ক্লাস না করলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হুমকি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের
Published: 27th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনসংক্রান্ত নিয়মকানুন কঠোর করার মধ্যেই মার্কিন সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, তাঁরা যদি ‘ক্লাস না করেন বা কাউকে না জানিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে যান, তাহলে তাঁদের ভিসা বাতিল হতে পারে।
ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘোষণাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া ওই ঘোষণায় লেখা হয়েছে, ‘আপনারা যদি কোর্স থেকে ঝরে পড়েন, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে না জানিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে যান, তাহলে আপনাদের শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল হতে পারে। আপনারা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন। যেকোনো সমস্যা এড়াতে আপনার ভিসার শর্তগুলো মেনে চলুন এবং শিক্ষার্থী পরিচয় বজায় রাখুন।’
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বৈধতা বাতিল করার সিদ্ধান্ত থেকে ট্রাম্প প্রশাসনকে আদালত সাময়িকভাবে আটকে দেওয়ার প্রায় চার দিন পর এমন বিজ্ঞপ্তি এল। ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারক বলেছেন, আগের সিদ্ধান্তগুলোর বিরুদ্ধে হওয়া একটি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বৈধতা বাতিল করতে পারবে না।
গত বৃহস্পতিবার ওকল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক জেফ্রি এস হোয়াইট একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বলেছে, এর মধ্য দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার শুধু ভিসার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার, কারাগারে রাখা বা স্থানান্তর করতে পারবে না।
তবে অন্য কারণে এখনো শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করার সুযোগ থাকছে। যদি কোনো শিক্ষার্থী সহিংস অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং এক বছরের বেশি মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তাঁর ভিসা বা বৈধ অবস্থান বাতিল করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন২২ মে ২০২৫এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিবাসী ও বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিযানের অংশ হিসেবে এ বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ হাজার ৭০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। সময় না দিয়ে হুট করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আরও অন্তত ২৯৫ জন ভারতীয় নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
লোকসভার সদস্য রাজা রাম সিংয়ের এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং বলেন, যেসব ভারতীয় নাগরিককে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস বজায় রাখা ও পছন্দ অনুযায়ী খাবারদাবার নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বাতিল হচ্ছে২৩ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’