ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘিরে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের যেসব অভিযোগ এসেছে তার ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রদায়িক কারণে। ১ হাজার ৪১৫টি অভিযোগের মধ্যে ১৬১টির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

৪ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ অনুসন্ধান করে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পুলিশের এই অনুসন্ধানের বিষয়ে জানানো হয়েছে।

সংখ্যালঘুদের ওপর ১ হাজার ৭৬৯টি হামলার অভিযোগের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪১৫টি অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে পুলিশ। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এই অভিযোগ দিয়েছে। এতে দেখা গেছে, ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনাই ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে। ২০টি ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রদায়িক কারণে। এর বাইরে বাকি ১৬১টি অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ২ হাজার ১০টি অভিযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট স্থান, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং প্রত্যেকটি স্থান পরিদর্শন করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে ৬২টি মামলা এবং ৯৫১টি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্টেই ৮২ দশমিক ৮ শতাংশ, অর্থাৎ ১ হাজার ৪৫২টি ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়। ওই দিন পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছিল।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছে, ৫ আগস্ট থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশজুড়ে পুলিশের কাছে আরও ১৩৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ জমা পড়ে। পুলিশ এগুলো গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে ৫৩টি মামলা ও ৫৩টি সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করে এবং ৬৩ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার পদক্ষেপের বিষয়ে পুলিশ জানায়, সরকার সব ধর্মীয়, জাতিগত ও সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সংবিধান ও আইন সংখ্যালঘুদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ–নির্বিশেষে দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আরও জানিয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তর অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছে। সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অসত্য তথ্য ছড়ানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, “নির্বাচনের সময় অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করতে গিয়ে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন। সিইসির রেকর্ডকৃত এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচারিত হয়।

আরো পড়ুন:

তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা

এবারের নির্বাচনে কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না: সিইসি

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনে ব্যালট হবে সাদা-কালো, আর গণভোটে গোলাপি রঙের ব্যালট ব্যবহার করা হবে।

সিইসি জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এসব আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে।

এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনি প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি থেকে এবং চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।

ঢাকা/এএএম/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ