বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি কুর্মিটোলায় ছায়া সুশীতল শাহীন দ্বীপে অন্যরকম সংবর্ধনা দেওয়া হয় অনূর্ধ্ব-২১ হকি দলকে। যুব বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা দলটিকে গত সপ্তাহে ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করে হকি ফেডারেশন। সেই অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিশ্বকাপ নিয়ে নিজেদের স্বপ্নের কথা সমকালকে বলেছেন অধিনায়ক মেহেরাব হাসান সামিন। তা শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল : প্রথমবার হকির বিশ্বকাপে। এক মাসেরও বেশি পার হয়ে গেছে। তার পরও বিশ্বকাপের কথা মনে হলে কেমন লাগছে?

সামিন : বিশ্বকাপ খেলব কিংবা আমরা যে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছি; এই জিনিসগুলো যখন মনে পড়ে, তখন অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে। আমাদের স্বপ্ন ছিল, সেটা যে অর্জন করতে পেরেছি, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা জিনিস।

সমকাল : বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে অনেক শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলতে হবে.

..

সামিন : এখানে ইউরোপের অনেক ভালো টিম থাকবে। এশিয়া কাপে ৮-১০টি দেশ অংশ নেয়। বিশ্বকাপে ইউরোপ ও এশিয়ার দলগুলো থাকবে। সবাই অনেক শক্তিশালী। এখানে যেন আমরা ভালো একটা রেজাল্ট করতে পারি। আর এই টিমগুলোর সঙ্গে খেললে একটা অভিজ্ঞতা অর্জন হবে। আর এত বড় মঞ্চে খেলতে পারতেছি, দেখা যাবে এখান থেকে বেশির ভাগ খেলোয়াড় সিনিয়র টিমে খেলবে। এই অভিজ্ঞতাটা হয়তো আমরা সিনিয়র দলে গিয়ে কাজে লাগাতে পারব। এখন যদি ইউরোপিয়ান দলগুলোর সঙ্গে একটা প্রস্তুতি ম্যাচও খেলতে পারি, সেটা আমাদের অনেক কাজে লাগবে। তাই আমাদের প্র্যাকটিস ম্যাচটি অনেক জরুরি।

সমকাল : বিশ্বকাপের মতো আসরের প্রস্তুতির জন্য ১১ মাস যথেষ্ট কিনা?

সামিন : একটা টুর্নামেন্টের আগে যত সময়ই প্রস্তুতি নেন, সেটার কিন্তু শেষ নেই। দুই মাসের আগে যেমন, তেমন করে ১০ মাস আগে নিলেও একটা প্রস্তুতি। এখানে প্রধান বিষয় হলো আপনার টার্গেট কী? আপনি যে টার্গেটে এগোতে যাবেন, সেটার জন্য আপনার প্রস্তুতি সে রকম নিতে হবে। আপনি যদি এক মাস আগে এসে প্র্যাকটিসে নামেন, সেটার টুর্নামেন্ট একরকম। অনেক দেশ আছে, যারা বিশ্বকাপ সামনে রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। আমাদেরও চাওয়া থাকবে, যেন আগে থেকে প্র্যাকটিসটা করতে পারি।

সমকাল : কতদিন আগে প্রস্তুতি শুরু করতে চাওয়া আপনাদের?

সামিন : যদি ফেডারেশন বলে এখনই প্রস্তুতি নিতে, আমরা তাতে তৈরি আছি। সত্যি কথা বলতে, এটা আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুশীলন শুরু করলে আমরা প্রত্যেকেই খুশি হবো। এখন থেকে শুরু হলে সেটা আরও ভালো। আর বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করার পর চিফ স্যার (বিমানবাহিনী প্রধান) যেটা বলেছেন, ৬ মাস আগে, সেটাও আমাদের মাথায় আছে। তবে আমাদের চাওয়া থাকবে ছয় মাস না, আরও আগে যেন ক্যাম্পটা ডাকে। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আমাদের আরও ভালো হবে।

সমকাল : বিকেএসপির বাইরে অন্য জায়গা থেকে কেন সেভাবে প্লেয়ার উঠে আসছে না?

সামিন : যেসব জেলায় হকি খেলা হয়, সেসব জায়গায় যদি নিয়মিত খেলা হয়, তাহলে প্লেয়াররা এই খেলার প্রতি আগ্রহী হবে। ফুটবল, ক্রিকেটে এখন প্রতিযোগিতা অনেক। যদি প্রতিটি জেলাতে টুর্নামেন্টের মতো হকি হতো, তাহলে প্লেয়াররা আগ্রহী হবে।

সমকাল : প্রথমবারের মতো হকির বিশ্বকাপে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই অর্থে সাড়া পড়েনি।

সামিন : এটার জন্য খারাপ লেগেছে। একটা বিষয় দেখেন, ক্রিকেট বা ফুটবল কোনো টুর্নামেন্ট বা ম্যাচ খেলতে গেলে তাদের পেছনে কিন্তু স্পন্সর থাকে। এ ছাড়া করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পাশে থাকার জন্য সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হকিতে কিন্তু কোনো স্পন্সর ছিল না। এমনকি এশিয়া কাপেও নয়। সামনে যে বিশ্বকাপ, সেখানে স্পন্সর পাব কিনা, সেটাও আমরা জানি না। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, আশা করি সামনে আমরা আরও ভালো করব।

সমকাল : বাস্তবে বিশ্বকাপটি বাংলাদেশের জন্য অনেক কঠিন। তার পরও আপনাদের লক্ষ্য কী?

সামিন : লক্ষ্য একটাই, সেটা হলো ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। একটি বিষয়, আপনি টুর্নামেন্ট খেলে কোয়ালিফাই করলেন, পরে আবার বাদ পড়ে গেলেন, এতে কিন্তু ধারাবাহিকতা থাকে না। আমরা যদি ধারাবাহিকতা রাখতে পারি, সেটা বাংলাদেশের হকি এবং আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে। আমাদের বিশ্বকাপে একটাই টার্গেট থাকবে, সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলব। যেভাবে হোক সেমিফাইনাল পর্যন্ত আমাদের খেলতে হবে। এটার জন্য একটা প্রস্তুতি দরকার।

সমকাল : এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে করণীয় কী?

সামিন : এটা কঠিন একটা টার্গেট। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের প্রস্তুতি এবং প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে হবে। নিজেদের মাইন্ডসেটও জরুরি। এটার জন্য পরিকল্পনা দরকার। এখন যদি আমরা প্র্যাকটিস ম্যাচ পাই, তখন বুঝতে পারব আমরা যে টার্গেট সেট করেছি, সেটাতে যাওয়া সম্ভব কিনা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হক ট র জন য সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ