অভিযোগটা গুরুতর। সৌদি আরবে স্প্যানিশ সুপার কাপের সেমিফাইনাল দেখতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন মায়োর্কার খেলোয়াড়দের পরিবারের সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩-০ গোলে হারে মায়োর্কা। জেদ্দায় এই ম্যাচের পর স্থানীয় সমর্থকদের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করেছেন মায়োর্কার দুই খেলোয়াড়ের স্ত্রীরা।

আরও পড়ুনটানা ২৪ বছরে গোলের রেকর্ড রোনালদোর, মেসি কি ছুঁতে পারবেন১৮ ঘণ্টা আগে

মায়োর্কার মিডফিল্ডার দানি রদ্রিগেজের স্ত্রী ক্রিস্টিনা পালভারা স্পেনের টিভি সাংবাদিকের কাছে এই অভিযোগ করেছেন। ম্যাচ শেষে কিং আবদুল্লাহ স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় তিনি এবং মায়োর্কার গোলকিপার ডমিনিক গ্রিফের স্ত্রীকে হয়রানি করেন স্থানীয় কিছু পুরুষ সমর্থক।

স্প্যানিশ টিভি চ্যানেল এসপোর্তস আইবি৩-কে পালভারা বলেছেন, ‘(স্টেডিয়াম থেকে) বের হওয়াটা ছিল বেশ জটিল। আমরা সন্তানদের নিয়ে একা ছিলাম এবং কোনো নিরাপত্তা ছিল না। সত্যিটা হলো এই দেশের কিছু পুরুষ খুব কাছ থেকে আমাদের ছবি তোলা শুরু করে এবং হয়রানিও করেছে।’ পালভারা এরপর আরও বলেছেন, ‘ডমিনিক গ্রিয়েফের স্ত্রী নাতালির সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমার মেয়ে তখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। খুবই অস্বস্তি লেগেছে আমাদের। আমাদের রক্ষা করার মতো কেউ ছিল না। বের হওয়াটা ছিল খুবই বাজে।’

গ্রিয়েফের স্ত্রী নাতালিয়া কালুজোভা এ নিয়ে কথা বলেছেন স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কার সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, কিছু পুরুষ ‘আমাদের ভিডিও করেছে, ধাক্কা দিয়েছে, অযাচিতভাবে ছুঁয়েছে, আমাদের মুখের ওপর ফোন ধরেছে এবং ভিডিও করেছে।’

আরও পড়ুনমেসি–সুয়ারেজের সঙ্গে নেইমারের পুনর্মিলনী ‘অসম্ভব’, জানালেন মাচেরানো১২ ঘণ্টা আগে

মায়োর্কার ক্লাব অফিশিয়ালদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার সময় প্রায় ২৫০ জন হয়রানির শিকার হয়েছেন। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, মায়োর্কার অন্য সব সমর্থক এবং অন্যান্য স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমও একই অভিযোগ করেছে। মোবাইল ফোনে তোলা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে মার্কা। তাতে দেখা গেছে, মায়োর্কার সমর্থকেরা হেঁটে চার্টার্ড বাসে ওঠার সময় রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি পরা কিছু পুরুষ সমর্থক ভিডিও এবং হাসাহাসি করছেন।

সেমিফাইনালে রিয়ালের জয়ের ম্যাচে ভিনিসিয়ুসের সামনে মায়োর্কার দানি রদ্রিগেজ (১৪ নম্বর জার্সি).

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নারীবিদ্বেষী অপপ্রচার থেকে রোকেয়াকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে না

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কাজ এত বিস্তৃত যে তাঁকে এক গণ্ডিতে বেঁধে রাখা যায় না। বর্তমানে নারীবিদ্বেষী যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সেখানে রোকেয়াকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে রোকেয়াকে নিয়ে পুনরায় আলোচনা হওয়া জরুরি। এটি তরুণদের যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে সহায়তা করবে।

‘শুধু সমাজসংস্কারক নয়, বরং রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতা–পরবর্তী আলোচনায় এসব কথা উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন–২০২৫ উপলক্ষে সোমবার এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

রাজধানীর বেইলি রোডে সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় তরুণ বিতার্কিকেরা অংশ নেন।

বিতর্ক প্রতিযোগিতার মডারেটরের বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কাজ এত বিস্তৃত যে তাঁকে এক গণ্ডিতে বেঁধে রাখা যায় না। রোকেয়া পাঁচটি কাজ আমাদের জন্য করে গেছেন—প্রথা ভাঙা, সামাজিক কাঠামোয় নারী–পুরুষের মধ্যে থাকা অসমতা চিহ্নিত করা, চিন্তাশক্তির বিকাশ, নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও স্বাবলম্বী হওয়া এবং নারীকে সংগঠিত করা। এগুলো নারীকে শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে অর্জনের কথা বলেছেন। উনি যা বলেছেন, তা কাজের মাধ্যমেও দেখিয়েছেন।’

মহিলা পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘তিনি (রোকেয়া) আরও বলতেন, সাম্প্রদায়িকতা ও তথাকথিত ধর্মাচরণ নারীর অগ্রগতিতে বাধা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা এখনো ঘটছে। সুতরাং যাঁরা নারীকে বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে পথ দেখিয়েছেন, তাঁদের চর্চা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’

প্রতিযোগিতার বিচারকের বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে বিতর্ক প্রতিযোগিতার এই বাগ্‌যুদ্ধ বড় ভূমিকা রাখে। এর মধ্য দিয়েই যুক্তিবাদী সমাজ গঠনের সঙ্গে সঙ্গে অন্যের মতামত শোনা ও তার মতামতকে শ্রদ্ধা করার দিকটিও ফুটে ওঠে।

এ সময় মালেকা বানু বলেন, রোকেয়ার জীবন ছিল অল্প সময়ের। কিন্তু এর মধ্যে যেসব কাজ তিনি নারীর অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে করে গেছেন, সেসব বিষয়ে জানা-বোঝার চেষ্টায় যথাযথ সময়ের প্রয়োজন। এটি তরুণদের যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে সহায়তা করবে বলেও মনে করেন তিনি।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পক্ষ দল বিজয়ী হয়। পক্ষ দলের মধ্যে প্রথম শ্রেষ্ঠ বক্তা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহামুদ খালিদ, দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ বক্তা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অর্ণব রায় পার্থ আর তৃতীয় শ্রেষ্ঠ বক্তা হন বিপক্ষ দলের দলনেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী সরকার।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম হন আইডিয়াল কলেজ, ধানমন্ডির শিক্ষার্থী মারওয়া জান্নাত মাইশা, দ্বিতীয় হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুবিনা আক্তার মুন, তৃতীয় হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে ফাতেমাতুজ যোহরা।

বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষে ইপোস্টার প্রতিযোগিতায় জয়ী ৯ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। তাঁরা হলেন হুমায়রা তাবাসসুম, মাহি বিনতে মাসুদ, কৃষ্ণপদ সরকার, সাবরিনা, সৈয়দ রাশিদ আসিফ, মহুয়া চক্রবর্তী, আমানুর রহমান, আনোয়ার রহমান ও মারওয়া জান্নাত মায়শা।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সারাবান তহুরা; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা আফরোজ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ