ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে শপথ নিয়েছেন নিকোলা মাদুরো। টানা ছয় মাস ধরে নির্বাচনী বিবাদ, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান এবং তাঁকে আটক করতে যুক্তরাষ্ট্রের পুরস্কার বৃদ্ধি সত্ত্বেও শুক্রবার শপথ নেন তিনি। মাদুরোর প্রায় ১২ বছরের শাসনামলকে দেশটির গভীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের কাল হিসেবে ধরা হয়।

২০১৩ সাল থেকে নিকোলা মাদুরো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট। গত বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশটির নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ এবং শীর্ষ আদালত তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করে। যদিও তাঁর বিজয় নিশ্চিত করে ভোটের পুঙ্খানুপুঙ্খ ফল কখনোই প্রকাশ করা হয়নি।

ভেনেজুয়েলার বিরোধীরা বলেছেন, ব্যালট-বাক্সের ভোটের হিসাবে দেখা গেছে, নির্বাচনে ভূমিধস জয় লাভ করেছেন মাদুরোর বিরোধী প্রার্থী এদমুন্দো গনসালেস। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ তাঁকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক ছিল না।

নির্বাচন-পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে এদমুন্দো গনসালেসের স্পেনে পালিয়ে যাওয়া, তাঁর মিত্র মারিয়া করিনা মাচাদোর ভেনেজুয়েলায় আত্মগোপন করা এবং বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আটক করা ও বিক্ষোভসহ নানা ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সবশেষ মাদক পাচারের অভিযোগে নিকোলা মাদুরোকে দোষী সাব্যস্ত বা গেপ্তার করতে তথ্য দেওয়ার জন্য পুরস্কারের পরিমাণ দেড় কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে আড়াই কোটি ডলার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন। এ ছাড়া ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেলোর জন্য আড়াই কোটি এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনোর জন্য দেড় কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ-এর প্রধান হেক্টর ওবরেগনসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে ২০২০ সালে মাদুরো এবং তাঁর প্রশাসনের অন্যান্যদের মাদক ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মাদুরো অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সময়ে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটির ১৫ জন করে ৩০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর মধ্যে রয়েছেন জাতীয় নির্বাচনী পরিষদ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও। অন্যদিকে কানাডা দেশটির বর্তমান ও সাবেক ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

মাদুরো সরকার সব সময় এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এগুলো অবৈধ পদক্ষেপ, যা ভেনেজুয়েলাকে পঙ্গু করার জন্য ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধে’র নামান্তর।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে নিকোলা মাদুরো সরাসরি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ইংগিত না দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী সরকার জানে না কীভাবে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নেবে। 

ভেনেজুয়েলার যোগাযোগ মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।

মাদুরো এবং তার মিত্ররা পশ্চিমা এসব শাস্তিমূলক এই পদক্ষেপ সত্ত্বেও দেশটির স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে উল্লাস করেছেন। যদিও তারা কিছু অর্থনৈতিক সমস্যা এবং সংকটের জন্য নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন।

এদিকে চলতি সপ্তাহে সংক্ষিপ্ত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন বিরোধী নেতা এদমুন্দো গনসালেস। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভেনেজুয়েলায় ফিরবেন তিনি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি এ রাজনীতিক।

বিরোধীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ভেনেজুয়েলার বর্তমান সরকার বলেছে, এদমুন্দো গনসালেস ফিরে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য দিতে এক লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

যাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়েন, তাঁদের সুবিধা দিতে কেন পিছুটান দেখাই রাশেদা কে চৌধূরী

দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা টানা ১০ দিন ধরে ঢাকার রাস্তায় আন্দোলন করেছেন বাড়িভাড়া ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর দাবিতে। এ সময়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে নানা ধরনের বক্তব্য এসেছে; কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি ছিল স্পষ্ট। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারকে ধন্যবাদ জানাই—তিনি নিজেও একজন শিক্ষক হিসেবে বিষয়টি অনুধাবন করে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু জানা গেছে, প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আটকে ছিল।

শিক্ষা পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমার প্রশ্ন, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা বাড়াতে যখন বেতন কমিশন হয়, তখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–কর্মচারীদের বিষয়টি কেন গুরুত্ব পায় না? তাঁদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ–সুবিধা ক্রমেই বাড়ছে, অথচ যাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগর, তাঁদের ক্ষেত্রে কেন পিছুটান দেখা যায়—এটাই দুঃখজনক।

আরও পড়ুনএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বাড়ছে ১৫ শতাংশ, কার্যকর দুই ধাপে২ ঘণ্টা আগে

নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও অন্তর্বর্তী সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত (দুই ধাপে কার্যকর হবে) নিয়েছে—এর জন্য তাঁদের ধন্যবাদ। আশা করব, আগামীতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা যেন শিক্ষক–কর্মচারী ও শিক্ষাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে না দেখে, মানবসম্পদ গঠনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। সক্ষমতা অনুযায়ী সেটি করা যেতে পারে, তবে শুধু জাতীয়করণই সমস্যার পূর্ণ সমাধান নয়। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের দিকও ভাবতে হবে।

বাড়ি ভাড়া বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে ১২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন করছেন এমপিওভূক্ত শিক্ষক–কর্মচারিরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ