বশির আহমেদের গাওয়া গান দিয়ে তাঁকে স্মরণ
Published: 10th, January 2025 GMT
এ সময় মায়া মায়া/ এ হাওয়া ঝিরি ঝিরি/...ষাটের দশকের ‘দর্শন’ চলচ্চিত্রের মোট আটটি গানের সব কটিই ছিল মানুষের মুখে মুখে। আর গানের আয়োজনের সঙ্গে হুট করেই যুক্ত হয়েছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী, সুরকার বশির আহমেদ। ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা রহমানের সঙ্গে আগের দিন রাত পর্যন্ত আড্ডাতেও বশির আহমেদ জানতেন না তিনি ‘দর্শন’–এর সংগীত পরিচালক। পরদিন পত্রিকায় দেখেছিলেন সিনেমাটির সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম। উর্দু গানটি বাংলায় গেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমীন। শুক্রবার বশির আহমেদের কন্যা হুমায়রা বশির বাবার এ গান পরিবেশনের আগে এই স্মৃতিচারণা করেন। ততক্ষণে বশির আহমেদের সুর ও কণ্ঠে গাওয়া বেশ কয়েকটি গানের পরিবেশন হয়ে গেছে। সেই প্রজন্মের দর্শকেরা গানের মধ্যে স্মৃতি হাতড়ে ফিরছিলেন। আর নতুনেরা মুগ্ধ হচ্ছিলেন কথা-সুরে।
প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী বশির আহমেদকে ঘিরে এই আয়োজন করেছিল ‘মোহাম্মদপুর ডায়েরিস’ নামের একটি উদ্যোগ। মূলত মোহাম্মদপুরের সংস্কৃতি, স্মৃতি সংরক্ষণের তাগিদ থেকেই মোহাম্মদপুর ডায়েরিস যাত্রা শুরু নূরজাহান রোডের মীর মঞ্জিলকে কেন্দ্র করে। ১৯৭২ সালে নির্মিত বাড়িটি মোহাম্মদপুরের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিবর্তনের সাক্ষী। শিল্পী বশির আহমেদ ছিলেন মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লার বাসিন্দা। তাঁকে ঘিরে মীর মঞ্জিলে আয়োজন করা হয় মোহাম্মদপুর ডায়েরিসের দ্বিতীয় পর্ব। এই আয়োজনে গান পরিবেশন করেন বশির আহমেদের মেয়ে হুমায়রা বশির ও ছেলে রাজা বশির।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মীর মঞ্জিলের সংস্কার নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র দেখানো হয়। স্থাপত্যকাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য তা ‘আইএবি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ অর্জন করেছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাহবুব উর রহমান। মীর মঞ্জিল তাঁর নানাবাড়ি। তিনি বলেন, নানা মীর রজ্জব আলী অবসরের সময় পাওয়া অর্থ দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেন। পুরোনো হয়ে যাওয়া বাড়িটি ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়ার বিষয়ে স্বজনেরা যখন একমত হন, তখন তিনি এটাকে যেমন আছে তেমনটি রাখতে উদ্যোগ নেন। মীর মঞ্জিলের মূল স্থাপত্যকাঠামো অক্ষত রেখে এতে সংস্কার আনা হয়েছে। এই বাড়ি এখনো তাঁদের পুরোনো সব স্মৃতি হাজির করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধ—৭৮ বছরের গৌরবময় ইতিহাসের অংশীদার মোহাম্মদপুর। সময়ে–সময়ে সেসব স্মৃতি কথা উঠে আসবে মোহাম্মদপুর ডায়েরিস নামে মীর মঞ্জিলের এই বাড়িতে।
মোহাম্মদপুর ডায়েরিসের আয়োজনে এসে বশির আহমেদের মেয়ে হুমায়রা বশির বলেন, ১৯৭১ সালের আগে বশির আহমেদ মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লায় জমি কেনেন। আশির দশকের শুরুতে একটু একটু করে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ভিত্তি গড়ার সময় স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী মীনা বশির নিজের সোনার কানের দুল দিয়েছিলেন। অন্তিম দিন পর্যন্ত তাঁরা এই বাড়িতেই ছিলেন।
ছেলে রাজা বশির বলেন, এখানেই ছিল বশির আহমেদের গানের স্কুল ‘সারগাম’। যেটা ছিল তাঁর সাধনার জায়গা। তিনি সব সময় বলতেন, ‘আমি গান চর্চা করে যাব। যাদের ইচ্ছা আসুক।’ তিনি গান শেখানোর সময় গান রেকর্ড করা বা ছবি তুলতে দিতেন না।
বশির আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৯ সালে কলকাতায়। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে গুলিস্তান সিনেমা হলের স্বত্বাধিকারীর আমন্ত্রণে তিনি ঢাকায় একটি গানের অনুষ্ঠানে আসেন। এই দেশের মানুষের ভালোবাসা ও প্রশংসায় আপ্লুত বশির আহমেদ পরে স্ত্রী মীনা বশিরকে নিয়ে পাকাপাকিভাবে ঢাকায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’, ‘আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে’—তাঁর এমন বহু গান জনপ্রিয়তা পায়। দেশের সংগীতশিল্পী তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ২০০৩ সালে জাতীয় পুরস্কার ও ২০০৫ সালে একুশে পদক পান। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার ও হৃদ্রোগে ভোগার পর ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল ৭৪ বছর বয়সে মোহাম্মদপুরের বাড়িতে মারা যান।
কথার ফাঁকে ফাঁকে দর্শকদের মধ্য থেকে একে একে গানের অনুরোধ আসতে থাকে। ভাই-বোন গান ধরেন খান আতাউর রহমানের কথা ও সুরে বশির আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় গান ‘যারে যাবি যদি যা/ পিঞ্জর খুলে দিয়েছি/ যা কিছু কথা ছিল/ ভুলে গিয়েছি.
প্রসঙ্গত, গত মাসে মোহাম্মদপুর ডায়েরিসের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে মূল বক্তা ছিলেন স্থানীয়দের কাছে ‘ইকবাল মামা’ নামে পরিচিত আহমেদ ইকবাল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক আহমেদ ইকবাল হাসান বর্তমানে আহমেদ ইকবাল হাসান সিকিউরিটি লিমিটেডের প্রধান।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন বই না পেয়ে সহকারী হিসাব রক্ষককে লাঞ্ছিত
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী হিসাব রক্ষক জনি আইচকে তার কার্যালয়ে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী হিসাব রক্ষকের কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী হিসাব রক্ষক জনি আইচ অভিযোগ করে বলেন, “অক্সফোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ডাইরেক্টর পরিচয়ে আব্দুল কাদের রাহীম নামে এক ব্যক্তি আমার কার্যালয়ে আসেন। এসময় তিনি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের পাঠ্যবই চান। তখন আমি তাকে জানাই ইংরেজি ভার্সনের পাঠ্যবই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে দেওয়া হয় না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে তালিকা ফরওয়ার্ডিং দিলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পাঠ্যবই বিতরণ করে।”
তিনি আরো বলেন, “এসময় ওই ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে আমার টেবিলে থাকা ল্যাপটপ বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে আমাকে হুমকি দিয়ে চলে যান।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অক্সফোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মনির হোসাইন অভিযোগ নাকচ দিয়ে বলেন, “সহকারী হিসাব কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা হয়নি। সেখানে স্কুলের ডাইরেক্টর আব্দুর কাদের রাহীমের সাথে সহকারী হিসাব রক্ষকের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়েছে।”
অপর এক প্রশ্নে তিনি অভিযোগ করে বলেন, “জনি আইচ প্রতি বছর বই দিতে আমাদেরকে হয়রানি করেন। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না।”
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম এহছানুল হক চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।”
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, “এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।”
ঢাকা/সুজন/এস