সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ৯৮% ঘটনা রাজনৈতিক কারণে: পুলিশের অনুসন্ধান
Published: 11th, January 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘিরে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের যেসব অভিযোগ এসেছে তার ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রদায়িক কারণে। ১ হাজার ৪১৫টি অভিযোগের মধ্যে ১৬১টির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
৪ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ অনুসন্ধান করে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পুলিশের এই অনুসন্ধানের বিষয়ে জানানো হয়েছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর ১ হাজার ৭৬৯টি হামলার অভিযোগের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪১৫টি অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে পুলিশ। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এই অভিযোগ দিয়েছে। এতে দেখা গেছে, ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনাই ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে। ২০টি ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রদায়িক কারণে। এর বাইরে বাকি ১৬১টি অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ২ হাজার ১০টি অভিযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট স্থান, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং প্রত্যেকটি স্থান পরিদর্শন করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে ৬২টি মামলা এবং ৯৫১টি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্টেই ৮২ দশমিক ৮ শতাংশ, অর্থাৎ ১ হাজার ৪৫২টি ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়। ওই দিন পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছিল।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, ৫ আগস্ট থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশজুড়ে পুলিশের কাছে আরও ১৩৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ জমা পড়ে। পুলিশ এগুলো গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে ৫৩টি মামলা ও ৫৩টি সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করে এবং ৬৩ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার পদক্ষেপের বিষয়ে পুলিশ জানায়, সরকার সব ধর্মীয়, জাতিগত ও সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সংবিধান ও আইন সংখ্যালঘুদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ–নির্বিশেষে দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আরও জানিয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তর অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছে। সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাংনীতে সড়কে ‘বোমা’ ফাটিয়ে ডাকাতি, এলাকায় আতঙ্ক
মেহেরপুরের গাংনীতে ‘বোমা’ ফাটিয়ে ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার পোড়াপাড়া-যুগিন্দা সড়কে কয়েকজন ব্যবসায়ীর লুটের শিকার হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাংনী বাজার থেকে ব্যবসা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় কয়েকজন গরু ও সবজি ব্যবসায়ী। তারা নির্জন পোড়াপাড়া-যুগিন্দা সড়কে পৌঁছালে ওঁত পেতে থাকা একদল ডাকাত তাদের গতিরোধ করে। ডাকাতরা ব্যবসায়ীদের মারধর করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লুটে নেয়। পরে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী নসিমন চালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ডাকাত দলের সদস্যরা তিনটি বোমা নিক্ষেপ করলেও দুইটি বিস্ফোরিত হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা নগদ টাকা-পয়সা সব লুট করে নিয়েছে। কারো দিতে দেরি হলে মারধর করা হয়েছে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ছুটে আসলে বোমা ফাটিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।
সবজি ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন জানান, তার কাছে ২২ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসা করাতেন। সে কথা ডাকাতদলকে বলে টাকা দিতে দেরি করায় তাকে বেদম প্রহার করা হয়েছে। টাকাও লুট করে নিয়েছে। এছাড়া যাদের পকেটে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা ছিল তাও নিয়ে গেছে ডাকাতরা।
ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি মোটর সাইকেলের সামনে বোমা ফাটায় ডাকাতরা। পরে আরেকটি বোমা ছুঁড়লে তা আমার ভ্যানের সামনে এসে পড়ে সেটি বিস্ফোরিত হয়। কোনো রকমে আমি বেঁচে গেছি। তবে এখনও শরীর কাঁপছে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাণী ইসরাইল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।