিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে যান, তাহলে তাঁদের ভিসা বাতিল হতে পারে।

ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘোষণাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া ওই ঘোষণায় লেখা হয়েছে, ‘আপনারা যদি কোর্স থেকে ঝরে পড়েন, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে না জানিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে যান, তাহলে আপনাদের শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল হতে পারে। আপনারা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন। যেকোনো সমস্যা এড়াতে আপনার ভিসার শর্তগুলো মেনে চলুন এবং শিক্ষার্থী পরিচয় বজায় রাখুন।’

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বৈধতা বাতিল করার সিদ্ধান্ত থেকে ট্রাম্প প্রশাসনকে আদালত সাময়িকভাবে আটকে দেওয়ার প্রায় চার দিন পর এমন বিজ্ঞপ্তি এল। ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারক বলেছেন, আগের সিদ্ধান্তগুলোর বিরুদ্ধে হওয়া একটি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বৈধতা বাতিল করতে পারবে না।

গত বৃহস্পতিবার ওকল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক জেফ্রি এস হোয়াইট একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বলেছে, এর মধ্য দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার শুধু ভিসার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার, কারাগারে রাখা বা স্থানান্তর করতে পারবে না।

তবে অন্য কারণে এখনো শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করার সুযোগ থাকছে। যদি কোনো শিক্ষার্থী সহিংস অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং এক বছরের বেশি মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তাঁর ভিসা বা বৈধ অবস্থান বাতিল করা যেতে পারে।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন২২ মে ২০২৫

এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিবাসী ও বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিযানের অংশ হিসেবে এ বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ হাজার ৭০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। সময় না দিয়ে হুট করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আরও অন্তত ২৯৫ জন ভারতীয় নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

লোকসভার সদস্য রাজা রাম সিংয়ের এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং বলেন, যেসব ভারতীয় নাগরিককে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস বজায় রাখা ও পছন্দ অনুযায়ী খাবারদাবার নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বাতিল হচ্ছে২৩ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ত ল কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণ কী

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে পড়েছে।

গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রাণক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও প্রতিশ্রুত সংস্কারে বিলম্ব, ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বিভাজনের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাংলাদেশে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো:

নির্বাচন বিতর্ক

ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। তবে এখনো নির্বাচন আয়োজনে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি অন্তর্বর্তী সরকার।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। গত সপ্তাহে দলটি বলেছে, একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী পরিকল্পনা ছাড়া অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখা ‘কঠিন’ হবে।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত সপ্তাহে এক বক্তব্যে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ে।

গত বছরের অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের উদ্যেোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জোর দিয়ে বলছে, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সংস্কার নিয়ে অচলাবস্থা

হাসিনার বিদায়ের পর অধ্যাপক ইউনূস যে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই সংস্কারের অগ্রগতি ধীরগতিতে চলছে। তাঁর সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য গঠনের জন্য সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে।

ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের প্রথম দফার সংলাপে কিছু পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।

তবে সাংবিধানিক সংস্কার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ–সংক্রান্ত আরও জটিল কিছু প্রস্তাব নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ জুনের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিতিশীল অবস্থা জনগণের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক ও রাজনৈতিক কর্মীদের রাজপথে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ রাজধানী ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।

এই অস্থিরতা নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, যদি শিগগিরই রাজনৈতিক ঐকমত্য না হয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

আরও পড়ুনইউনূস সরকারের ওপর চাপ বাড়ার মধ্যেই বাংলাদেশে বিক্ষোভ২৬ মে ২০২৫হাসিনার দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা

চলতি মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সামনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে দলটিকে কার্যত বাইরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এতে পরবর্তী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পদক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর সরকারকে অস্থিতিশীল করতে যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তাতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি২৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ