টঙ্গীতে মহাসড়ক দখল করে বিএনপির সমাবেশ, যাত্রীদের ভোগান্তি
Published: 11th, January 2025 GMT
গাজীপুরের টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একাংশ দখল করে সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা–কর্মীরা। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় মহাসড়কটির ময়মনসিংহমুখী লেন দখল করে এ সমাবেশ করেন তাঁরা।
সমাবেশের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে যান চলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
আহসান উল্লাহ মাস্টার আওয়ামী লীগ নেতা ও টঙ্গীর সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ৭ মে স্থানীয় নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশে প্রকাশ্যে গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলার রায় ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ঘোষণা করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। রায়ে মামলার আসামি বিএনপির নেতা নূরুলসহ ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এর পর থেকেই কারাগারে রয়েছেন তিনি।
মামলাটি মিথ্যা ও ষড়ন্ত্রমূলক আখ্যা দিয়ে নুরুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে আজ শনিবার নুরুল ইসলাম সরকার মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। এতে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে যোগ দেন টঙ্গী ও আশপাশের এলাকার কয়েক হাজার নেতা–কর্মী। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে শেষ হয় সমাবেশ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নুরুল ইসলাম সরকার জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সেসব সহ্য করতে না পেরে ২০০৪ সালে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ফাঁসায়। সেই মামলার জেরে ২০ বছর ধরে তিনি জেল খাটছেন। তাই তাঁরা যেকোনো মূল্যে নুরুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চান। কিন্তু তারপরও মুক্তি না পেলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
শাহনূর বলেন, ‘আমার বাবা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। তারপরও বিনা অপরাধে ২০ বছর ধরে জেল খাটছেন। বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আশা করছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা ন্যায়বিচার পাব, আমার বাবা মুক্তি পাবে।’
হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমরা এমন একটা দিনের অপেক্ষায় ছিলাম, যেদিন তাঁর (নুরুল ইসলাম সরকার) মুক্তির দাবিতে কথা বলতে পারব। আজ সেই দিন এসেছে। তিনি এখনো মুক্তি না পেলেও, আমি মনে করি তিনি মুক্তি পেয়ে গেছেন। কারণ, আজ তাঁর ডাকে, তাঁর মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার জনগণ সাড়া দিয়েছেন। আমি আজকের এই সমাবেশ থেকে ওই মিথ্যা মামলার পুনরায় তদন্তের দাবি করছি।’
বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশ উপলক্ষে কলেজ গেটে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজের সামনের ফুটপাতে (ময়মনসিংহমুখী লেনের পাশে) স্থাপন করা হয়েছে মঞ্চ। মঞ্চে অবস্থান করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। আর সড়কে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার নেতা–কর্মী। তাঁদের কারও হাতে ব্যানার, ফ্যাস্টুন। কেউবা এসেছে প্ল্যাকার্ড নিয়ে। নেতা–কর্মীদের অবস্থানের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। এতে দেখা দিয়েছে ভোগান্তি। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ হেঁটেই রওনা দেন গন্তব্যে।
কথা হয়, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা মো.
জিসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা টঙ্গীবাজার থেকে বাসে উঠছি। কিন্তু স্টেশনরোড পর্যন্ত আসতেই যানজট শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা বাসে বসে থেকে হেঁটেই রওনা দিই বাড়ির উদ্দেশে।’
জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (টঙ্গী জোন) এন এম নাসিরুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে সমাবেশ করার ব্যাপারে তাঁদের (বিএনপির নেতা–কর্মী) কোনো অনুমতি ছিল না। তারপরও তাঁরা সমাবেশ করলে মানুষের ভিড়ে যান চলাচলে সমস্যা হয়। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য।’
সে ক্ষেত্রে নিষেধ বা বাধা দেওয়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, বাধা দেওয়ার উপায় ছিল না। বাধা দিলে মারামরি বাধত।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনে কাটা পড়ে এক বছরে ৪৯ জনের মৃত্যু
ময়মনসিংহে প্রায় অর্ধশত রেলক্রসিং অরক্ষিত। এসব স্থানে কোনো গেটকিপার না থাকায় এক বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে অন্তত ৪৯ জন। এ ছাড়া রেললাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনার কারণেও ট্রেনে কাটা পড়ছে অসতর্ক মানুষ।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার তথ্যমতে, গত এক বছরে অরক্ষিত ৪৪ রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে অন্তত ৪৯ জন। একাধিকবার এসব রেলক্রসিং বন্ধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেললাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা ও দোকানপাট। যে কারণে অসতর্ক অবস্থায় প্রায়ই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মরছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ, জামালপুর-ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম চারটি রেলপথে ট্রেন চলাচল করে। ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে আন্তঃনগর ও লোকাল মিলে প্রতিদিন ২৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। ময়মনসিংহ রেলওয়ের আওতায় ৩২টি রেলক্রসিং রয়েছে সুরক্ষিত। এসব রেলক্রসিংয়ে রয়েছে নিয়মিত গেটকিপার। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গড়ে উঠেছে আরও ৪৪টি রেলক্রসিং। এসব রেলক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটকিপার। এসব অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, মরছে মানুষ।
নগরীর সানকিপাড়া বাজার এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, রেললাইনে জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট। রেললাইনের ওপর বসছে কাঁচাবাজার। কয়েক দিন আগে সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় দোকানের বাঁশের খুঁটির আঘাতে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে মারা যান এক যাত্রী। এভাবে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এর পরও বন্ধ হয়নি অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট।
রেল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও নানা কারণে তাদের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। সম্প্রতি রেলের জমি উদ্ধার করতে এসে ভূসম্পত্তির লোকজন এলাকাবাসীর রোষানলে পড়ে। এ ছাড়া যেসব দখলদার রেলওয়ের জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বাসাবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তুলেছেন, তারাও দখল ছাড়তে রাজি হন না।
রেললাইন ঘেঁষে অবৈধ দোকানপাট গড়ে তোলায় অসতর্ক অবস্থায় ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বরে ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানের বাঁশের খুঁটির সঙ্গে আঘাত পেয়ে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হন জামালপুরের আহাদুল ইসলাম শিপন নামে এক যাত্রী।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, রেললাইন ঘেঁষে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব কারণে ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে গত এক বছরে ৪৯ জন ট্রেন কাটা পড়ে মারা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মোস্তাফিজুর
রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র রেলক্রসিং চালু হয়েছে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ছে মানুষ। অনেকবার এসব রেলক্রসিং বন্ধের উদ্যোগ নিলেও এলাকাবাসীর বাধার মুখে পিছু হটতে হয়েছে।